ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

না খেতে পেয়ে মরতে বসেছে চিত্রা হরিণগুলো

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৭
না খেতে পেয়ে মরতে বসেছে চিত্রা হরিণগুলো শারীরিক অবস্থার অবনতির সঙ্গে সঙ্গে বেশিরভাগ হরিণই মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। ছবি: বাংলানিউজ

দিনাজপুর: না খেতে পেয়ে মরতে বসেছে দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যান চিড়িয়াখানার ৪৭টি চিত্রা হরিণ।

গত ১০ মাস ধরে খাবারের কোনো বরাদ্দ না আসায় অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। ফলে পুষ্টিহীনতা ও রোগ ভর করেছে শরীরে।

দিন দিন কঙ্কালসার ও দুর্বল হয়ে পড়ছে পাঁজরের হাড় জাগা চিত্রা হরিণগুলো।

শারীরিক অবস্থার অবনতির সঙ্গে সঙ্গে বেশিরভাগ হরিণই মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকলেও বরাদ্দের অভাবে পর্যাপ্ত খাবার দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক-বাহক রামসাগর দিঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জাতীয় উদ্যানের ভেতরে রয়েছে চিড়িয়াখানাটি। সারা বছরই দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় থাকে দিঘি-উদ্যান-চিড়িয়াখানায়।

সরেজমিনে চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা গেছে, ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়ছে এক সময়ের দূরন্ত ও চঞ্চল চিত্রা হরিণের দলটি। তাদের মধ্যে আগের মতো প্রাণচাঞ্চল্য নেই। তবে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের এদিকটাতে এলেই দলবেধে খাঁচার ওপার থেকে ছুটে আসছে। খাঁচার ফাঁক দিয়ে মুখ বাড়িয়ে করুণ দৃষ্টিতে খাবার চাইছে। দর্শনার্থীরা বাদাম-কলাসহ সামান্য যে খাবার মুখে তুলে দিচ্ছেন, তাতে অসহায় হরিণগুলোর ক্ষুধার সামান্যটুকুও মিটছে না।

চারপাশের গাছের লতা-পাতা দিনে তিনবেলা খাইয়ে কোনোমতে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে হরিণগুলোকে।  ছবি: বাংলানিউজক্ষুধার জ্বালায় চিত্রা হরিণের দলটি খাঁচার ভেতরে ছুটছিল এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। হঠাৎ পূর্ব-উত্তর কোণের দরজা দিয়ে এক ভ্যান বিভিন্ন গাছের পাতা নিয়ে ঢোকেন চিড়িয়াখানার পরিচর্যাকারী। ভ্যানের কাছে ছুটে যায় ক্ষুধার্ত হরিণের দলটি। ভ্যান থেকে পাতা নামানোর সঙ্গে সঙ্গে মুহূর্তেই খেয়ে শেষ করে ফেলে।

হরিণগুলোর পরিচর্যাকারী বাবুল রায় বাংলানিউজকে জানান, চিড়িয়াখানা স্থাপনের পর ছয়টি চিত্রা হরিণ আনা হয়েছিল। সঠিক পরিচর্যায় সেগুলো থেকে এখন ৪৭টি হরিণ হয়েছে। ৪৭টি হলেও সরকার ১০ মাস আগে সর্বশেষ খাবার বরাদ্দ দেয় আগের ৬টির হিসেবেই। এরপর থেকে সে খাবার আসাও বন্ধ রয়েছে। এ দীর্ঘ সময়ে রামসাগর দিঘির চারপাশে থাকা বিভিন্ন গাছের লতা-পাতা দিনে তিনবেলা খাইয়ে কোনোমতে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে হরিণগুলোকে।

এর ওপরে ১২টি মা হরিণ কিছুদিনের মধ্যেই সন্তান প্রসব করবে। তাদেরকেও প্রয়োজনীয় বাড়তি খাবার দেওয়া প্রয়োজন। ঠিকমতো পুষ্টিকর খাবার না পাওয়ায় পুষ্টির অভাবে দিন দিন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছে হরিণগুলো। শারীরিক অবস্থা এখন খুবই খারাপ। যেকোনো সময় হরিণগুলোর মৃত্যুর মতো অঘটন ঘটতে পারে।

দর্শনার্থী রমেশ চন্দ্র বলেন, হরিণগুলোর প্রায় সবক’টির পাঁজরের হাড় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কঙ্কালসার প্রাণীগুলোকে দেখতেও খারাপ লাগছে। ক্ষুধার্ত হরিণের দলটি মারা গেলে সে দায় কে নেবে? সরকারি এই সম্পদ রক্ষায় খাদ্য সরবরাহে দ্রুত বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন।

দিনাজপুর বন বিভাগের কর্মকর্তা ও রামসাগর জাতীয় উদ্যানের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুস সালাম তুহিন জানান, চিকিৎসকরা বলছেন, পুষ্টিহীনতায় হরিণগুলোর মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। এদেরকে দ্রুত সুস্থ করতে হলে পরিমিত ও পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।

তিনি জানান, চিত্রা হরিণগুলোর খাদ্যের বরাদ্দ চেয়ে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই বরাদ্দ পাওয়া যেতে পারে বলেও আশাবাদী তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।