সাভারের আলোচিত ‘কিডনি কাণ্ড’ নিয়ে এবার মুখ খুললেন উম্মে সাহেদীনা টুনির স্বামী মো. তারেক। তারেকের দাবি, স্ত্রী তার কাছ থেকে এক শতাংশ জমিসহ তিনতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলার মালিকানা লিখে নিয়েই কিডনি দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছোটবেলায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকায় আসেন তিনি। পরে নানা কষ্টে মালয়েশিয়ায় যান এবং প্রবাস জীবন থেকে আয় করা অর্থ পাঠান দেশে। তার ভগ্নিপতি সাভারের বিপিএটিসি এলাকায় থাকার সুবাদে কলমায় তারেকের নামে জমি কেনেন এবং সেখানে বাড়ি নির্মাণ করা হয়।
দেশে ফিরে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন তারেক। ঘটকের মাধ্যমে পরিচয় হয় উম্মে সাহেদীনা টুনির সঙ্গে। তারেক বলেন, ২০০৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আমি টুনিকে না দেখেই বিয়ে করি। আমার বাসা তখন প্রস্তুত ছিল, ওরা কোয়ার্টারে থাকত। এখন ওদের অনেক টাকা।
প্রথমদিকে সংসার ভালোই চলছিল বলে জানান তিনি। একসময় তার শরীরে ধরা পড়ে কিডনি রোগ। ভারতে চিকিৎসা নিতে গেলে চিকিৎসক কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। কিন্তু অর্থাভাব দেখা দেয়। তখন স্ত্রী টুনি কিডনি দিতে রাজি হন, তবে শর্ত দেন— বাড়ির দ্বিতীয় তলার মালিকানা লিখে দিতে হবে।
তারেক বলেন, সম্পর্ক তখন ভালো ছিল, তাই আমি এক শতাংশ জমিসহ বাড়ির দ্বিতীয় তলার মালিকানা টুনির নামে লিখে দিই। এরপর সে তার মা-বোনের নিষেধ সত্ত্বেও ভারতে গিয়ে কিডনি দেয় আমাকে।
তবে সফল প্রতিস্থাপনের পরও সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি তারেক। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন বলে দাবি করেন তিনি। এ সময় থেকেই তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে।
এরপর টুনি টিকটক জগতে জড়িয়ে পড়ে। তার চরিত্রগত পরিবর্তন আমি খেয়াল করি, যদিও দুই-তিন মাস সহ্য করি, বলেন তারেক। তিনি অভিযোগ করেন, একদিন আমার ভাড়াটিয়ার সঙ্গে একই ঘরে হাতে-নাতে ধরার পর আর সহ্য করতে পারিনি। তাকে সেখান থেকে নিয়ে আসি। সবাই দেখেছে।
ঘটনার পর থেকেই তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় বলে দাবি করেন তিনি। নারী নির্যাতন ও যৌতুক মামলায় জেল খাটেন তারেক। এরপর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে জানতে পারেন, টুনি উল্টো তার বিরুদ্ধে পরকীয়া ও অনলাইন জুয়ার মিথ্যা গল্প সাজিয়েছে।
তারেক বলেন, আমি এখন ভাইয়ের বাসায় থাকছি। ফোন, কাপড়চোপড়, সব টুনির কাছে রেখে এসেছি। আমার বাড়ির ভাড়ার টাকা ও-ই নিচ্ছে। আমি ঠিকমতো ওষুধও কিনতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, টুনি দাবি করেছে আমি শারীরিকভাবে অক্ষম, তাহলে আমি কীভাবে অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারি? এখন পর্যন্ত আমাদের বিচ্ছেদ হয়নি, অথচ আমাকে বঞ্চিত করে চলছে। আমি অন্তত আমার বাড়ির অংশের ভাড়ার টাকা চাই, যেন চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারি।
তারেকের সাবেক ভাড়াটিয়া মো. হৃদয় খান বলেন, আমি ওই বাড়িতে থাকতাম। তারেক যা বলেছেন সবই সত্যি। টুনির চরিত্র আগে থেকেই খারাপ ছিল।
প্রসঙ্গত, টুনি এর আগে অভিযোগ করেছিলেন, স্বামীর জীবন বাঁচাতে কিডনি দেওয়ার পর তারেক পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন, অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হন এবং তাকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। তবে এবার তারেক উল্টো অভিযোগ তুলে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন।
এমজে