ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে জাবির ৬ বাসের কোটি টাকার যন্ত্রাংশ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৭
অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে জাবির ৬ বাসের কোটি টাকার যন্ত্রাংশ জাবিতে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা বিআরটিসি বাস/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: ৬ বছর ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসন ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) মধ্যে চলছে চিঠি চালাচালি। এ সময়েই মধ্যে মেরামত ও তদারকির অভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার দেওয়া দুটি বাসসহ ৬টি সিএনজিতে রূপান্তরিত একতলা বাস নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। মেরামতের উদ্যোগ তো নেইই বরং উন্মুক্ত জায়গায় বাসগুলো ফেলে রাখায় চুরি হয়ে যাচ্ছে বাসের মূল্যবান যন্ত্রাংশ। এতে খোয়া যাচ্ছে সরকার অর্থাৎ জনগণের লাখ লাখ টাকা।

শুধু কি তাই! পড়ে থাকা বাসের ভাড়া বাবদ এই কয় বছরে বিআরটিসির তরফ থেকে ১ কোটি ২৯ লক্ষ ২৭ হাজার ৩০৪ টাকা দাবি করে সর্বশেষ গতমাসে চিঠি পাঠানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।
জাবিতে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা বিআরটিসি বাস/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমএ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিআরটিসি একে অপরের উপর দায় দিলেও সরকারের কোটি টাকা নষ্ট হওয়ার পিছনে উভয়েরই অবহেলা আর দায়িত্বহীনতাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে দু’টি বাস উপহার হিসেবে দেন। তার এক-দুই মাস পরেই বিআরটিসি’র পক্ষ থেকে আরো ৪টি সিএনজি একতলা বাস দেওয়া হয়। এই বাসগুলোকেও সরকারের অনুদান মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটেও এর ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। কিন্তু তার কয়েকমাস পরেই বিআরটিসি’র পক্ষ থেকে চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক স্বল্প ভাড়ায় (দৈনিক বাস প্রতি ১৪০০ টাকা ও ভ্যাট-২৬৬টাকা) ৪টি বাস বরাদ্দ দেওয়া হল।

বাসগুলো আসলে কার? এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিআরটিসির মধ্যে দীর্ঘ ৬ বছর ধরে চিঠি আদান-প্রদান চলছে। সর্বশেষ গত ১৮ নভেম্বর বিআরটিসি থেকে প্রেরিত চিঠিতে জানানো হয়, ২০১১ সালের ৫ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১ কোটি ২৯ লক্ষ ২৭ হাজার ৩০৪ টাকা ৪টি বাসের ভাড়া বাবদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রদান করতে হবে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পক্ষ থেকে গত বছরে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে ভাড়া মওকুফ করার জন্য আবেদন করা হলেও মন্ত্রণালয় থেকে কোন ইতিবাচক সাড়া পায়নি তারা।
জাবিতে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা বিআরটিসি বাস/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
সর্বশেষ ৬ নভেম্বর বাসগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে এই মর্মে পরিবহন অফিস থেকে বিআরটিসি বরাবর চিঠি পাঠালেও তারা সেটি গ্রহণ করেনি বলে পরিবহন অফিসের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান।

পরিবহন অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, ২০১১ সালে ৬টি বাস দেওয়া হয় যার প্রতিটির মূল্য ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৬টি বাসের মূল্য ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সরবরাহের এক বছরের মাথায় বাসগুলো নষ্ট হতে শুরু করে। ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে ৫টি বাস নষ্ট হয়ে পড়ে। আর একটি কোন রকম জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। কিন্তু চিঠি চালাচালির কারণে বাসগুলো আর মেরামত করা হয়নি। বর্তমানে বাসগুলো মেরামতের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কারণ অধিকাংশ যন্ত্রাংশ এখন পাওয়া যাচ্ছে না।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশমাইলে পানির ট্যাঙ্কির কাছে মোট ৮টি বাস নষ্ট হয়ে এলোমেলোভাবে পড়ে রয়েছে। তার মধ্যে বাসের গায়ে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্যে লেখা ৫টি বাস রয়েছে। বাসগুলো মেরামতের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। বাসের বডির অংশ ও গ্লাসগুলো ভেঙ্গে পড়েছে। ধুলাবালি পড়ে জং ধরে গেছে। অনেক মূল্যবান যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যাওয়ার প্রমাণও পাওয়া গেছে।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বাসগুলো এখানে রাখা আছে। অনেক মূল্যবান যন্ত্রাংশ খোয়া গেছে। এ নিয়ে কারও তো কোন মাথাব্যথা নাই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, এই বাসগুলো নিয়ে খুব বিপাকে রয়েছি। সরকার এগুলো বিক্রিও করতে দেয় না, নিয়েও যায় না।

বাস ভাড়া বাবদ বিআরটিসি’র পক্ষ থেকে কোটি টাকা ভাড়া ধার্য করা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রেজিস্ট্রারকে জিজ্ঞাসা করো।
জাবিতে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা বিআরটিসি বাস/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, এগুলো তো অনুদানের বাস ছিল। এত টাকা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তবে এ বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করে সমাধান করা যেতে পারে।

বাসের যন্ত্রাংশ চুরি ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তর দু’জনেই এড়িয়ে যান।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভূঁইয়াকে (অতিরিক্ত সচিব) একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।  

পরে বিআরটিসির  পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মুহাম্মদ আমজাদ হোসাইনকে ফোন করা হলে তিনি বাইরে আছেন এবং পরে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৭
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।