ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পাহাড়ের ছড়ায় বর্জ্য ফেলায় কারখানায় ভাঙচুর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৫
পাহাড়ের ছড়ায় বর্জ্য ফেলায় কারখানায় ভাঙচুর ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হবিগঞ্জ: পাহাড়ের ছড়ায় দূষিত বর্জ্য অপসারণের প্রতিবাদে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ‘মার লিমিটেড’ নামে একটি কেমিকেল কারখানায় ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
 
শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেল পৌনে ৩টা থেকে সোয়া ৩টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে।


 
এ সময় স্থানীয়রা কারখানার প্রবেশ গেট, ভবনের জানালার কয়েকটি কাচ, ছয়টি গাড়ি ও চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় সাত জন আহত হয়। ঘটনার সময় কারখানা সংলগ্ন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে স্থানীয়রা।
 
আহতরা হলেন- মাধবপুর উপজেলার এক্তিয়ারপুর গ্রামের আব্দুস শহীদ (৫০), একই গ্রামের রুবেল মিয়া (২৫), কারখানার শ্রমিক গিয়াস উদ্দিন (৫০), বাসির (৩০), জাহাঙ্গীর (৩৫), নুর (৪০) ও নিরাপত্তা প্রহরী রঞ্জন (২৫)। আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
 
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পাহাড়ের ছড়ায় বর্জ্য অপসারণের প্রতিবাদ জানাতে বিকেলে কারখানা সংলগ্ন মহাসড়কে সমবেত হয় স্থানীয়রা। এ সময় কারখানার ভেতর থেকে তাদের লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারা হয়। এতে আব্দুস শহীদ ও রুবেল মিয়া আহত হন।
 
এ সময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী কারখানার গেট ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে একটি ভবনের কয়েকটি জানালার কাচ, ছয়টি গাড়ি ও চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। এতে কারখানার এক নিরাপত্তা প্রহরী ও তিন শ্রমিক আহত হন। এ সময় এলাকাবাসী মহাসড়ক অবরোধ করে।
 
খবর পেয়ে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশেদুল ইসলাম, স্থানীয় ছাতিয়াইন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান খায়রুল ইসলাম মনু, মাধবপুর থানা ও স্থানীয় ছাতিয়াইন পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করে। এতে অবরোধ তুলে নেয় স্থানীয়রা।
 
মাধবপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

কেমিকেল কারখানা ‘মার লিমিটেড’ ২০১২ সালে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহপুর এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে স্থাপিত হয়। নির্মাণের পর থেকেই কর্তৃপক্ষ কারখানার দূষিত ও দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্য পাহাড় থেকে ভাটির দিকে নেমে যাওয়া ছড়ায় অপসারণ করে আসছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ দূষিত পানির কারণে শাহপুর, এক্তিয়ারপুর, ছাতিয়াইনসহ ভাটি এলাকার প্রায় ৪০ গ্রামের হাঁস-মুরগি, গরুসহ বিভিন্ন গবাদি পশু মারা যাচ্ছে। এমনকি দুর্গন্ধে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রতিবাদ সভা, লিখিত অভিযোগ, মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্নভাবে প্রতিবাদের পরও কারখানাটি পাহাড়ের ছড়ায় দূষিত বর্জ্য অপসারণ অব্যাহত রাখে।

এ নিয়ে ৩০ নভেম্বর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে মার লিমিটেড কর্তৃপক্ষ ১৬ মার্চের মধ্যে বর্জ্য অপসারণ প্রকল্প (ইটিপি) নির্মাণের আশ্বাস দেয়। এর আগ পর্যন্ত কারখানা বন্ধের নির্দেশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর-সিলেটের পরিচালক।

পরিবেশ অধিদপ্তরের আদেশের পরও কারখানাটি চালু রাখে কর্তৃপক্ষ। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ইটিপি নির্মাণের আগ পর্যন্ত কোম্পানি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে কর্তৃপক্ষকে পত্র দেন মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম। এরপরও কারখানাটি চালু রেখে পাহাড়ের ছড়ায় দূষিত বর্জ্য অপসারণ করায় শুক্রবার স্থানীয়রা সমবেত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৫     
এমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।