ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

এক বছরে নৌপরিবহন খাতে রাজস্ব আয় ৬৫৭৫.৯৭ কোটি টাকা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:২০, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫
এক বছরে নৌপরিবহন খাতে রাজস্ব আয় ৬৫৭৫.৯৭ কোটি টাকা সংবাদ সম্মেলনে নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

ঢাকা: নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন সংস্থার মোট রাজস্ব আয় ৬৫৭৫.৯৭ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৯.৪০৮ শতাংশ বেশি বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

তিনি বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের গত এক বছরের কর্মকাণ্ডে এসেছে বহুমুখী সাফল্য।

সংস্কার ও বিশেষ কার্যক্রম, অবকাঠামো উন্নয়ন, নৌ যোগাযোগ সম্প্রসারণ, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও আধুনিকায়নে হয়েছে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।

সোমবার (০৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নৌপরিবহন খাতে গত এক বছরের উল্লেখযোগ্য অর্জন, কার্যক্রম ও উন্নয়ন সম্পর্কে এসব তথ্য তুলে ধরে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকারের দূরদর্শী পরিকল্পনা ও সময়োপযোগী উদ্যোগের ফলে নৌপরিবহন খাতে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন সংস্থার মোট রাজস্ব আয় ৬৫৭৫.৯৭ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৯.৪০৮ শতাংশ বেশি। একই সময়ে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ২২২৩.৩৩ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ২১.৮১ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ রাজস্ব আয় করেছে ৫২২৭.৫৫ কোটি টাকা, তন্মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে ১৭৬১.৯৭ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর গত অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ (৩২,৯৬,০৬৭টি) কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ৪ শতাংশ এবং কার্গো হ্যান্ডলিং ৬.০৭ শতাংশ বেড়েছে। বন্দরের ইয়ার্ড থেকে ২০ বছর ধরে পড়ে থাকা ৩৯৭টি গাড়ি অপসারণ করা হয়েছে এবং নিলামযোগ্য ১০ হাজার TEUs কন্টেইনার অপসারণের কার্যক্রম চলমান আছে। চট্টগ্রাম ড্রাইডক কর্তৃক নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল অপারেশনে যাওয়ার পর পূর্বের তুলনায় দক্ষতা বেড়েছে। ফলে সময় এবং ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক রুটে পাঁচটি জাহাজ পরিচালনা করে ৩০০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করে যা বিএসসির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন কর্তৃক শেয়ারহোল্ডারদের ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে।

মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ দপ্তর/সংস্থার সংস্কারমূলক কার্যক্রমে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে নৌপরিবহন উপদেষ্টা জানান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কর্তৃক এই প্রথমবারের মতো জাইকার কারিগরি সহায়তায় ন্যাশনাল পোর্টস স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন করা হচ্ছে। গত ২৮ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অকার্যকর তিনটি স্থলবন্দর বন্ধ এবং একটি স্থলবন্দর এর অপারেশনাল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক ৩৬৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৯.৮০ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে যার মূল্য প্রায় ২৮ কোটি টাকা। এছাড়াও, কক্সবাজার জেলার বাঁকখালী নদী হতে ৪৯৬টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৬৩ একর জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ নৌরুটে স্পিডবোটে যাত্রী পরিবহনের জন্য কিলোমিটার প্রতি নৌরুটের ভাড়া সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। সন্দ্বীপ ও হাতিয়াকে নতুন নদীবন্দর হিসেবে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। ১৫টি স্থাপনা এবং নৌযানের নতুন নামকরণ করা হয়েছে। দেশের বিচ্ছিন্ন জনপদ যেমন কুতুবদিয়া, ভাসানচর ইত্যাদি এলাকার সঙ্গে নৌ যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে। চর কুকরিমুকরি, কচ্ছপিয়া, ঢালচর, কলাতলী রুটে নৌ চলাচল চালু করা হয়েছে।

সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে উল্লেখ করে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের বহরে দুটি আধুনিক বাল্ক ক্যারিয়ার যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং আরও তিনটি জাহাজ ক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে বে-টার্মিনাল, নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল ও লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। প্রায় ২৪৩৮১.৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে একনেক কর্তৃক মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের জন্য ৬৩৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়া নৌপরিবহন খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার ধারাবাহিকভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। অবকাঠামো উন্নয়ন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা এবং বন্দর ও শিপিং খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি—এসব কার্যক্রম আগামী দিনে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশীয় অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন প্রকল্পে ব্যয় সাশ্রয়ের পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়েছে। বেনাপোল স্থলবন্দরসহ অন্যান্য স্থলবন্দর আধুনিকায়নের ফলে বন্দরের সক্ষমতা, নিরাপত্তা ও কার্যক্রমে গুণগত উন্নয়ন হয়েছে। মোংলায় এবং চট্টগ্রামের মাঝের চরে ফ্রি ইকোনমিক জোন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পায়রা বন্দরের অবকাঠামো ও টার্মিনাল নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে; ২০২৬ সালের জুলাই মাসে পূর্ণাঙ্গ অপারেশন চালু হবে।

মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্প, বিআইডব্লিউটিএ’র মিঠামইন প্রকল্প, বিআইডব্লিউটিএ’র ৩৫ ড্রেজার প্রকল্প, মেরিন অ্যাকাডেমির সিমুলেটর প্রকল্প, পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেল ড্রেজিং প্রকল্পসমূহ থেকে বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ যাচাই-বাছাইপূর্বক ২ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, গত ৫৪ বছরে প্রথমবারের মতো নৌযানের ডাটাবেইজ তৈরির লক্ষ্যে নৌ শুমারির জন্য বিবিএস এর সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। ২০২৪ সালের UNCTAD রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাহাজ মালিকদের তালিকায় ৩৫তম স্থান অর্জন করে।

দেশের নদীকেন্দ্রিক পর্যটন সুবিধা বিকশিত করার লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, পর্যটনের উদ্দেশ্যে ১২৫ বছরের পুরাতন স্টিমার পিএস মাহসুদ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৩৫ জলযান প্রকল্পের আওতায় সংগৃহীতব্য সি-ট্রাক/ক্রুজ শিপ চালু এবং শিমুলিয়াতে একটি গ্রিন পোর্ট ও পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সেবা সম্প্রসারণে, বাঁশবাড়িয়া (সীতাকুন্ড)-সন্দ্বীপ (গুপ্তছড়া) রুটে ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়েছে, কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে সি-ট্রাক সার্ভিস চালু করা হয়েছে এবং বিভিন্ন নদীপথে নাব্যতা পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে গতি সঞ্চার হয়েছে। পাশাপাশি, পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালে বিশ্বমানের শিপিং কোম্পানি মেডিটেরিনিয়ান শিপিং কোম্পানি (এমএসসি) বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যা শিগগিরই দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) হিসেবে যুক্ত হবে।

বিশেষ চুক্তি ও সহযোগিতা ক্ষেত্রে গত এক বছরে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মেরিটাইম শিক্ষা ও সার্টিফিকেটের পারস্পরিক স্বীকৃতি চুক্তি এবং ফিলিপাইনের মেরিটাইম অ্যাকাডেমির সঙ্গে প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়া চীনের পরিবহন মন্ত্রণালয় মোংলা বন্দরের উন্নয়ন ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে, এ সময় চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দরসহ বিভিন্ন সংস্থায় হাজারেরও অধিক নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার নাবিকের সাইন অন সম্পন্ন হয়েছে।

মানবসম্পদ উন্নয়ন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে মেরিন একাডেমি ও মেরিটাইম ইনস্টিটিউটে জনবল নিয়োগ, অত্যাধুনিক সিমুলেটর সংগ্রহ ও পাঠ্যক্রম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিমুলিয়ায় একটি ড্রেজ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট চালু করা হয়েছে। ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট, মাদারীপুরের নিজস্ব ক্যাম্পাসে প্রথমবারের মতো নাবিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আফ্রিকান শিক্ষার্থীদের জন্য মেরিন একাডেমিগুলোতে স্কলারশিপ চালু করায় বাংলাদেশের সামুদ্রিক শিক্ষায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরও প্রসারিত হয়েছে।

বাংলাদেশ ২০২৪-২০২৫ মেয়াদে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) কাউন্সিলের সি-ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয়ে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন আইএমও কাউন্সিল নির্বাচনেও (২০২৬-২৭ মেয়াদ) সি-ক্যাটাগরিতে সদস্যপদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এবং আইএমওভুক্ত অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে দেশের পক্ষে সমর্থন চেয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

জিসিজি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।