একবিংশ শতাব্দীর তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে এখন আর ওভাবে আবহাওয়ার খবর পাঠাতে হয়না। স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঢাকা আবহাওয়া অধিদফতর থেকেই রাজশাহীর আবহাওয়া পরিস্থিতি মনিটরিং করা হয়।
বোঝার উপায় নেই এই আবহাওয়া অফিসই সেই অফিস! সরেজমিনে ভবনের মূল ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে চীন, জাপান ও ভারত থেকে আমদানি করা অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি। যার অনেকগুলো একেবারেই নতুন।
অনেকটা দেরিতে হলেও সরকারি উদ্যোগে যুগোপযোগী করে তোলা হয়েছে বিভাগীয় এ আবহাওয়া অফিসকে। যার অনেক সুফলও ইতোমধ্যে মিলতে শুরু হয়েছে।
এখন বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে থাকলেও ঘরে বসেই রাজশাহীর প্রতি মুহূর্তের আবহাওয়ার খবর জানা সম্ভব। সেজন্য কেবল একটি স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই হবে।
খোঁজ নিতেই জানা গেলো, রাজশাহী আবহাওয়া অফিসে সম্প্রতি অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। সর্বশেষ প্রযুক্তি হিসেবে যুক্ত হয়েছে ডিজিটাল সিসমোমিটার।
এর মধ্যে অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন থেকে এখন ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীর আবহাওয়ার খবরাখবর চলে যাচ্ছে ঢাকায়। এর কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে ঢাকা আবহাওয়া অধিদফতর থেকেই। এর মধ্যে প্রতিদিনের তাপমাত্রা, বাতাসের আর্দ্রতা, বাতাসের দিক ও বাতাসের গতিপ্রবাহ, সূর্যোদয়, সূর্যাস্তের সময়, রেডিয়েশন ইত্যাদির খবর মুহূর্তের মধ্যেই পৌঁছে যাচ্ছে আবহাওয়া অধিদফতরের সার্ভারে। আর নতুন বসানে ডিজিটাল সিসমোমিটার অর্থাৎ ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্রটি দিয়ে ভূমিকম্পের মাত্রা ও এর উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যা আগে রাজশাহী অফিসে ছিলনা। অতিসম্প্রতি এটি স্থাপন করা হয়েছে। তবে এখনই রাজশাহী থেকে ভূমিকম্পের তথ্য জানা যাবে না।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন রাজশাহী সদর ছাড়া আরও ছয়টি উপজেলায় স্থাপন করা হয়েছে।
এর মধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলায় রয়েছে একটি, তানোর উপজেলায় একটি, মোহনপুর উপজেলায় একটি, পুঠিয়া উপজেলায় একটি ও বাগমারা উপজেলায় একটি। এছাড়া ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিজিটাল সিসমোমিটার বসানো হয়েছে রাজশাহী আবহাওয়া অফিসে। এর মধ্যে দিয়ে উন্নত বিশ্বের যন্ত্রপাতিতে সমৃদ্ধ হয়েছে। আর রাজশাহী আবহাওয়া অফিস পুরোপুরি ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। আশরাফুল আলম বলেন, অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন স্থাপনের কারণে প্রতি মুহূর্তের আবহাওয়ার তথ্য স্বংক্রিয়ভাবে ঢাকা আবহাওয়া অধিদফতরে চলে যাচ্ছে। তবে সিসমোমিটার স্থাপন করা হলেও আপাতত এখান থেকে ভূমিকম্পের তথ্য পাওয়া যাবে না। ভূমিকম্পের মাত্রা ও স্থান সম্পর্কে এখানকার তথ্য ঢাকায় চলে যাবে। ভূমিকম্পের ১৫ মিনিটের মধ্যে রাজশাহীসহ দেশের অন্য কেন্দ্রগুলোর তথ্য একসঙ্গে মিলিয়ে ঢাকা থেকেই মাত্রা ও উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হবে। তবে আরও একটি সিসমোমিটার সেন্সর স্থাপন করা হলে বিশ্বের যেকোনো স্থানের ভূমিকম্পের তথ্য রাজশাহীতে বসেই মিলবে।
এক প্রশ্নের জবাবে আশরাফুল আলম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীতে ক্রমশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। এই অবস্থায় সরকার রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন আবহাওয়া অফিস আধুনিকায়ন করছে। এটি অবশ্যই যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। এর উপর গত বছরের আগস্টে মন্ত্রিপরিষদে ‘আবহাওয়া বিষয়ক আইন, ২০১৬’ পাস হয়েছে। ফলে তাদের কার্যক্রমে আরও গতি এসেছে। এর মধ্য দিয়ে এতোদিন পর সংস্থাটি একটি আইনগত ভিত্তির উপর দাঁড়াতে যাচ্ছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৭
এসএস/জেডএস