ঢাকা, মঙ্গলবার, ২ বৈশাখ ১৪৩২, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আনন্দ শোভাযাত্রায় যা থাকছে

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২৫
আনন্দ শোভাযাত্রায় যা থাকছে

পুরোনো ঐতিহ্য ও স্বকীয়তার পাশাপাশি লোক-শিল্প ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বড় পরিসরে আয়োজন হচ্ছে বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ এর আনন্দ শোভাযাত্রা।

জুলাই অভ্যুত্থানের নানা প্রতীকের পাশাপাশি ভিন্ন অন্তত ২৮ জাতিগোষ্ঠী যোগ হয়েছেন এবারের শোভাযাত্রায়।

এ বছর প্রধান ৭টি মোটিফ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে দীর্ঘসময়ের ফ্যাসিবাদী শাসনের চিত্র তুলে ধরতে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ মোটিফ রাখা হয়েছে।

বাঁশের বেত-কাঠ দিয়ে মুখাকৃতিটি তৈরির পর শনিবার ভোরে এক দুর্বৃত্ত এটি জ্বালিয়ে দেন। পরে ককশিটের ওপর পুনরায় এটি তৈরি করা হয়।

এবারের শোভাযাত্রায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদের ‘প্রতীকী মোটিফ’ রাখার প্রাথমিক চিন্তা ছিল। তবে পরিবারের অনুরোধে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে প্রশাসন।

আবু সাঈদের প্রসারিত দুইহাত না থাকলেও আনন্দ শোভাযাত্রায় স্থান পেয়েছে মুগ্ধের প্রতীকী পানির বোতল। এটি দ্বারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জীবন দেওয়া শহীদদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।  

এছাড়াও এবারের শোভাযাত্রায় বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক বাঘ, ইলিশ মাছ, শান্তির পায়রা, পালকি থাকছে।

এ বছর ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মুসলমানদের লড়াই সংগ্রামের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে তরমুজের ফালি মোটিফ হিসেবে রাখা হয়েছে। তরমুজ ফিলিস্তিনিদের কাছে প্রতিরোধ ও অধ্যাবসায়ের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।

বড় মোটিফের পাশাপাশি এ বছর মাঝারি মোটিফ রয়েছে ৭টি। এর মধ্যে সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, রঙিন চরকি, তালপাতার সেপাই, তুহিন পাখি, পাখা, ঘোড়া ও লোকজ চিত্রাবলির ক্যানভাস রয়েছে।

এছাড়া ছোট মোটিফগুলোর মধ্যে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, বাঘের মাথা, পলো, মাছের চাই, মাথাল, লাঙল এবং মাছের ডোলা থাকবে।

এবারের শোভাযাত্রায়  বিশেষ স্থান করে নিয়েছে বাংলার প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পটচিত্র। পট বা বস্ত্রের ওপর এই লোকচিত্র আঁকা হয়। চারুকলায় এবার ১০০ ফুট দীর্ঘ লোকজ চিত্রাবলির পটচিত্র আঁকা হয়েছে।

পটচিত্রে আকবর, বাংলাদেশের জাতীয় পশু বাঘ, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ১৯৫২ ও ১৯৭১ এবং ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদ, বেহুলা লখিন্দর, বনবিবি এবং গাজীরপট আঁকা হয়েছে। প্রত্যেকটি চিত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে বাঘ এবং বাঘের রং।

আজ সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হবে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ এই উৎসবের মধ্য দিয়ে নতুন বর্ষকে বরণ করবেন।

শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে।

শোভাযাত্রার শুরুতে ৮টি ঘোড়া থাকবে। প্রতিবছরের মতো এবার সামনে পুলিশের বহর থাকবে না। পুলিশ শোভাযাত্রার পাশে অবস্থান করবে। এরপর বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিল্পী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ থাকবেন। শোভাযাত্রার একদম শেষে সাধারণ মানুষ থাকবেন।

এবারের শোভাযাত্রায় ঐতিহ্যবাহী পিস্টন বাঁশি, বাংলা ঢোল ও করনেট বাঁশি নিয়ে ৩০ জন শিল্পী সম্মিলিত দেশাত্মবোধক সঙ্গীত গাইবেন। এছাড়া চারুকলার অভ্যন্তরে নাগর দোলা, চরকি, পুতুল নাচ, বায়স্কোপ, বৈশাখী খাবারের দোকান থাকছে।

শোভাযাত্রা উপলক্ষে রোববার বিকেল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলামটর, বার্ন ইউনিট, বারডেম এবং মৎস্যভবন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে।

সোমবার সকাল থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা শেষ হওয়া পর্যন্ত মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগ বন্ধ থাকবে। শোভাযাত্রা চলাকালীন নীলক্ষেত মোড় ও পলাশী দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করা যাবে। নিরাপত্তার স্বার্থে এসময় অন্যান্য প্রবেশদ্বার বন্ধ থাকবে।

এছাড়াও শোভাযাত্রার সময় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রমনা কালীমন্দির, রাজু ভাস্কর্যের পেছনে ও ছবির হাটের ফটক বন্ধ রাখা হবে।

গত শতকের আশির দশকে সামরিক শাসনের অন্ধকার ঘোচানোর আহ্বানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে পয়লা বৈশাখে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। পরে এটিকে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম দেওয়া হয়। গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে এই শোভাযাত্রা হয়ে আসছে।

এ বছর মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং পুরোনো ঐতিহ্যে ফিরে যেতে আবারও আনন্দ শোভাযাত্রা নাম ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ২০১৬ সালে ইউনেসকো এই শোভাযাত্রাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২৫
এফএইচ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।