পদ্মাপাড়, লৌহজং থেকে: সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হাঁস, চিল এবং রঙ-বেরঙের প্রজাপতি আর ড্রাগনসহ শত নামের ঘুড়ি উড়লো পদ্মার আকাশে।
জাতীয় ঘুড়ি উৎসব-২০১৫-এ ঘুড়ির উড়াউড়িতে পদ্মাপাড়ের আকাশটি ছিল দিনভর রঙিন।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে শিমুলিয়া ফেরিঘাট এলাকায় শুক্রবার সকালে শুরু হয় জাতীয় ঘুড়ি উৎসব।
বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের আয়োজনে ঘুড়ি উড্ডয়ন প্রতিযোগিতা ছাড়াও বাঘের নাচ এবং পদ্মানদীর আকাশে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্যারাসুট উড্ডয়নের আয়োজন করা হয়।
হারিয়ে যেতে বসা বাংলার ঐতিহ্য রক্ষায় এই ঘুড়ি উৎসবে ডোরাকাটা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সঙ্গে দেশীয় চিল, প্রজাপতিসহ বিভিন্ন ধরনের সাপের আকৃতি সদৃশ ঘুড়িসহ জলচর, স্থলচর ও খেচর এবং বিদেশি পকেট কাইট, বাজিগর কাইট, ড্রাগন, ডোরেমন কাইট, ট্রেন কাইট ওড়ানো হয়।
দেশি ঘুড়ির সঙ্গে বিদেশি ঘুড়ির সংমিশ্রনে প্রদর্শন করা হয়, আধুনিক নানা রঙ-আকারের ঘুড়ি।
ঘুড়ি উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে সমাগম ঘটে ঘুড়িপ্রেমিকদের। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। ঘুড়ি উড়িয়ে আনন্দ উপভোগের সুযোগ পায় তারা।
উৎসবে চাচার সঙ্গে আসা রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ইসমাম জানায়, প্রথমবারের মতো এই আয়োজনে এসে বিভিন্ন রকমের ঘুড়ির সঙ্গে পরিচিতির সুযোগ হলো তার।
নামি-দামি ঘুড়ি ওড়ানোর সুযোগের পাশাপাশি দেশীয় বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ি বিতরণ করা হয়, আগতদের মধ্যে। আর সে সব ঘুড়ি নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে শিশু-কিশোরেরা।
রাজধানীর হাম্মাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন জানায়, এখানে না এলে ঘুড়ি ওড়ানো হতো না।
শিশুদের পাশাপাশি এসেছিল বয়স্করাও। উৎসবে আসা শিমুলিয়া বাজার এলাকার পঞ্চাশোর্ধ্ব রেজ্জাকুল ইসলাম ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ছোটবেলায় যেমন ঘুড়ি উড়াতাম, একালে আর ঘুড়ি উড়তে দেখা যায় না।
ঘুড়ি উৎসব আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের বদঅভ্যাস থেকে দূরে রাখবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে সকালে ২০টি বাঘ, ২০টি বাঘ থাবা এবং ২০টি পুষ্প ঘুড়িসহ একগুচ্ছ আধুনিক ও দেশি ঘুড়ি উড্ডয়নের মধ্য দিয়ে শুক্রবার শিমুলিয়া ফেরিঘাট সংলগ্ন পদ্মা নদীর তীরে উৎসবের উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
বিশেষ অতিথি সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, সম্মানিত অতিথি চীনা দূতাবাসের সংষ্কৃতি বিষয়ক কর্মকর্তা হুয়াং লি উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও ছিলেন মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাইফুল হাসান ছাড়াও সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ, ঘুড়ি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মৃধা এবং স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা।
উৎসবের আকর্ষণীয় আয়োজন ছিল বাঘের নৃত্য। জাতীয় পশু সুন্দরবনের বাঘের প্রতীকী নাচের আয়োজন মন কেড়েছে সবার।
দুই যুবক বাঘের চামড়ার আদলে ডোরা কাটা দাগ, ভয়ঙ্কর গোঁফওয়ালা মুখ, মুখের ভেতর ধারালো দাঁত-জিহ্বা, ধারালো নখের থাবা সদৃশ পোশাক পরে উপস্থাপন করেন বাঘের নাচ। চীনের ঐতিহ্যবাহী লায়ন ডান্সের আদলে এই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আয়োজন করা হয়। আর উৎসবস্থলের প্রবেশপথে বসানো হয়, বিশালাকৃতির টেপা পুতুল, ড্রাগন।
চীনা দূতাবাসের সহায়তায় বাঘের নাচের আয়োজন করে বাংলাদেশ ড্রাগন অ্যান্ড লায়ন ডান্স স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন।
বিশ্বসেরা বাংলাদেশের রয়েল বেঙ্গল টাইগার রক্ষায় ঘুড়ি উৎসবের স্লোগান ছিল ‘বনের বাঘ থাকুক বনে, ঘুড়ি উড়ুক নীল গগনে’।
উৎসবে উপস্থিত ঘুড়ি ফেডারেশনের সভাপতি এ.আর. খান বাংলানিউজকে বলেন, এখনকার স্কুলের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার চাপে খেলাধুলায় মন দিতে পারে না। ঘুড়ি উৎসবসহ খেলাধুলায় উৎসাহ দিলে তারা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার পাশাপাশি মাদকসহ অন্যান্য বদ অভ্যাস থেকে দূরে থাকবে।
কক্সবাজারে ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন হওয়ার নির্ধারিত স্থান থাকলেও বিএনপির অবরোধের কারণে তা লৌহজংয়ে স্থানান্তর করা হয়।
অবরোধ না থাকলেও পদ্মাপাড়ের এ উৎসবে আরো উপস্থিতি বাড়তো বলে জানান এ.আর. খান।
রাশেদ খান মেনন বলেন, এই উৎসবের কাছে হার মেনেছে অবরোধ।
ঘুড়ি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মৃধা বলেন, নতুন প্রজন্ম হারানো ঐতিহ্য জানানোর পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে এই আয়োজন।
ট্যুরিজম বোর্ডের সহায়তায় দিনব্যাপী নানা আয়োজন ছাড়াও সন্ধ্যায় ছিল ফানুস ওড়ানো, আলোকময় ঘুড়ি উড্ডয়ন এবং মঙ্গল প্রদীপ আলপনা তৈরি।
** পদ্মার চরে বাঘের নাচ!
** পদ্মাপাড়ে উড়ছে নানান রঙের ঘুড়ি!
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৪