ঢাকা: খোলা জায়গায় মলত্যাগকারীর সংখ্যা কমেছে দেশে, এখন মাত্র ১ শতাংশ। অন্যদিকে বেড়েছে উন্নত স্যানিটেশনের আওতায় আসা মানুষের সংখ্যা, এখন ৬১ শতাংশ।
পরিস্থিতির এ উন্নয়নে নিজেদের কৃতিত্ব দাবি করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।
গত দুই বছরে সারাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৮ হাজার ৪০৩টি স্যানিটারি ল্যাট্রিন, ১৯০টি কমিউনিটি ল্যাট্রিন-পাবলিক টয়লেট স্থাপন করেছে এ অধিদফতর।
বর্তমান সরকারের দুই বছর পূর্তিতে (২০১৪-২০১৫) উন্নত এ অবস্থাকে তাই বড় ধরনের সাফল্য হিসেবেই বিবেচনা করছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ।
মন্ত্রণালয়ের নথিপত্রে এসব তথ্য বিস্তারিত সংযুক্ত হয়েছে সম্প্রতি। এছাড়া বৃহস্পতিবার (০৭ জানুয়ারি) প্রতিমন্ত্রী মো. মশিউর রহমান রাঙ্গাও সাংবাদিকদের এ সম্পর্কিত বেশ কিছু তথ্য জানিয়েছেন।
মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশের স্যানিটেশন ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত।
ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ জরিপ প্রতিবেদন জেএমপি’২০১৫- এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৫ সালে বাংলাদেশের খোলা স্থানে মলত্যাগ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০০৩ সালের জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে ৪২ শতাংশ লোক উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করতেন। ২০১৫ সালের জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ১ শতাংশ লোক এটি করছেন। দেশে ৬১ শতাংশ লোক উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থার আওতায় এসেছেন।
গ্রামীণ পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন
এ দুই বছরে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৭ হাজার ৯২৩টি আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানির উৎস স্থাপন করা হয়েছে। এতে পল্লী এলাকায় পানি সরবরাহ কাভারেজ ৮৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
এছাড়া ৩১৮টি উৎপাদন নলকূপ, ৩৪টি পানি শোধনাগার, ১৯টি উঁচু জলাধার, ৭৪৩ কিলোমিটার বিভিন্ন ব্যাসের পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে।
উপজেলায় পানির গুণগতমান পরীক্ষায় ফিল্ড টেস্ট কিট সরবরাহ এবং প্রায় এক দশমিক ৩২ লাখ পানির উৎসের গুণগতমান পরীক্ষা করা হয়েছে।
বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৫ হাজার ৭১৮টি নলকূপ ও ৮ হাজার ৭৪৬টি ওয়াসব্লক নির্মাণ করা হয়েছে।
এলজিইডি: ব্যয় ও প্রকল্প
গত দুই বছরে এলজিইডি’তে ২০ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ৩৭টি নতুন প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। চলমান প্রকল্পসহ ৩৩টি শেষ হয়েছে। এ সময়ে ১৪ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চলমান আছে ৯৯ প্রকল্প।
অবকাঠামো উন্নয়ন
এ সময়টিতে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৯ হাজার ১৩৫ কিলোমিটার সড়ক, ৪৩ হাজার ২৫০ মিটার ব্রিজ/কালভার্ট, ২৯৭টি গ্রোথসেন্টার/হাটবাজার, ২৭৫টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স, ৫৮টি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, ৭৫টি সাইক্লোন সেন্টার, ৬৬টি ঘাট/জোট নির্মাণ, ৪৭০ কিলোমিটার বৃক্ষরোপণ, ১৫ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটার পাকা সড়ক মেরামত এবং ৫ হাজার ৯৪৫ মিটার ব্রিজ/কালভার্ট মেরামত হয়েছে।
নগর অঞ্চলে ১ হাজার ৩৮৯ কিলোমিটার সড়ক, ২ হাজার ১৫ মিটার ব্রিজ/কালভার্ট, ৫২৬ কিলোমিটার ড্রেন, ৩টি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে।
খাদ্য, পানি, পরিবেশ
১ লাখ ২ হাজার ৫০২ হেক্টর কৃষি জমিতে সেচ সুবিধা, ৫৯৬ কিমি বাঁধ/পুনর্নির্মাণ, ৪০৫টি রেগুলেটর নির্মাণ, ১ হাজার ৪১০ কিলোমিটার খাল খনন/পুনর্খনন করা হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি নদীতে ১০টি রাবার ড্যাম তৈরি করা হয়েছে।
কর্মসংস্থান
বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ২১ কোটি জনদিবস কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
যানজট নিরসনে উদ্যোগ
রাজধানীর যানজট নিরসনে ৭৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মগবাজার-মৌচাক সমন্বিত ফ্লাইওভার প্রকল্পটি বর্তমানে বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি। এর অধীনে ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি ৪ লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজ শেষে প্রায় ৫০ হাজার মোটরযান প্রতিদিন চলাচল করতে পারবে।
ঢাকা ওয়াসা
ঢাকাবাসীর পানির চাহিদা ২২৫ এমএলডি’র বিপরীতে ২৪২ এমএলডি উৎপাদনের সক্ষমতা এসেছে।
পরিবেশবান্ধব পানি সরবরাহ ব্যবস্থা
ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহের ৭৮ শতাংশ ভূ-গর্ভের, ২২ শতাংশ ওপরের। ব্যবস্থাটিকে পরিবেশবান্ধব করতে ২০১৯ সালের মধ্যে পানি সরবরাহের ৩০ শতাংশ ভূ-গর্ভের ও ৭০ শতাংশ উপরের উস থেকে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এজন্য প্রায় ১৩ হাজার ৩৫৪ দশমিক ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি ভূ-উপরিস্থ পানিভিত্তিক শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প হবে।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘পদ্মা (জশলদিয়া)’ পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন।
পরিবেশবান্ধব পয়:সুবিধা
ঢাকাবাসীকে পরিবেশবান্ধব পয়:সুবিধা দিতে ২০১৫ সালে ৩ হাজার ৩১৭ দশমিক ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্থান রেখে ‘দাশেরকান্দি পয়: শোধনাগার প্রকল্প একনেকে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেয়েছে।
রাঙ্গা বাংলানিউজকে বলেন, এ সময়টিতে (২০১৪-২০১৫) ব্যয় ও সময়ের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে সুফল পেয়েছি আমরা। আগের
যেকোনো সময়ের চেয়ে এ সাফল্য অনেক বেশি। তাছাড়া এসব আগে-পরের উদ্যোগের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট। তাই সাফল্য অব্যাহত থাকবে বলে আশা করতে পারছি।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৬
এসকেএস/এএসআর