ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আপস-মীমাংসার কারণে অপরাধ বাড়তে পারে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০১৬
আপস-মীমাংসার কারণে অপরাধ বাড়তে পারে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা

ঢাকা: প্রভাব বিস্তার নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্রামে গ্রামে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘মামলার বিচারের সময় দেখা যায়, দুই পক্ষের মধ্যে আপস-মীমাংসা হয়েছে। অনেক সময় পক্ষগুলোকে মীমাংসা করতে বাধ্যও করা হয়।

এতে প্রকৃত অপরাধীরা মুক্তি পেয়ে যায়, অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়, আবার তারাই ছাড়া পাওয়ার পর অপরাধ করে। ’

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও জেলা সদরের সংসদ সদস্য ‍উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি।
 
শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতির অভিষেক ও বিশেষ সম্মেলন-২০১৬তে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
 
প্রধান বিচারপতি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় মাদকের সর্বগ্রাসী থাবা এখানে বিস্তৃত। এটা আমাদের খুব পীড়া দেয়। তাছাড়া শাড়ি চোরাচালানের ফ্রন্ট এরিয়া এই জেলা। ভারতীয় একটা উন্নতমানের শাড়ি ভারতের চেয়ে কম দামে পাওয়া যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এটা আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি। আমি প্রধান বিচারপতি হিসেবে প্রত্যেকটা অঞ্চলের খুটিনাটি জানি। সেই ডাটা নিয়ে বলছি। আমাদের অর্থনীতিকে গ্রাস করে নিচ্ছে এই চোরাচালান।
 
সম্মেলনে উপস্থিতিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা এইসব চোরাচালান প্রতিরোধ করেন। দেশের স্বর্ণ, ডলার পাচার হচ্ছে, ফেনসিডিল, শাড়ি চলে আসছে, দেশের অর্থনীতিকে এসব পঙ্গু করে দিচ্ছে। সময় এসেছে এগুলো প্রতিরোধ করার।
 
প্রধান বিচারপতি বলেন, যে বিষয়টি আমাকে ভাবিয়ে তোলে তা হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রাকৃতিক গ্যাস থাকা সত্ত্বেও শিল্পের বিকাশ তেমন হয়ে উঠছে না। শিল্প ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে দৃঢ়ভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রয়েছে বলে আমি মনে করি। আজ আপনারা প্রতিজ্ঞা করেন, আপনারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া তিতাস গ্যাস যদি সারাদেশে দিতে পারেন, তাহলে কেন এই গ্যাস নিজেরা ব্যবহার করতে পারবেন না?
 
তিনি আরও বলেন, অনেক গুণী শিল্পীর জন্ম দিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। দেড়শ’ বছর আগে তিনটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন জমিদার অন্নদাচরণ রায়। যা ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে করেছে বিকশিত। কিন্তু সেই জেলায় সরকারি বা বেসরকারিভাবে এখনো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা হয়নি, এটা দুঃখজনক। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যোগ্য নেতাদের নেতৃত্বে মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আরও বিকশিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
 
‘এক সময়ের শান্তির জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যেখানে কখনো কলহ ছিল না, সেখানে এখন মাঝে মাঝে খবরে দেখা যায়, গ্রামে গ্রামে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সম্মুখ যুদ্ধ। এজন্য মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে মৌলভীবাজার (প্রধান বিচারপতির বাড়ি) যাওয়ার পথে পুলিশ আমাকে রাস্তায় থামিয়ে দেয় (সংঘর্ষ চলাকালীন অনেক সময় পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে দেয়), এটা বড় দুঃখজনক। ’  বলেন প্রধান বিচারপতি।
 
তবে বক্তব্যের প্রথম দিকে দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতির বিকাশ, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বহু গুণীজনের অবদান তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, শিল্প, গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অর্থনীতিকে করেছে গতিময়, অর্থনীতির দিক দিয়ে সাফল্য মণ্ডিত হয়েছে এই জেলা। পরিশ্রমী, বুদ্ধিমান ও আত্মসম্মান বোধে বলীয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া দেশের জন্য একটি মডেল ও অগ্রসরমান অঞ্চল হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
 
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাখেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
 
সমিতির নেতা মঈন উদ্দিনে সঞ্চালনায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও অতিরিক্ত সচিব কাজী আব্দুল নূর সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৫
টিএইচ/আরআই

** বিচারহীনতা অপরাধের সাহস যোগায়

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।