ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ধুঁকে ধুঁকে চলা রাঙামাটি চিড়িয়াখানা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৭
বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ধুঁকে ধুঁকে চলা রাঙামাটি চিড়িয়াখানা! ধুঁকে ধুঁকে চলছে রাঙামাটি মিনি চিড়িয়াখানা। ছবি: বাংলানিউজ

রাঙামাটি: নিজেদের উদাসীনতায় বেহালদশায় ফেলার পর এবার মিনি চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলোকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বিক্রি করে দিচ্ছে রাঙামাটি জেলা পরিষদ। ফলে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যমটি বন্ধের আশঙ্কায় ক্ষুব্ধ জেলাবাসী।

অবশ্য ধুঁকে ধুঁকে চলতে থাকা চিড়িয়াখানাটিতে দর্শনার্থীও আসেন না তেমন একটা। ফলে লোকসানি বিনোদনকেন্দ্রটিকে বোঝা মনে করছে জেলা পরিষদ।

       

রাঙামাটিবাসী বলছেন, মনোমুগ্ধকর পরিবেশে চিড়িয়াখানাটি স্থাপন করেছে জেলা পরিষদ। ফলে শুরু থেকে অনেকদিন পর্যন্ত তাদের কাছে এটি ছিল অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র। ছুটির দিনে চাকরিজীবী থেকে শুরু করে শিশু-কিশোরেরা হরিণ-বানরের সঙ্গে সখ্যতা গড়তে যেতেন। অবসরে বিনোদন পেতে ঘুরে আসতেন অনেকে। রাঙামাটির পর্যটন শিল্পেও অবদান রাখছিল চিড়িয়াখানাটি।
 
কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন কার্যক্রমে ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে চলে গেছে সেটি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, চিড়িয়াখানাটির তত্ত্বাবধানে নিয়োগ পাওয়া জেলা পরিষদের দুই কর্মচারী রত্ন জ্যোতি চাকমা ও গোলমণি চাকমা দেখাশোনার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন না। উল্টো সেখানে মদ-জুয়ার আড্ডা বসিয়ে বাড়তি টাকা-পয়সা আয় করছেন।

নিয়মিত খাবার-পানি না পেয়ে দিন দিন দুর্বল, কৃশকায় ও শ্রীহীন হয়ে পড়েছে প্রাণীগুলো।  ছবি: বাংলানিউজসন্ধ্যা হলেই চিড়িয়াখানা ও আশেপাশের এলাকায় এসব মদ-জুয়ার আড্ডা বসে, চলে নানা ধরনের অপকর্ম ও  অনৈতিক কাজও। এসব কাজে সহায়তা দিয়ে ওই কর্মচারীরা মোটা অংকের টাকা নেন সমাজবিরোধীদের কাছ থেকে।

এসব কারণে দর্শনার্থীদের পরিবর্তে অপরাধীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে মিনি চিড়িয়াখানাটি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চিড়িয়াখানাটিতে প্রাণী বলতে রয়েছে একটি ভাল্লুক, তিনটি হরিণ, দু’টি সজারু, দু’টি বনবিড়াল, দু’টি অজগর, চারটি বানর, চারটি বনমোরগ, দু’টি খরগোশ। নিয়মিত খাবার-পানি না পেয়ে সেগুলোও দিন দিন দুর্বল, কৃশকায় ও শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। ঠিকমতো দেওয়া হয় না ওষুধ-টিকাও।

খাঁচাগুলোতে জমে আছে ময়লার স্তুপ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করায় জঙ্গলাকীর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়েছে আশেপাশেও।

চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা সোহেল-শিল্পী দম্পতি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা প্রায়ই প্রাণী দেখতে ও সময় কাটাতে এখানে আসি। কিন্তু দেখার মতো তেমন কোনো প্রাণী বা সময় কাটাতে বসার জায়গা নেই। চারপাশের নোংরা পরিবেশ চিড়িয়াখানাটিকে অস্বাস্থ্যকর করে তুলেছে’।

রাঙামাটি শহরের বাসিন্দা চুমকি বলেন, চিড়িয়াখানাটি ছিলো বিনোদনের প্রধান মাধ্যম। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এখন ধ্বংসের পথে। তারা যথাসময়ে ব্যবস্থা নিলে নতুন প্রাণ ফিরে পাবে এটি।

চারপাশের নোংরা পরিবেশ চিড়িয়াখানাটিকে অস্বাস্থ্যকর করে তুলেছে।  ছবি: বাংলানিউজজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা বলেন, ‘চিড়িয়াখানাটি আমাদের লোকসানে ফেলেছে। তাই এটিকে নিয়ে জেলা পরিষদের কোনো পরিকল্পনা নেই। প্রাণীগুলোকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বিক্রি করে দিতে বলা হয়েছে’।

চিড়িয়াখানাটিকে রক্ষায় বেসরকারি কারো মাধ্যমে পরিচালনা করা যায় কি-না- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকবার টেন্ডার দিয়েছি, কিন্তু কেউ দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ দেখাননি’।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।