ঢাকা, মঙ্গলবার, ২ বৈশাখ ১৪৩২, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বর্ষবরণে রমনায় হাজারো মানুষের ঢল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২৫
বর্ষবরণে রমনায় হাজারো মানুষের ঢল রাজধানীর রমনা পার্কে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জনতার ঢল

ঢাকা: বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ সোমবার (১৪ এপ্রিল) শুরু হলো ১৪৩২ সনের দিন গণনা। আর নতুন বছরকে বরণ করতে রাজধানীর রমণা পার্কে নেমেছে মানুষের ঢল।

 

সকাল সোয়া ৬টায় শুরু হওয়া এ উৎসবে অংশ নিয়েছেন ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ধনী, গরিব নির্বিশেষে সব শ্রেণীপেশার মানুষ। ফলে পহেলা বৈশাখের এই আয়োজন রূপ নিয়েছে এক বিপুল বর্ণাঢ্য মহোৎসবে।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) রমনার বটমূলে দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে আহির ভৈরব রাগে বাঁশির সুরে এবার ছায়ানটের নতুন বছর আবাহনের শুরু হয়।  

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মূল বার্তা ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। আলো, প্রকৃতি, মানুষ ও দেশ প্রেমের গান দিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের অনুষ্ঠান। গান, বাজনা, আলাপে প্রত্যাশা করা হলো সুন্দর আগামীর ও মানুষকে ভালোবেসে নিজেকে সার্থক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রেরণা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রমনায় মানুষের ভিড় বাড়ছে ৷ দলে দলে আসছেন নারী-পুরুষ ও শিশু। শাহবাগ ও মৎস্য ভবনের সামনের দুটি গেট দিয়ে তারা পার্কে ঢুকছেন। সবাইকে রমনায় প্রবেশের আগে আর্চওয়ে দিয়ে তল্লাশি করে প্রবেশ করাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। শাহবাগ থেকে মৎস্যভবন রাস্তার দুইপাশের ফুটপাত ধরে শত শত মানুষ হাঁটছেন। তাদের সবার পরনে বৈশাখের পোশাক। হাঁটার ফাঁকে ফাঁকে কেউ কেউ ছবি তুলছেন। নিজেকে সেলফিবন্দি করতে ভুলছেন না তারা। কেউ আবার রোদের তীব্রতা থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য সঙ্গে ছাতা নিয়ে এসেছেন।

এদিন নারীরা লাল-সাদা শাড়ি, কাচের চুড়ি, দুল-মালায় বাঙালিয়ানা সাজে সেজেছেন। পুরুষের গায়ে শোভা পেয়েছে একই রঙ-নকশার পাঞ্জাবি। অনেকের মাথায় শোভা পেয়েছে রজনীগন্ধা, বেলী ফুলের গাজরা৷ তারা রমনা বটমূল ছায়ানটের প্রভাতি অনুষ্ঠানের গান, কবিতা আসরে যোগ দিয়েছেন।

এছাড়া শাহবাগ ও মৎস্যভবনের মাঝে ওভারব্রিজের পশ্চিম পাশে আরেকটি গেট করা হয়েছে। সেটি দিয়ে পার্কে প্রবেশকারীরা ঘোরা শেষে বের হচ্ছেন। তবে বের হওয়া মানুষের চেয়ে প্রবেশের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি।

তীব্র গরমের হাঁপিয়ে ওঠা মানুষজনকে পুলিশের পক্ষ থেকে পানি সরবরাহ করতেও দেখা গেছে। পার্কজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে তারা বেশ তৎপর।

কেরানীগঞ্জ থেকে ভোর রাতেই রমনায় এসেছেন নাহিদ ইসলাম৷ তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সামনে বসে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান দেখেছি। প্রচণ্ড গরম তাই এক ঘণ্টা বসার পর উঠে এসেছি। রমনায় বসে বর্ষবরণ দেখার অনুভূতি অন্য রকম। সেটা আপনাকে বলে বোঝানো যাবে না। রমনা পার্কে অন্যদিন আসাটা আর আজকে আসাটা এক নয়। বৈশাখের আমেজে আজ রমনা পার্ক সেজেছে। হাজার হাজার মানুষ প্রবেশ করছে এতে। আজকের দিনটি অন্য দিনের চেয়ে অন্যরকম। এরপর যাবো আনন্দ শোভাযাত্রা দেখতে৷ এরপর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, খাওয়া দাওয়া, আনন্দ ফুর্তিতে সারা দিন কাটিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরব।  

রমনা বটমূলের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন রাজধানীর একটি প্রাইভেট কলেজের লেকচারার মো. রোকনুজ্জামান রোকন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নতুন বছর মানেই একটি নতুন সম্ভাবনা। নতুন বছরের নতুন দিনের এ আয়োজন দেশ, জাতি, সমাজ ও ব্যক্তিজীবনের সমৃদ্ধি অর্জনের প্রেরণা জোগাবে।  

তিনি বলেন, গত ১৮ বছর ধরে প্রায় প্রতিবছরই পরিবার নিয়ে এই অনুষ্ঠানে আসছি। এবারের আয়োজনটি অন্যান্য বছরের তুলনায় ভালো লাগছে। সুশৃঙ্খল সব কিছু৷ অতিরিক্ত কোনো কিছু চোখে পরেনি।  

রাজধানীর পুরাণ ঢাকা থেকে রমনার বৈশাখী উৎসবে পরিবার নিয়ে যোগ দিয়েছেন মো. মেহেদী হাসান। তিনি জানান, নতুন বছর মানেই নতুন কিছু। পুরোনো সব কিছু ভুলে নতুন করে আবার ভাবার সময়। বছরের প্রথম দিনটি গানে গানে শুরু করলাম। যাতে সারা বছর সুরের মূর্ছনায় কেটে যায়। নতুন বছরে প্রত্যাশা থাকবে সবার মাঝে মানবতাবোধ জাগ্রত হোক। আমরা সবাই যেন মানবিক হই এবং সুখ সমৃদ্ধি দেশ ও জাতি গঠনে দেশ প্রেম নিয়ে কাজ করতে চাই৷ 

বর্ষবরণের এ অনুষ্ঠানমালা সরাসরি সম্প্রচার করছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল, বাংলাদেশ বেতার ও ইউটিউব চ্যানেলগুলো।

বর্ষবরণের আয়োজন ঘিরে পুরো রমনা পার্ক এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। বসানো হয়েছে ডিএমপি, র‍্যাবের কন্ট্রোল রুম। প্রবেশপথ ও বাহির পথ আলাদা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২৫
জিসিজি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।