ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘টিকিটে সিট নিতেও মামু লাগে’

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৭
‘টিকিটে সিট নিতেও মামু লাগে’ সিট খালি থাকলেও যাত্রীদের অনেককেই দেওয়া হয়েছে স্ট্যান্ডিং টিকিট

সিলেট: ‘খালি (শুধু) নিয়ম খরিয়া (করে) লাইনো উবাইলে (দাঁড়ালে) অয় (হয়) না, ‘সিটসহ টিকিট পাইতেও মামু (মামা) লাগে’, এমন মন্তব্য সিলেট রেলওয়ে স্টেশন টিকিট কাউন্টারে টিকিটের জন্য অপেক্ষমাণ চল্লিশোর্ধ্ব জনৈক যাত্রীর। তার মতে, শুধু চাকরিতে নয়, আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটে সিট পেতেও মামু লাগে।

লাইনে দাঁড়িয়ে যখন স্ট্যান্ডিং টিকিট কিনতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের তখন, জনৈক যাত্রী কর্মকর্তার বরাত দিয়ে নিয়ে গেলেন পাঁচটি টিকিট। আরেক যাত্রী এসে ‘ঘ’ বগিতে ১৬-২০ নম্বর সিটের টিকিট খালি আছে বলতেই টিকিট কালেক্টর লাইনে অপেক্ষমাণদের রেখে ওই যাত্রীকে কাঙ্ক্ষিত টিকিট দিয়ে দেন।

 

রেলওয়েতে এ অব্যবস্থাপনা ও বিমাতাসূলভ আচরণে ক্ষুব্ধ সাধারণ যাত্রীরা। এমন অবস্থা এখন নিত্যদিনের! তবে সংশ্লিষ্টরা জানালেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ও ঢাকায় সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার জন্যই ট্রেনের সিটের চাপ সামলাতে তাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।  

নির্ধারিত সময় সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে সিলেট স্টেশন ছাড়ে ঢাকাগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস। ট্রেনে রাজউদ্দিন নামের জনৈক যাত্রী নিজের টিকিট দেখিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কাউন্টারে গিয়ে টিকিট চাইতেই নাই সূচক মুখস্থ শব্দটি বেরিয়ে এলো। কি আর করা স্ট্যান্ডিং টিকিট নিয়ে তিনি উঠলেন ট্রেনে। তবে তার সামনেই অনেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সিট সম্বলিত টিকিট নিলেন, দাবি সিলেটের ছাতকের এ বাসিন্দার।  

তার কথায় সুর মিলিয়ে ঢাকাগামী আব্দুর রাজ্জাক নামের আরেক যাত্রী বলেন, পুরো ট্রেন ঘুরে দেখুন, কত সিট খালি। আর কাউন্টারে গেলে টিকিট নেই।  

তিনি বলেন, আমার মতো অনেকে কাউন্টারে গিয়ে অনুনয়-বিনয় করেও সিটসম্বলিত টিকিট পাননি। কেউ কেউ বাড়তি টাকা দিয়ে টিকিটের সঙ্গে কিনে নিয়েছেন সিটও! 

সরেজমিন ট্রেনের একটি বগিতে উঠে দেখা যায়, ৬৮ সিটের বগিতে হাতে গোনা মানুষ বসেছেন ১০ জন। একই অবস্থা অন্য বগিগুলোরও। সিট খালি থাকলেও যাত্রীদের অনেককেই দেওয়া হয়েছে স্ট্যান্ডিং টিকিট।  

সকালের ট্রেন, তাই কলেজ শিক্ষকদের কয়েকজন বসেছেন ‘ট’ বগিতে। যাবেন কুলাউড়া। প্রতিনিয়ত আসা-যাওয়া করেন, তাই তাদের টিকিট করতে হয় না! গল্পের ছলেই এমনটি বলেন জনৈক কলেজ শিক্ষক।  

ট্রেনে ওঠার আগে স্টেশনের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম’স (সিএনএস) এর অপারেশনস মেইন্টেনেন্স বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তা নিজামউদ্দিনকে ঘিরে আছেন বেশ ক’জন যাত্রী। তিনি অনলাইনে টিকিট ছেড়ে উপস্থিত কয়েকজনকে বলেন, স্টেশনের কাউন্টার থেকে তার কথা বলে টিকিট নেওয়ার জন্য। অনেককে আবার টিকিট নাই বলেও বিদায় করছেন।  

সিট আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভার্সিটিতে পরীক্ষা। তাই আগেই সিট বিক্রি হয়ে গেছে। তবে জয়ন্তিকার এ ট্রেনে সিট ‘এভেইলেবল’, কাউন্টারে চাইলেই পাবেন।  

সিলেট রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কাজি শহিদুর রহমান বলেন, মূলত পরীক্ষার কারণে চাপ যাচ্ছে। সকালের ট্রেনে এমন অবস্থা! জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকালের ট্রেনে সিটসহ টিকিট দেওয়া হচ্ছে। টিকিট নিতে কাউকে ধরা লাগে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন অনলাইনে টিকিট যে কেউ কেটে নিতে পারেন। শুধু ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়।  

তবে তার কথার সঙ্গে বাস্তবতার বেশ ফারাক। বছরের পর বছর যাত্রীদের এভাবে আশ্বস্ত করে পার পেয়ে গেলেও এ থেকে মুক্তি চান ভুক্তভোগীরা! 

বাংলাদেশ সময়: ১২২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৭
এনইউ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।