ঢাকা: সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ বাতিলের দাবি আদায়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী ঐক্য ফোরাম।
একই সঙ্গে মঙ্গলবার (১৭ জুন) সচিবালয়ে বাদামতলায় বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়।
সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন ভবনের নিচে বিক্ষোভ সমাবেশে ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম এ কথা জানান।
ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম বলেন, সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ বাতিলের দাবিতে আমরা মাঠে ময়দানে ঘুরতেছি। অনেক ক্যাডার সার্ভিস থেকে অনেকেই আন্দোলনে নেমে গেছে। আমরা একটা জিনিস বুঝে গেছি সরকার আমাদের সঙ্গে সাপ লুডু খেলছে। আমরা চাইলাম মহার্ঘভাতা, পদ-পদবি পরিবর্তন, সচিবালয় ভাতা চাইলাম। সেটা ঠেক দেওয়ার জন্য সরকার করলো অভিন্ন নিয়োগবিধি। তারপর এটা নিয়ে সচিবালয়ে বিশাল হুলুস্থুল শুরু হলে সেটা আমরা থামিয়ে দিলাম।
এরপর কারো সঙ্গে কথা না বলে এ কালো অধ্যাদেশ তারা গোপনে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পাস করিয়ে আনলো। এ কাজের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল আমরা তাদের ধিক্কার জানাই। একই সঙ্গে ঘৃণাভরে এ সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ প্রত্যাখ্যান করেছি। সরকারকে এ সাপ লুডু খেলা বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, ঈদের আগে এই অধ্যাদেশ নিয়ে যখন সম্মেলন করেছিলাম তখন সরকার আবার বিশেষ প্রণোদনা ভাতা দিয়েছেন। সেটা আসলে ফাঁকিবাজি ভাতা। এর মাধ্যমে সরকার আবার আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। একটা শেষ না হতেই আরেকটা শুরু করে দেয় এজন্যই অনেকেই বলেছে এগুলো বিশেষ সুবিধা নয় বিশেষ প্রতারণা। আমরা এ বিশেষ প্রণোদনা মেনে নেবো না।
তিনি আরও বলেন, যদি আমাদের কথায় কান না দেন তাহলে আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে সম্মেলন ডাকতে বাধ্য হবো। প্রজ্ঞাপনে বলা আছে অধ্যাদেশ জারির আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। এ পর্যন্ত আমরা কেউ কোনো আলোচনার প্রস্তাব পাইনি। তাহলে প্রজ্ঞাপন জারির মধ্যেও লুকোচুরি আছে। আজকে আমরা রোদে পুড়ে আন্দোলন করছি আপনারা এসিতে বসে আছেন। আমার এক বন্ধু বলেছেন উপদেষ্টার দপ্তর, সচিবের দপ্তর, প্রশাসনের শাখায় খবর নেবেন তারা আমাদের মিটিংয়ে আসে কিনা। যদি না আসে আমরা তাদের আসতে বাধ্য করবো। আমরা ধরে নেবে তারা এ ফ্যাসিস্ট সরকারের আইন প্রণেতা তাদের সহযোগী।
নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা এগুলো দেখতে, শুনতে ও বুঝতে চাই না। আমরা শুধু দেখতে চাই এ অধ্যাদেশ বাতিল হয়েছে। আমরা সংশোধন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন বুঝি না। আমরা শুধু বুঝি এ অধ্যাদেশ বাতিল করতে হবে। আমাদের পিছু হঠার কোনো সুযোগ নাই। আজকে আমরা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে স্মারক লিপি দেবো। আর আগামীকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ের বাদাম তলায় সকাল ১১টায় জমায়েত হবো। প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে আসবেন। যদি না আসেন তাহলে ধরে নেবো তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর। এরপর যদি আমরা আলোচনার আমন্ত্রণ না পাই, তাহলে আমাদের দাবির সঙ্গে নতুন নতুন দাবি যুক্ত হবে।
তিনি বলেন, এ অধ্যাদেশ বাতিল করলে আমরা নিরবে ঘরে ফিরে যাবো। যদি আমাদের আগুনে জ্বালিয়ে আপনারা খেলা করতে চান তাহলে আমরা এমন খেলা খেলবো আপনারা ঘরে ঢুকতে পারবেন না। আপনারা সে কাজ করতে বাধ্য করবেন না।
প্রসঙ্গত, গত ২২ মে সরকারি চাকরি (অধ্যাদেশ) ২০২৫ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেন উপদেষ্টা পরিষদ। ওইদিন থেকে সচিবালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন সরকারি কর্মচারীরা।
২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে প্রণয়ন করা হয়। অধ্যাদেশটিতে চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধুমাত্র কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুতের বিধান রাখা হয়েছে। সেখানে সরকারি কর্মচারীদের আচরণ ও দণ্ড সংক্রান্ত বিশেষ বিধান শিরোনামে একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সরকারি কোনো কর্মচারী যদি এমন কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হোন, যার কারণে অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে আনুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে অন্যান্য কর্মচারীদের সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া নিজ কর্মে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হোন, অন্য যে কোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন, যে কোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কতর্ব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন। আর এ নিয়েই ক্ষুব্ধ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
জিসিজি/আরআইএস
