হঠাৎ করে শীত বাড়ায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই ভর্তি হচ্ছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। বিশেষ করে নবজাতক ও বৃদ্ধরা ঠাণ্ডাজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বেশ কয়েক দিন ধরেই রাত-দিনের তাপমাত্রা ওঠা-নামা করছিলো। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে হঠাৎ করেই দিনের তাপমাত্রা কমে আসতে শুরু করেছে। তবে রাজশাহী আবহাওয়া অফিস বলছে, রাজশাহীতে তাপমাত্রা কমতে শুরু করলেও শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়নি। কিন্তু জানুয়ারি মাসের প্রথম দশকেই এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২৯ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহীতে তাপমাত্রা কমছে। ওই দিন রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পর আবার ০২ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বুধবার সেই তাপমাত্রা নেমে এসেছে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত আবহাওয়া কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, তাপমাত্রা কমেছে, কিন্তু এখনও রাজশাহীতে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়নি। সাধারণত ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। বুধবার বিভাগের নওগাঁ জেলার বদলগাছিতে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ এসব অঞ্চলে এরই মধ্যে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহে রাজশাহীর ওপর দিয়েও দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে আশরাফুল আলম বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রাজশাহীসহ গোটা উত্তরাঞ্চলেরও ওপর দিয়ে দুই-তিনটি মৃদু অথবা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে তাপমাত্রা ০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসবে। এছাড়া মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেলে আরও ২ ডিগ্রি কমে তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলিসয়াসে নেমে আসতে পারে। একই সঙ্গে ঘন কুয়াশাও পড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
এদিকে, বুধবার সূর্যের দেখা মিললেও তার তেজ নেই। ভোরে ছিন্নমূল মানুষগুলোকে খড়-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে। এছাড়া শীতের দাপট থেকে বাঁচতে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো ভিড় জমাচ্ছেন মহানগরীর পুরাতন কাপড়ের দোকানে। কম দামে শীতবস্ত্র নিচ্ছেন নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য। তবে সেখানেও সস্তি নেই। এবার বেড়েছে পুরনো শীতবস্ত্রের দামও।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আরিফুল হক জানান, বুধবার হাসপাতালের ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে জন্ম নেওয়া নবজাতক শিশুরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।
মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নেওয়ার পরপরই তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নবজাতক ওয়ার্ডে শিফট করতে হচ্ছে। এছাড়া ভর্তিকৃতদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যা বেশি। আক্রান্তদের বেশিরভাগই ডাইরিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, হৃদরোগ, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে রামেক হাসপাতালে যাচ্ছেন। এ সময় শিশু ও বয়স্কদের স্বাস্থ্য পরিচর্যায় বাড়তি যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দেন জরুরি বিভাগের এ চিকিৎসক।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৮
এসএস/ওএইচ/