শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুনের ঘটনায় দেশের ব্যবসায়িক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোক ও উদ্বেগের ছায়া। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে।
শনিবার রাতে লেলিহান শিখায় পুড়ে যায় সম্পূর্ণ কার্গো ভিলেজ, যেখানে দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা হাজারো পণ্য মজুদ ছিল। রোববার (১৯ অক্টোবর) সকালেও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুনের ধোঁয়া নেভাতে কাজ করছিলেন। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে পোড়া গন্ধ। ধ্বংসস্তূপের সামনে অপেক্ষারত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের চোখে অনিশ্চয়তা আর হতাশা।
বিজিএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এনামুল হক খান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের বলেন, “এই ঘটনায় অসংখ্য স্যাম্পল নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশ কারখানার পণ্য আকাশপথে রপ্তানি করা হয়। এই অগ্নিকাণ্ডে সেই কার্যক্রমে বড় ধাক্কা লেগেছে। ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিকারকদের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং দ্রুত নতুন শিপমেন্টের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। আমদানি সেকশন পুরোটাই পুড়ে গেছে, সেটি সচল হতে অন্তত এক মাস সময় লাগবে। ”
কার্গো ভিলেজ পরিদর্শন শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “আমদানির অংশ সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে। বিমানবন্দর চালু আছে এবং তিন দিনের জন্য অতিরিক্ত ফ্লাইটের মাশুল মওকুফ করা হয়েছে। গতকাল রাত ৯টা ১০ মিনিট থেকে নিরবচ্ছিন্ন ফ্লাইট কার্যক্রম চলছে। ”
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি আলোচিত অভিযোগ ঘুরছে ফায়ার সার্ভিসকে দীর্ঘ সময় কাজ করতে দেওয়া হয়নি। বাণিজ্য উপদেষ্টা এ বিষয়ে বলেন, “এই অভিযোগ সত্য নয়। ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই ফায়ার টিম কাজ শুরু করেছিল। ”
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি এবং বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হাতেম বলেন, “দেশের এত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কীভাবে এত বড় আগুন লাগে? আমাদের শিল্পকারখানায় ফায়ার সেফটি বাধ্যতামূলক, কিন্তু এখানে কোনো ব্যত্যয় ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। বহির্বিশ্বের বায়ারদের কাছে এটি দেশের ইমেজ ক্রাইসিস তৈরি করবে, সবাই প্রশ্ন তুলবে। ”
এক কাস্টমস কর্মকর্তার বক্তব্যে উঠে এসেছে কার্গো ভিলেজের দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা। তিনি জানান, “এখানে বরাবরই ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি পণ্য রাখা হতো। টিন শেডের ভেতর দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ত। আমি একবার ফেসবুকে এসব নিয়ে পোস্ট করেছিলাম, তাতে দেখা গিয়েছিল, কার্গোর ভেতরে বৃষ্টির পানি পড়ছে। বিগত সরকারের রোষানলে পড়ে সেই পোস্ট আমাকে ডিলিট করতে হয়েছিল। তবে তার আরও একটি ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, কার্গো ভিলেজের ভেতর যেখানে মালামাল রাখা, সেখানে গুইসাপ ঢুকে গেছে। ”
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘটনাটি শুধু পণ্যের ক্ষতি নয়, দেশের বাণিজ্যিক সুনামে বড় আঘাত। পোশাক রপ্তানিতে নির্ভরশীল বাংলাদেশ এখন এক নতুন ইমেজ ক্রাইসিসের মুখোমুখি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা ও বিজিএমইএ নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তায় জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগুনের প্রকৃত কারণ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
আগুনের জ্বলার সময় কার্গোর সামনে কয়েকটি লাশ ছিল বলেও লাইভ ভিডিওতে দেখা গেছে, যেটি নিয়েও বিভিন্ন রকম তথ্য শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল এভিয়েশনে কর্মরত একজন জানান, কোন লাশ কার্গোর ভেতলে ছিল না। বাইরে দুটি লাশ রাখা ছিল, সেই দুটি মরদেহ পোড়েনি, তা পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পিএ/এমজেএফ