ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ বৈশাখ ১৪৩২, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সাকিবের আ. লীগে যোগদানের সিদ্ধান্ত শুধু ভুল নয়, এটি ছিল নৈতিক ব্যর্থতা: প্রেস সচিব

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৫
সাকিবের আ. লীগে যোগদানের সিদ্ধান্ত শুধু ভুল নয়, এটি ছিল নৈতিক ব্যর্থতা: প্রেস সচিব

সম্প্রতি দেশের একটি ইংরেজি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে কথা বলেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সাকিব দাবি করেন, তার রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না এবং এখন যদি আবার নির্বাচনে অংশ নেন, তবে তিনিই জিতবেন।

তার এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘সাকিব আল হাসানের আওয়ামী লীগে যোগদানের সিদ্ধান্ত শুধু একটি ভুল পদক্ষেপই নয়, বরং এটি বিশ্বাসঘাতকতা ছিল। ’

বুধবার (১৬ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড প্রোফাইল থেকে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।

শফিকুল আলমের লেখা ওই পোস্টটি পাঠকের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো - 

‘সাকিব আল হাসানের রাজনীতিতে প্রবেশের সিদ্ধান্ত স্বভাবতই ভুল ছিল না। দেশের প্রতিটি নাগরিকেরই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার এমনকি রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়ে তোলার অধিকার রয়েছে। সাকিবের রাজনীতিতে যোগ দেওয়া নয়, বরং তিনি কার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছেন, সেটাই মূখ্য বিষয়। তিনি এমন একটি সময়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন যখন দলটির নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ছিল— যেমন গণহত্যা, গুম, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, বিরোধীদলের সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা আইনি অভিযোগ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, পদ্ধতিগত দুর্নীতি, এমনকি ব্যাংক ডাকাতির মতো গুরুতর অভিযোগ।  সাকিবের এই দলে যোগদান নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।  এটি কেবল তার একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ ছিল না, এটি ছিল আন্তর্জাতিক মহলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতীক হয়ে ওঠা একটি শাসনব্যবস্থার প্রতি তার নীরব সমর্থন।  একদলীয় শাসনে পরিচালিত কমিউনিস্ট দেশ ছাড়া, এমন কোনো শীর্ষস্থানীয় ক্রীড়াবিদের কথা মনে পড়ে না, যিনি স্বেচ্ছায় এত বড় আকারের নিপীড়নে অভিযুক্ত কোনো সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

সাকিব কেবল জনসাধারণের মনোভাব ভুল বোঝেননি, তিনি তার সিদ্ধান্তের নৈতিক গুরুত্ব উপেক্ষা করেছিলেন। এটি দুটি বিষয়ের ইঙ্গিত দেয়। হয় গভীর রাজনৈতিক অজ্ঞতা, নতুবা আরও খারাপ কিছু—ব্যক্তিগত লাভের জন্য সুযোগসন্ধানী প্রবণতা। যা এটিকে আরও ভয়াবহ করে তোলে তা হলো তার নীরবতা। বিশেষ করে তার সরকার এবং তার নিজের শহর মাগুরায় তার সমর্থকদের দ্বারা পরিচালিত সহিংসতা এবং হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে। মাগুরায় বেশ কয়েকজন বিরোধী মতের কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।  অথচ সাকিব কিছুই বলেননি—না কোনো নিন্দা, না কোনো বিচার দাবি, না কোনো দুঃখ প্রকাশ। তার এই নীরবতা শুধু হতাশাজনকই নয়—তা ছিল বিদারক।

সাকিব বিষয়ে প্রেস সচিবের স্ট্যাটাস

হ্যাঁ, সাকিব বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতিভাবান ক্রিকেটার হতে পারেন। কিন্তু প্রতিভা ও জাতীয় দলের হয়ে পারফর্ম করা কিন্তু দায়মুক্তি দেয় না। কেউ কেবল আশা করতে পারে যে, একদিন তিনি (সাকিব) জাতিসংঘের ১২৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি পড়বেন; যেখানে তার রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতার নথিভুক্ত করা হয়েছে। এই মুহূর্তে তার (সাকিব) কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা হলো একটাই—লোভ। তার রাজনৈতিক পদক্ষেপ, বিতর্কিত ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব, এবং কুখ্যাত ব্যক্তিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা—সবই ইঙ্গিত দেয়, এটি ছিল ব্যক্তিস্বার্থে চালিত একটি উদ্যোগ; জনসেবার কোনো উদ্দেশ্য এতে ছিল না। হয়ত একদিন সাকিবকে ফিরে আসতে হবে। সম্ভবত তখন তিনি সত্যের মুখোমুখি হবেন আর স্বীকার করবেন আওয়ামী লীগে তার যোগদানের সিদ্ধান্ত কেবল একটি ভুল পদক্ষেপই ছিল না, বরং একটি বিশ্বাসঘাতকতা ছিল। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৫
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।