ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভাস্কর্যের নাম নেই, ভাস্করকে লেখা হয়েছে ‘ভাষ্কর্য শিল্পী’!

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৭
ভাস্কর্যের নাম নেই, ভাস্করকে লেখা হয়েছে ‘ভাষ্কর্য শিল্পী’! ইসি ভবনের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্য/ছবি: কাশেম হারুণ

ঢাকা: স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর নিজস্ব ভবন পেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেখানে বিখ্যাত ভাস্কর মৃনাল হকের তৈরি একটি ভাস্কর্যও স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত এ ভাস্কর্যটির কোনো নাম দেওয়া হয়নি। আবার ভাস্কর মৃনাল হককে বলা হয়েছে ‘ভাষ্কর্য শিল্পী’!

রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ গত ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ে ইসি ভবনের উদ্বোধন করেন। এখন পরিকল্পনা কমিশনের ভাড়া ভবন থেকে নতুন ভবনে স্থানান্তরে ইসির শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নিজস্ব ভবনে অফিস করবেন কর্মকর্তারা। আর এজন্যই সব কাজ তড়িঘড়ি করে সম্পন্ন করা হচ্ছে।

ইসির উপ-সচিব পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, নির্বাচন ভবনের সামনের ভাস্কর্যটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর নির্মিত। দৃষ্টিনন্দন এ ভাস্কর্যের কাজে এমন গাফিলতি কাম্য নয়। নাম ছাড়া ভাস্কর্য কখনও পূর্ণতা পায় না। দ্রুতই বিষয়টি সমাধান করা উচিত।

এদিকে ভাস্কর মৃনাল হকের পরিচিতিতেও রয়েছে ভুল। ভাস্কর্যের বেদীর সম্মুখভাগে পাথরে খোদাই করে লেখা হয়েছে- ‘ভাষ্কর্য শিল্পী-মৃনাল হক’। ‘ভাষ্কর্য শিল্পী’ বলতে কিছু নেই। সেটা হবে ভাস্কর। ভাস্কর বানানটিও লেখা হয়েছে ভুল।
ইসি ভবনের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্যে ভাস্করের নামে ভুল/ছবি: কাশেম হারুণ
সংস্থাটির খোদ কর্মকর্তারাই বলছেন, খামখেয়ালিপনা, গাফিলতি আর তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করার নজির বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বরাবরই ছিল। মেয়াদ পূর্তির দ্বারপ্রান্তে এসে আবারও বিষয়টি প্রমাণিত হলো।

পশ্চিম আগারগাঁওয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনের উত্তর পাশেই ইলেকশন রিসোর্স সেন্টার (ইআরসি)। এ সেন্টারের আবার দু’টি অংশ। একটি নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, অন্যটি নির্বাচন ভবন। এ ভবনের মূল ফটকের বাম পাশেই স্থাপন করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত সোনালি রঙের দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যটি।

১০ ফুট উঁচু বেদীতে শোভা পাচ্ছে ১২ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্যটি। সোনালি রঙের ভাস্কর্যটিতে সাত শ্রেণী-পেশা থেকে অস্ত্রহাতে সাতজন মুক্তিযোদ্ধাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। সোনালি রঙটা যেন বাংলাদেশের ইতিহাসে গোল্ডেন বয়েজ অ্যান্ড গার্লসদের প্রতীক হয়েই ধরা দিয়েছে। তবে ভুল আর ঘাটতিতে যেন মলিন হয়েছে সব সৌন্দর্য।
ইসি ভবন/ছবি: কাশেম হারুণ
এ বিষয়ে ভাস্কর মৃনাল হক বাংলানিউজকে বলেন, দেশটা স্বাধীন হয়েছে বলেই স্বাধীন নির্বাচন কমিশন দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারছে। তাই নির্বাচন ভবনের সামনে মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতা আন্দোলনের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

ভাস্কর্যটিতে কৃষক, ছাত্র, শিক্ষক, জনতা, বুদ্ধিজীবী, সেনা ও নারী; এই সাত শ্রেণী-পেশার সাতজনকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন তিনি। কেননা, মুক্তিযুদ্ধে সব শ্রেণি-পেশার মানুষেরই অংশগ্রহণ ছিল। সাদা রঙে ধুলো পড়লে ভাস্কর্যের নান্দনিকতা নষ্ট হয়। তাই সোনালি রং ব্যবহার করা হয়েছে। আর সাধারণ মানুষ যাতে সহজেই বুঝতে পারে তাই এটি সড়কের পাশেই স্থাপন করা হয়েছে।

ভাস্কর্যের নাম না দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তড়িঘড়ি করে এটা প্রস্তুত করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি ভবন উদ্বোধনের আগের রাতেও কাজ করতে হয়েছে। এছাড়া এর নাম নির্বাচন কমিশনই ঠিক করবে।
ইসি ভবনের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্য/ছবি: কাশেম হারুণ

তার পরিচিতিতে লেখা ‘ভাষ্কর্য শিল্পী’ লেখাটিও ঠিক করা উচিত বলে মনে করে তিনি।

এ বিষয়ে ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ভাস্করের পরিচিতিতে ভুল থাকা উচিত নয়। বিষয়টি ঠিক করা হবে। এছাড়া ভাস্কর্যের নামও দেওয়া হবে। শিগগিরই এ বিষয়ে বৈঠক করা হবে।

২০০৭ সালে পশ্চিম আগারগাঁওয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাশে নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ২ একর ৩৬ শতাংশ জমি নির্বাচন কমিশনকে বরাদ্দ দেয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ২১৩ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এ ভবন নির্মাণের কাজ ২০১১ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগের কিছু স্থাপনা সরাতে দেরি হওয়ায় ভবনটির কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৭
ইইউডি/আরআর/এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।