দুর্নীত দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দুদক মঙ্গলবার (০৩ জানুয়ারি) রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বরখাস্ত হওয়া জিএম ইউসুফ আলী মৃধাকে নিয়োগ বাণিজ্যে সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় তাকে অভিযুক্ত করে মামলার চার্জশিট দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে।
দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, রেলের বিভিন্ন পদে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা দুটি মামলার অভিযোগপত্র থেকে ২০১৪ সালের জুন মাসে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ সালের ৩২ ধারায় এবং দুদক বিধিমালা ২০০৭ সালের উপ-বিধির ১(এ) ক্ষমতাবলে এজাহারভুক্ত আসামি ইউসুফ আলী মৃধাকে অব্যাহতি দেয় দুদক। দুদকের পক্ষ থেকে তখন বলা হয় ইউসুফ আলী মৃধার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের কোনো প্রমাণ পায়নি দুদক। তাই দুদক তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।
তবে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা আদালত বিষয়টি দুদককে আবার নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দেয়। নতুন করে বিষয়টি তদন্ত করতে আবার উপ-পরিচালক সৈয়দ আহমেদকে নিয়োগ দেয় দুদক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান কমিশন তদন্ত শেষে মঙ্গলবার ১৬৬/ ১৬৭/ ৪৭৭ক,২১৭ ও ১১৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫/২ ধারায় ইউসুফ আলী মৃধার বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে।
তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আগের কমিশন মৃধাকে বাদ দিয়েই আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। কিন্তু নতুন কমিশন এসে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে নিয়োগ বাণিজ্যের প্রমাণ পেয়ে তাকে আবার অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দিলো। দুদক বলছে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে রেলওয়েতে গুডস সহকারী পদে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নগরীর কোতোয়ালি থানায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বরখাস্ত হওয়া মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধা ও সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক শেখ ফাইয়াজ আলম।
একই দিন রেকর্ড কিপার পদে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় ইউসুফ আলী মৃধা, গোলাম কিবরিয়া ও রেকর্ড কিপার সরওয়ার আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। বাদী শেখ ফাইয়াজ আলম ও মোস্তাফিজুর রহমান নিজেই মামলা দুটির তদন্ত করেন। তদন্তের পর ২০১৪ সালের ২৬ জুলাই অভিযোগপত্র দুটি চট্টগ্রাম আদালতে দুদকের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় জমা দেন সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বাসায় যাওয়ার পথে টাকার বস্তাসহ আটক হন পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধা। এ ঘটনায় তখন দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সে সময় ইউসুফ মৃধাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার সাথে চাকরিচ্যুত হন ওমর ফারুকও। তখন তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দুদক।
এরপর রেলে নিয়োগ-দুর্নীতির অভিযোগে একের পর এক ১৪টি মামলা হয় মৃধার বিরুদ্ধে। এসব মামলার আসামি হয়ে ২০১২ সাল থেকে দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন আলোচিত-সমালোচিত ইউসুফ আলী মৃধা। আত্মগোপন ছেড়ে ২০১৪ সালের ৩ মার্চ চট্টগ্রাম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। জামিন আবেদন খারিজ হলে সেই দিন থেকে এখনও কারাগারে বন্দি রয়েছেন ইউসুফ আলী মৃধা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৬
এসজে/আরআইএস/এমজেএফ