ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বুদ্ধিজীবী হত্যা নিয়ে ট্রাইব্যুনালের রায়ে যা লেখা  

ইলিয়াস সরকার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৭
বুদ্ধিজীবী হত্যা নিয়ে ট্রাইব্যুনালের রায়ে যা লেখা   ফাইল ছবি

ঢাকা: বিজয়ের প্রাক্কালে ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে খুঁজে খুঁজে সেরা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার ঘটনায় বিচারের সম্মুখীন হয়েছেন কয়েকজন ঘাতক। তার মধ্যে কারও ফাঁসি হয়েছে। আবার কাগজে কলমে দু’জন রয়েছেন পলাতকও।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে সেই কলঙ্কিত ঘটনার কিছু চিত্র উঠে এসেছে সংবাদপত্র কিংবা কোনো লেখকের লেখায়। ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই জামায়াতের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মোজাহিদের রায়ে এসব লেখা বা সংবাদ স্থান পেয়েছে।

ওই রায়ে মোজাহিদের ফাঁসির দণ্ড হয়েছে। যেটি উচ্চ আদালতে বহাল থাকার পর কার্যকর করা হয়েছে।  
 
রায়ে “৭১ এর দশমাস” বইয়ের একটি অংশ উদ্ধৃত করা হয়। সেখানে বলা হয়,  “পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী চরম দক্ষিণপন্থী উগ্র সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ট গেস্টাপো আল-বদর বাহিনীর ঘাতকের ঢাকা শহরে যুদ্ধ ও কারফিউর মধ্যে ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে খুঁজে খুঁজে সেরা বাংগালী অধ্যাপক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, সহিত্যিকদের রায়েরবাজার ও মীরপুর অবাংগালী অধ্যুষিত এলাকায় নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। উল্লেখ্য পাক সামরিক অফিসারদের আদেশে এ জঘন্য হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন হলেও এ হত্যার পরিকল্পনা তালিকা প্রণয়ন, আত্মগোপনকারী বুদ্ধিজীবীদের খুঁজে বের করা, তাদের ধরে নিয়ে নৃশংস অত্যাচারের মধ্য দিয়ে হত্যা করার কাজটি আল-বদর ও রাজাকার বাহিনীর বাংগালী সদস্য ও তাদের নেতাদের দ্বারা সম্পন্ন হয়। ”
 
“একাত্তরের ঘাতক দাললরা কে কোথায়” বইটির কিছু অংশ থেকে বলা হয়, “সেই অতি নৃশংস হত্যাযজ্ঞ সম্পন্ন করার জন্য আলবদররা ব্যাপকভাবে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ করা শুরু করে ১০ ডিসেম্বর থেকে। কার্ফু এবং ব্লাক আউটের মধ্যে জীপে করে আলবদররা দিন রাত বুদ্ধিজীবীদের বাড়ী বাড়ী যেয়ে তাদেরকে প্রথমে সারা গায়ে কাদা মাখা একটি বাসে তোলে। এরপর বাস বোঝাই বুদ্ধিজীবী সহ নানা স্তরের বন্দীকে প্রথম মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজের আলবদর হেডকোয়ার্টারে নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। ................... আল-বদরদের এই অপহরণ স্কোয়াডের নেতৃত্ব দিত হয় কোন আল-বদর কমান্ডার নতুবা পাকবাহিনীর অনধিক ক্যাপ্টেন মর্যাদার কোন অফিসার। সম্ভবত পাকবহিনীর নিজস্ব টার্গেট বুদ্ধিজীবীদের অপহরণের ব্যাপারে নিশ্চিত হবার জন্যই পাক সেনা অফিসার অপহরণ স্বোয়াডের নেতৃত্ব দিত। ”
 
“সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ তারিখে রাজাকারবাহিনীর প্রধান ও শান্তি কমিটির লিয়াজো আফিসারকে নিয়ে গোলাম আজম মোহাম্মদপুরে ফিজিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে যে রাজাকার ও আল-বদর শিবির পরিদর্শন করেছিলেন সেটি ছিল আল-বদরদের হেডকোয়ার্টর। স্বাধীনতামনা বুদ্ধিজীবীদের বেশীরভাগকে আল-বদররা প্রথমে চোখ বেঁধে এখানেই নিয়ে আসে। নির্যাতনের পর এখান থেকেই তাদের রায়ের বাজারে ও মীরপুরের শিয়াল বাড়িসহ অন্যান্য বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়। ”  
 
একই বইয়ের আরেকটি  অংশ থেকে বলা হয় “ .................27/12/71 তারিখের দৈনিক আজাদে বিরাট হেড লাইনে বড় বড় হরফে লেখা “আর একটা সপ্তাহ গেলেই ওরা বাংগালী বুদ্ধিজীবীদের সবাইকে মেরে ফেলত ---বদর বাহিনীর মাস্টার প্লান” শীর্ষক দীর্ঘ প্রতিবেদনটির অংশ বিশেষ এখানে উদ্ধৃত হল-- ’...................হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর নির্বচার গণহত্যায় সক্রিয় সহযোগীতা করেই জামাতে ইসলামী ক্ষান্ত হয়নি--- বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করার উদ্দেশে তারা গড়ে তুলেছিল এক সশস্ত্র গুপ্ত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ---বদর বাহিনী নামে যা সর্বসাধারণের কাছে পরিচিত ছিল। পকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের শেষ মুহূর্তে এই বদর বাহিনী বহুসংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে রাতের আঁধারে ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে---এ খবর এখন সবাই জেনে গেছ। .............”
 
রায়ে ইত্তেফাকের একটি সংবাদ বিষয়ে বলা হয়,  “বদর দিবসের সমাবেশে ইসলামী ছাত্রসংঘ সভাপতির ভাষণ” published in The Daily Ittefaque, 8 November 1971 narrates that “এপিপি ও পিপিআই পরিবেশিত খবরে বলা হয়, আল বদর দিবস উপলক্ষে গতকাল (রবিবার) বিকালে বায়তুল মোকররম প্রাংগনে ইসলামী ছাত্রসংঘের উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে পাকিস্তানের সংহতি ও অখন্ডতা রক্ষায় জনগণের দৃঢ় সংকল্পের পুনরুক্তি করা হয়। ................. ভারতীয় ও দুষ্কৃতিকারীদের হামলা প্রতিরোধে দৃঢ় সংকল্প ঘোষণা করিয়া বিভিন্ন শ্লোগান দেওয়া হয়। .................... সভাপতি জনাব আলী আহসান মোহাম্মদ মোজাহিদ বক্তৃতা প্রসংগে বলেন যে, আজ (সোমবার) হইতে কোন পাঠাগার হিন্দু লেখক ও হিন্দু প্রভাবিত মুসলিম লেখকদের লিখিত কোন পুস্তক রাখিতে দেওয়া হইবে না। তিনি বলেন যে, ইসলামী ছাত্র সংঘের স্বেচ্ছাসেবকগণ অনৈসলামিক প্রভাব হইতে মুসলমানদের রক্ষার জন্য পাঠাগারে ঐ সব বই পাইলে তাহা পুড়াইয়া দিবে। জনাব মুজাহিদ বলেন, বিশ্বের মানচিত্র হইতে ভারতের নাম মুছিয়া না ফেলা পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত থাকিবে। .............. ”

বাংলাদেশ সময়: ০৪১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪,২০১৭
ইএস/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।