মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে খনি ভূ-গর্ভের ১২০০ থেকে ১৪০০ ফুট নিচে অবস্থানকারী ধর্মঘটী ২৮৫ শ্রমিককে উপরে নিয়ে আসা হয়।
এর আগে কয়লা খনির সভাকক্ষে বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মীর মো. খায়রুল আলমের মধ্যস্থতায় পেট্রোবাংলা, খনি কর্তৃপক্ষ ও আন্দোলনকারী শ্রমিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক উপস্থিত ছিলেন-জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম, পেট্রোবাংলার পরিচালক (পরিকল্পনা) মো.আমিনুজ্জামান, খনির এমডি এসএম নুরল আওরঙ্গজেব, কোল মাইন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মহাব্যবস্থাপক (ডিএলও/ কোম্পানি সচিব) আবুল কাসেম প্রধানীয়াসহ খনির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
শ্রমিক পক্ষে ছিলেন-বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের উপদেষ্টা পার্বতীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফিজুল ইসলাম প্রামাণিক, শ্রমিক সভাপতি রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ানসহ ৩০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান বাংলানিউজকে জানান, বুধবার (১১ জানুয়ারি) খনি কর্তৃপক্ষ নিজ খরচে শ্রমিক নেতৃবৃন্দসহ ৫০ জন শ্রমিককে ঢাকা নিয়ে যাবে। সেখানে চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লাহসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।
বৈঠকে শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম, পেট্রোবাংলার পরিচালক (পরিকল্পনা) মো.আমিনুজ্জামানসহ খনি কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্বাস দেওয়ায় অবস্থান ধর্মঘট স্থগিত করা হয়।
বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এসএম নুরল আওরঙ্গজেব বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দীর্ঘদিন ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১ হাজার ৪১ জন খনি শ্রমিক কয়লা খনিতে কাজ করে আসছেন। তাদের দৈনিক মজুরি দেওয়া হয় সারফেজে ২৯৭ টাকা এবং ভূ-গর্ভে ৩৫০ টাকা মাত্র। মাসে একজন শ্রমিক ১৮-২০ দিনের বেশি কাজ করতে পারেন না। ফলে মাস শেষে তাদের বেতন দেওয়া হয় ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে পরিবার নিয়ে তাদের অনেক কষ্টে দিনযাপন করতে হয়। খনির বর্তমান এমএন্ডপি চায়না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি’র সঙ্গে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে চুক্তি শেষ হবে। ইতোমধ্যে খনি কর্তৃপক্ষ এমএন্ডপি ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
২০১১ সালে খনি কর্তৃপক্ষ বলেছিল খনির এমএন্ডপি ঠিকাদারের সঙ্গে পরবর্তী চুক্তির সময় শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। কিন্তু তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। গত কয়েক মাস ধরে বারবার চিঠি দিয়ে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য আহবান জানানো হলেও খনি কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি।
খনি কর্তৃপক্ষের নানা টালবাহানার মুখে রোববার (৮ জানুয়ারি) দুপুর থেকে খনি ভূ-গর্ভে ২৮৫ জন, সারফেজে সাড়ে ৪০০ জন সহ ১ হাজার ৪১ শ্রমিক নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৭
আরএ