জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো প্রসঙ্গে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, এক মাস সময় বৃদ্ধি করার কারণ হচ্ছে যে, যে কোনো কার্যালয় যদি প্রায় এক বছর ধরে অব্যাহত থাকে, সেটা গুটিয়ে তুলতেও খানিকটা সময় লাগে। আমরা যেন মেয়াদের মধ্যেই সেটা গুটিয়ে তুলতে পারি, সেটাও সরকারের পক্ষ থেকে বিবেচনা করা হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ২৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আলী রীয়াজ জানান, বিশেষজ্ঞরা বলছেন—অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, গণভোট ও বিশেষ সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
দলগুলোর উদ্দেশে কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, ১১ সেপ্টেম্বরের পর আপনাদের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছিল, আপনারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে আরও সুনির্দিষ্ট করে কিছু প্রস্তাব দিতে পারেন কি না। যেগুলো আরও বিকল্পগুলোকে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয় এবং সম্ভব হলে একমত জায়গায় যেন আমরা আসতে পারি। আপনাদের পক্ষ থেকে আমরা সর্বশেষ যখন মিলিত হয়েছিলাম, তখন আপনারা আপনাদের দলীয় অবস্থান এবং দলীয় অবস্থানের বাইরেও আপনাদের অবস্থানগুলো ব্যাখ্যা করেছেন। বিস্তারিতভাবে তার আগে আপনারা লিখিতভাবে দিয়েছেন। তার সারাংশ আমরা উপস্থাপন করেছি। তার পাশাপাশি আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি, এমনকি যেদিন সর্বশেষ আমরা এখানে সকলে মিলিত হই এবং মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এখানে উপস্থিত ছিলেন।
‘আমাদের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের পক্ষ থেকে একটি সুস্পষ্ট মতামত সুপারিশ হিসেবে আমাদের দেওয়া হয়েছে। আপনাদের পক্ষ থেকে যে সমস্ত বক্তব্য ছিল সেগুলোকে আমরা ছয় ভাগে ভাগ করেছিলাম। আপনারা বলেছিলেন বেশ কিছু বিষয় অধ্যাদেশ এবং নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যায়। ’
তিনি আরও বলেন, আমরাও কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারকে অনুরোধ করেছি, অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ যেন নেয়। যে সমস্ত বিষয় অধ্যাদেশ এবং নির্বাহী আদেশে করা যায় সেগুলো যেন তারা দ্রুত করে।
‘সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে আমাদের যেই বিশেষজ্ঞ প্যানেল আছে তারা দুটো কথা বলেছিল, একটি হচ্ছে গণভোট, আরেকটি বিশেষ সাংবিধানিক আদেশের কথা। সমস্ত কিছু বিবেচনা করে প্যানেলের পক্ষ থেকে আমাদের কটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যেটি আপনাদের সামনে আমরা উপস্থাপন করেছি। আমরা সরকারকে একাধিক পরামর্শ দিতে পারি—বাস্তবায়নে যেটা তুলনামূলকভাবে সরকারের জন্য সহজতর হবে, বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে এবং প্রয়োজনীয় আইনি সাংবিধানিক বিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখে তারা পদক্ষেপ নিতে পারবেন। ’
আলী রীয়াজ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অংশগ্রহণের জন্য ২১ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের বাইরে থাকবেন, নিউইয়র্কে থাকবেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বক্তব্য রাখার জন্য। তিনি ২ অক্টোবর ফিরবেন। আমরা এই প্রক্রিয়াটির পরিণতির জায়গা অর্থাৎ আমাদের দিক থেকে যে সুপারিশ সেটা আসলে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে তার সঙ্গে আলোচনা করে দিতে চাই। ২১ তারিখের আগে যদি আমরা একমত হতে পারি বা বিকল্পগুলো নিশ্চিত হতে পারি, তাহলে আমাদের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে সেটা তার কাছে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে। অন্যথায় আমাদেরকে কিছুটা সময় নিতে হবে।
আলী রীয়াজ বলেন, ইতিমধ্যে আপনাদের কাছে সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য দেওয়া হয়েছে। আমরা বলেছি যদি তথ্যগত ত্রুটি থাকে তাহলে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করুন। কারণ তথ্যগত ত্রুটি থাকতেই পারে দু-একটা ক্ষেত্রে এবং আমরা সেগুলো অবশ্যই সংশোধন করব। বাইরে মূল বক্তব্যের জায়গায় আসলে আমরা বলেছিলাম যে এটা সংশোধনের সবার মতামতের সমন্বয়ের কারণে এটাকে আমরা ওই টেক্সটটাকে ওই মূল জায়গাটাতে আমরা পরিবর্তন করতে চাচ্ছি না।
তিনি বলেন, আমরা আপনাদের কাছে অনুরোধ করেছিলাম যে আপনারা আপনাদের দুজন প্রতিনিধির নাম পাঠান যাতে করে আপনাদের দলের পক্ষ থেকে কে বা কারা সনদে সম্মতিসূচক স্বাক্ষর দেবেন সেটা আমাদের জানা থাকা দরকার। আমরা আশা করছি, খুব স্বল্প সময়ের প্রস্তুতিতেই আমরা এই ধরনের একটা বাস্তবায়ন স্বাক্ষরের জায়গায় যেতে পারি। নতুন এই যে এক মাস, যেটা আমি আবারও বলি, আমাদের কোনো অবস্থাতেই এক মাস ধরে এটা নিয়ে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার কোনো উদ্দেশ্য বা আগ্রহ নেই। আমরা মনেও করি যে আপনারা সে জায়গায় এতটা সময় নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করবেন না। বিশেষজ্ঞদের যে মতামত, চারটি বিকল্প এবং সর্বশেষ তাদের যে একক পরামর্শ, সেটি আপনাদের সামনে আছে, সেগুলোকে সামনে রেখেই আমরা আজকে আলোচনা করব। আপনারা যে দীর্ঘ সময় ধরে সাংগঠনিক ব্যস্ততা সত্ত্বেও অব্যাহতভাবে যুক্ত থেকেছেন এটা প্রমাণ করছে যে এই সংস্কার প্রক্রিয়াকে অগ্রসর করে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আপনাদের আন্তরিকতার বিন্দুমাত্র ঘাটতি নেই। এটা অব্যাহত থাকবে বলে সেটা আমরা আশা করি।
টিএ/এইচএ/