রাজধানীর বিভিন্ন ডিজে পার্টিতে ব্যবহৃত হতো ‘খ’ শ্রেনির মাদক এমডিএমএ। ধনী পরিবারের তরুণদের কাছে সরবরাহ করা হতো এই ভয়ংকর মাদক, যা বিদেশি চকলেটের আড়ালে ডাকযোগে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে আসতো।
গ্রেপ্তাররা হলেন—মো. জুবায়ের (২৮), জি এম প্রথিত সামস (২৫), আসিফ মাহবুব চৌধুরী (২৭), সৈয়দ শাইয়ান আহমেদ (২৪) ও অপূর্ব রায় (২৫)। তাদের কাছ থেকে যুক্তরাজ্য থেকে আমদানিকৃত ‘খ’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য লালচে বর্ণের এমডিএমএ ট্যাবলেট ৩১৭ পিস, কুশ ১ কেজি ৬৭৬ গ্রাম, গাঁজা ২৫০ গ্রাম ও ৫টি কাচের বোতলে ৫০ মি.লি. কিটামিন জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি ৬টি মোবাইল ফোন ও ১টি ল্যাপটপ এবং নগদ ৭ লাখ ১১ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. হাসান মারুফ।
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, আসামি জুবায়েরসহ স্বনামধন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ুয়া প্রযুক্তি-দক্ষ, শিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির আরও বেশ কয়েকজনের একটি চক্র গাঁজা/কুশ/এমডিএমএ/কিটামিনসহ অন্যান্য আধুনিক মাদক পার্সেল যোগে উন্নত দেশ থেকে আমদানি করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মহানগরে পার্টি ড্রাগ হিসেবে বিভিন্ন ডিজে পার্টিতে এবং অভিজাত সোসাইটিতে সরবরাহ করছে।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও মাঠপর্যায়ে আসামিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, অতিসম্প্রতি মাদকের একটি চালান ডাকযোগে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে আসবে। এই তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ডিএনসি ঢাকা মেট্রো উত্তর কার্যালয়ের উপপরিচালক শামীম আহম্মেদ ও উপপরিচালক মো. মেহেদী হাসানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিদর্শক দেওয়ান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানসহ ১০ সদস্যের একটি দল পল্টন মডেল থানাধীন পুরাতন ডাক ভবনের বৈদেশিক ডাক শাখা থেকে যুক্তরাজ্য থেকে আগত এয়ার পার্সেল তল্লাশি করে একটি কাগজের কার্টনের ভেতর বিভিন্ন বিদেশি ব্রান্ডের চকলেটের নিচে লুকানো অবস্থায় একটি বাবল পেপারে মোড়ানো স্বচ্ছ পলি প্যাকেটে রক্ষিত লালচে বর্ণের এমডিএমএ ট্যাবলেট উদ্ধার করে। তারপর জব্দকৃত কাগজপত্র পর্যালোচনা ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পার্সেলটির প্রাপক, মাদক চক্রের অন্যতম হোতা মো. জুবায়েরের অবস্থান শনাক্ত করে ঢাকা উদ্যান এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাসান মারুফ আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে মো. জুবায়ের জানান, পার্সেলটি যুক্তরাজ্য থেকে তার পূর্বপরিচিত অরণ্য ডাকযোগে অরণ্যের বন্ধু অপূর্ব রায়ের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে পাঠিয়েছেন, যা তাকে রিসিভ করে তার আরেক বন্ধু জি এম প্রথিত সামসের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এর বিনিময়ে তাকে ৫০ হাজার টাকা দেবেন বলে জানান। কাজটি করার জন্য অরণ্যের কথায় প্রথিত তাকে বিকাশের মাধ্যমে তিন বারে ১৫-১৬ হাজার টাকা অগ্রিম দেন।
এই কর্মকর্তা জানান, আসামি মো. জুবায়েরের বর্ণনামতে ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এই আধুনিক মাদক চোরাকারবারী চক্রের অন্যতম হোতা জি এম প্রথিত সামসের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার কাছ থেকে যুক্তরাজ্য থেকে আমদানিকৃত মাদকদ্রব্য এমডিএমএ ট্যাবলেট, গাঁজা ও কিটামিন নামক মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরও জানান, জুবায়ের এবং জি এম প্রথিত সামসকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে সোমবার ভোরে আসিফ মাহবুব চৌধুরীর বাসা ঘেরাও করে তাকে এমডিএমএ, গাঁজা, কুশ ও নগদ টাকাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। আসাইম জুবায়েরের দেওয়া তথ্য মতে অপূর্ব রায়কে গাঁজাসহ গ্রেপ্তার করা হয় এবং প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য প্রমাণাদি জব্দ করা হয়। অপূর্বের দেওয়া তথ্য মতে সৈয়দ শাইয়ান আহমেদকে গাঁজা ও এমডিএমএ চালানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণাদি জব্দ করা হয়।
আসামিরা হোয়াটস অ্যাপ, টেলিগ্রাম এবং অন্যান্য এনক্রিপ্টেড অ্যাপ ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন বলে জানান মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
এসসি/এমজেএফ