ঢাকা, শুক্রবার, ৭ আষাঢ় ১৪৩২, ২০ জুন ২০২৫, ২৩ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছানোর তাৎক্ষণিক মাধ্যম ‌‌‘সেল ব্রডকাস্ট’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:০২, জুন ১৯, ২০২৫
ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছানোর তাৎক্ষণিক মাধ্যম ‌‌‘সেল ব্রডকাস্ট’

ঢাকা: দেশে মোবাইলফোনের অধিক ব্যবহারের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছে সরাসরি সতর্কবার্তা পৌঁছানোর তাৎক্ষণিক এবং নির্ভরযোগ্য টুলস হিসেবে ‘সেল ব্রডকাস্ট’ ব্যবহার করা যাবে।  

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী এ কথা বলেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পর্যবেক্ষণ, ক্ষয়ক্ষতি কমায় এবং ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীসহ সব অংশীদারদের কাছে আগাম সতর্কতা পৌঁছাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কৌশল প্রণয়নের অংশ হিসেবে রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বিটিআরসি ভবনে দুর্যোগকালীন জাতীয় জরুরি টেলিযোগাযোগ পরিকল্পনা এবং সেল ব্রডকাস্ট প্রারম্ভিক সতর্কতা ব্যবস্থা শীর্ষক দুই দিনব্যাপী কর্মশালা হয়েছে।

সবার জন্য প্রাথমিক সতর্কীকরণ উদ্যোগটি জাতিসংঘের নেতৃত্বে একটি বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টা, যার লক্ষ্য হলো ২০২৭ সালের মধ্যে পৃথিবীর সব মানুষ যাতে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে তা নিশ্চিত করা। এর চারটি মূল পিলারের মধ্যে পিলার-১ দুর্যোগ ঝুঁকি জ্ঞান এবং ব্যবস্থাপনা, পিলার-২ পর্যবেক্ষণ এবং পূর্বাভাস, পিলার-৩ সতর্কতা প্রচার এবং যোগাযোগ এবং পিলার-৪ প্রস্তুতি গ্রহণ এবং দ্রুত রিসপন্স টিম সক্রিয় করা।

পিলার-৩ (সতর্কতা প্রচার এবং যোগাযোগ) একটি বহুমুখী চ্যানেল পদ্ধতি যা আগাম সতর্কতার কার্যকারিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সচেতন করে। পিলার থ্রি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে দুই দিনের কর্মশালায় বাংলাদেশের জন্য জাতীয় জরুরি টেলিযোগাযোগ পরিকল্পনা ও সেল ব্রডকাস্ট আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম সংক্রান্ত মোট সাতটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় জরুরি টেলিযোগাযোগ পরিকল্পনার আওতায় টেলিযোগাযোগ কাঠামো মূল্যায়ন, দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার) সাথে সমন্বয় এবং জরুরি পরিস্থিতিতে টেকসই টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো নিশ্চিতকরণ।

অন্যদিকে সেল ব্রডকাস্ট আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেমের আওতায় বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্পের জন্য সেল ব্রডকাস্টিং সতর্কতা সম্পর্কে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ, মোবাইল অপারেটরদের সাথে সমন্বয় ও দেশব্যাপী বাস্তবায়ন করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বিশ্ব ঝুঁকি সূচক-২০২৩ অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী দুর্যোগপ্রবণ শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দুর্যোগকালীন বিদ্যুৎ বিভ্রাট, চলাচল অনুপযোগী সড়ক ব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় পাওয়ার ব্যাকআপের অভাবসহ নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সচলে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। এজন্য দুর্যোগকালীন আগাম সতকর্তার জন্য টেকসই টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা এবং একটি শক্তিশালী ও সমন্বিত জাতীয় জরুরি টেলিযোগাযোগ কর্মপরিকল্পনা জরুরি বলে কর্মশালায় মতামত প্রদান করা হয়।

কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশে যেখানে জীবন-জীবিকা, নিরাপত্তা এবং জাতীয় উন্নয়ন বারবার হুমকির সম্মুখীন হয়, এই ধরনের প্রেক্ষাপটে নির্ভরযোগ্য, বাস্তবসম্মত এবং সহজলভ্য যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রবেশাধিকার শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয় বরং জীবন রক্ষাকারীও হয়ে ওঠে।

তিনি আরও বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার চারটি ধাপ তথা, দুর্যোগ প্রশমন, প্রস্তুতি, প্রতিক্রিয়া এবং পুনরুদ্ধারে টেলিযোগাযোগ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। দেশে মোবাইলফোনের অধিক ব্যবহার এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে সেল ব্রডকাস্ট ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছে সরাসরি সতর্কীকরণ পৌঁছানোর তাৎক্ষণিক এবং নির্ভরযোগ্য টুলস হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) কানেক্ট টু রিকোভারের  প্রজেক্ট অফিসার কারেন উ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও মানব সৃষ্ট বিপর্যয় বিশ্বব্যাপী পরিবেশ ও প্রকৃতির ওপর প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের মতো দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা দেশে মোবাইলকেন্দ্রিক আর্লি ওয়ানিং সিস্টেম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ ছাড়া উদ্বোধনীতে কমিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইকবাল আহমেদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা পূর্বপ্রস্তুতিমূলক কর্মসূচির (সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগাম) পরিচালক আহমেদুল হক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বক্তব্য দেন।

কর্মশালায় আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ, রেডক্রস, ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক, মোবাইল অপারেটরস, টেলিযোগাযোগখাত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, বিশেষজ্ঞ, একাডেমিয়া, দেশি-বিদেশি সংস্থার প্রতিনিধিরা, বিটিসিএল, বিটিআরসি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এমআইএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।