ঢাকা: ইরানে গত শুক্রবার থেকে ইসরায়েলের হামলা চলছে। ইরানও পাল্টা হামলায় জবাব দিচ্ছে।
ইসরায়েলি হামলার ব্যাপ্তি ক্রমেই বাড়তে থাকায় এখন নাগরিকদের তেহরানের বাইরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
চলমান সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে ইরানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সাহায্য ও সহায়তা দিতে জরুরি হটলাইন নম্বর চালু করেছে তেহরানে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ইরানে থাকা তেহরান ইউনিভার্সিটি অব মেডিকেল সায়েন্সেসের শিক্ষার্থী সাজিদুল ইসলাম ইফতি। তিনি তেহরান থেকে সরে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
এই শিক্ষার্থী বলেন, ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে আমাদের আরেকটি জায়গায় নেওয়া হয়েছে। দূতাবাসের সঙ্গে কথা হয়েছে। দূতাবাস আমাদের পাকিস্তান সীমান্তে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এরপর পাকিস্তান থেকে দেশে ফেরার পরিকল্পনা রয়েছে।
ফেরার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কত সময় লাগবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, দূতাবাসের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তারা বলছে, তিন-চার দিন লাগতে পারে। লোকজন এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। তেহরানের কিছু লোক অন্য শহরে চলে গিয়েছে। হয়তো তাদের জড়ো করে দুই-তিন ব্যাচে নিয়ে যাবে।
তেহরানের বর্তমান অবস্থা কেমন জানতে চাইলে ইফতি বলেন, এখনকার অবস্থা বোঝাটা কঠিন। এখানে নেট খুবই স্লো। ইন্টারনেট অল্পই কাজ করছে। আপাতত যা জানি, ইসরায়েলি সব আগ্রাসন ও হামলা ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভালোই মোকাবিলা করতে পেরেছে।
তেহরানে বেশির ভাগ হামলাই ইরানের ভেতর থেকে হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, মোসাদের (ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা) কিছু এজেন্ট ও স্পাই ঢুকে গিয়েছিল। তারা ড্রোন পাচার করে নিয়ে এসেছিল ভেতরে। সেখান থেকেই হামলাগুলো হয়েছে।
‘কিছু লোকজনকে টাকা দিয়ে টেরোরিজমের কাজ করানো হচ্ছে। এসবই বেশি চলছে। আবার স্পাইক মিসাইল ঢুকিয়ে নিয়েছিল তেহরানে। সেই স্পাইক মিসাইল দিয়ে হামলা করেছে অনেক জায়গায়। তাদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অনেককে। এখনো এসব কাজ চলছে। ’
ইরানে থাকা এই বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বলেন, তেহরানের এয়ার ডিফেন্স (আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা) খুবই ভালো। অন্য জায়গায় কেমন কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা জানি না। ইরানে কী চলছে, তার চেয়ে বেশি জানা যাচ্ছে ইসরায়েলে কতটা হামলা চালানো হয়েছে, সেটা। তেহরানের বাইরে অর্থাৎ অন্য শহরগুলোতে কী চলছে ঠিক জানা যাচ্ছে না।
এদিকে তেহরানে বাংলাদেশি দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, ইরানে মোট ৬৭২ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও রোগী আছেন। পাশাপাশি, আরও প্রায় আট হাজার থেকে ১৪ হাজারের মতো অনিবন্ধিত বাংলাদেশিও সেখানে বসবাস করছেন। অনেকেই ইরানকে অন্যান্য দেশে যাওয়ার ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করেন।
অন্যদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তেহরানে বর্তমানে যে চারশর মতো বাংলাদেশি অবস্থান করছেন, তারা সবাই অক্ষত রয়েছেন।
ইরানের রাজধানী তেহরানে গত ১৬ জুন ইসরায়েলের হামলায় সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তাদের বাসভবনও আক্রান্ত হয়েছে।
এর মধ্যে অন্তত একজন কর্মকর্তার বাড়িঘর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে হামলার সময় ওয়ালিদ ইসলাম নামে ওই কর্মকর্তা বাড়িতে না থাকায় প্রাণে বেঁচে গেছেন।
তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা মূলত জর্ডান নামের একটি এলাকায় বসবাস করেন, যেটি পড়েছে তেহরানের তিন নম্বর জেলায়।
ওই এলাকায় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। সোমবার ঘোষণা দিয়ে সেগুলোতে হামলা চালায় ইসরায়েল।
মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রুহুল আলম সিদ্দিক বলেন, আমরা তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন, যারা তেহরানে আছেন। তারা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে আছেন।
আরএইচ