ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সিটিং চিটিংয়ে বিপাকে যাত্রীরা

উর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৭
সিটিং চিটিংয়ে বিপাকে যাত্রীরা সকালবেলা লোকাল বাস হয়ে যায় সিটিং বাস

ঢাকা: সিগনাল ছাড়লেই বাসের দিকে ছুটে যাচ্ছেন বিপুলসংখ্যক যাত্রী। কিন্তু খুব কমসংখ্যক যাত্রীই বাসে উঠতে পারছেন। কারণ, লোকাল বাসের একটা বড় অংশই সকালবেলা হয়ে উঠছে সিটিং সার্ভিস। বাড়তি ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে। লোকাল বাসের এই ‘সিটিং চিটিংয়ে’ বিপাকে পড়ছেন যাত্রীরা।

বুধবার (১১ জানুয়ারি) সকালে এমন চিত্র দেখা যায় ফার্মগেট এলাকায়। সাধারণত ৮, ৩ ও ১২ নম্বর রাজধানীতে লোকাল বাস সার্ভিস হিসেবেই চলাচল করে।

কিন্তু সকালে যেহেতু কর্মব্যস্ত মানুষের চাপ বেশি, সেই সুযোগ নিয়ে এসব বাসও তখন হয়ে ওঠে সিটিং বাস। যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়িতি ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে অবৈধ এসব সিটিং বাস।

মতিঝিলে ফুটপাতে ইলেকট্রনিক্স খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রি করেন রাসেল। থাকেন কারওয়ান বাজারের একটি মেসে। সকাল ৮টা থেকে ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়িতে উঠতে পারেননি তিনি।

বাসে চড়তে না পেরে বিরক্ত রাসেল বাংলানিউজকে বলেন, সারাদিন ৮ নম্বর বাস লোকাল হিসেবে ফার্মগেট থেকে মতিঝিল যায় সেগুলোই এখন থামছে না। বলছে সিটিং সার্ভিস। তাহলে ফার্মগেট বা বাংলামোটর থেকে যেসব যাত্রী মতিঝিল বা ওই এলাকায় যাবেন তাদের অবস্থা কী হবে? তারা কি কাজে যাবে না?

অন্যদিকে উত্তরার এক বায়িং হাউজের কর্মকর্তা জুবায়ের ইসলাম ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে ঘণ্টা খানেক দাঁড়িয়ে থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত বাসে উঠতে না পারায় হতাশ।

তিনি বলেন, সাধারণত সিটিং বাসগুলো পল্টন এলাকা থেকে ভরে যায়। তাই যেতে হয় লোকালেই। কিন্তু অফিস টাইমে লোকাল বাসও গেট বন্ধ করে দিয়ে সিটিং হয়ে যাচ্ছে। ১৫ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা চাচ্ছে। ৩০ টাকা দিতে চাইলেও লাভ নেই। কারণ, গেট তো আটকানো। অফিস টাইমে তারাও নাকি সিটিং।

লোকাল বাসের সিটিং প্রতারণা রোধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জিসান হাবিব বলেন, সকাল বেলাটা মানুষকে যানবাহনের জন্য যে ঝক্কি পোহাতে হয় তা তার সারাদিনের কর্মক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রশাসন যেসব পরিবহনকে লোকাল হিসেবে লাইসেন্স দিয়েছে তারা তাদের ইচ্ছেমতো যখন তখন সিটিং সার্ভিস হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নয় তো সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমবে না।

আবার অন্যদিকে সিটিংয়ের ভাড়া নিলেও অনেক বাস যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে লোকালের মতো করেই। মোহাম্মদপুর থেকে ডেমরাগামী স্বাধীন বাসের যাত্রী সুমী বলেন, ৫ টাকার ভাড়া নিলো ১৫ টাকা। বললো নাকি সিটিং ভাড়া। কিন্তু সিটের বাইরে লোক দাঁড়িয়ে আছে অন্তত ২০ জন। ভাড়া নেওয়ার সময় সিটিং আর সার্ভিসের বেলায় লোকাল!

মূলত চাহিদার তুলনায় গণপরিবহন কম থাকায় এ ধরনের সঙ্কট তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন যাত্রীরা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যমতে, জনসংখ্যার দিক থেকে রাজধানীতে সাড়ে ৭ হাজার বাস-মিনিবাসের প্রয়োজন। বর্তমানে রাজধানীতে বাস-মিনিবাস চলছে সাড়ে তিন হাজারের কিছু বেশি। গত ১০ বছরে ১৬৬টি রুটে ৫ হাজার ৪১৯টি বাস-মিনিবাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও প্রায় অর্ধেকই এখন ঢাকার রাস্তায় নেই। বর্তমানে রাজধানীতে ৯২টি কোম্পানির প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাস চলাচল করছে। ১৬৬ রুটের মধ্যে ১১২ রুটে কোনো বাস নেই। ১২টি রুটে চলছে মাত্র একটি কোম্পানির বাস।

তবে মিরপুর থেকে গুলিস্তান বা যাত্রাবাড়ী রুটে কয়েকটি কোম্পানির বাস চলাচল করতে দেখা যায়। এছাড়া রাজধানীতে চলমান বেশিরভাগ বাসেরই ফিটনেস নেই। দরজা-জানালা ভাঙা, বসার সিট ছেঁড়া ও ভাঙা। ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিদ্যমান বাস-মিনিবাস মেরামতেও বিনিয়োগ করছে না পরিবহন কোম্পানিগুলো।

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৬
ইউএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।