ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আইফোন থেকে স্যামসাং, সবই মিলছে ফুটপাতে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৮
আইফোন থেকে স্যামসাং, সবই মিলছে ফুটপাতে! ফুটপাতে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল-ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: দামি কোনো বিখ্যাত ব্র্যান্ড কিংবা অখ্যাত সস্তা ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন কিনতে চাইলে যে কেউ নির্দিষ্ট কোনো বিপণিতে যাওয়ার কথাই ভাববেন। তবে এখন শুধু নামি-দামি শপিং মলেই নয়, রাজধানীর ফুটপাতেও মিলছে যে কোনো দামি ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন।

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা গুলিস্তানের পীরজঙ্গির মাজার থেকে নগর ভবনের দিকে ওসমানী উদ্যানের ফুটপাত ধরে হাঁটলেই যে কারও চোখ আটকে যাবে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শত-শত নতুন পুরাতন মোবাইলের পসরা সাজিয়ে বসে আছে দোকানিরা।


 
বিখ্যাত আইফোন থেকে স্যামস্যাং কিংবা হালের হুয়াওয়ে থেকে অপ্পো, হারিয়ে যেতে বসা নোকিয়ার বিভিন্ন মডেল কি নেই এই ফুটপাতে! ডিসপ্লে ভাঙাচোরা বিভিন্ন মোবাইল থেকে শুরু করে ঝকঝকে নতুন সবই মিলছে সাশ্রয়ী দামে।
 
রোববার (১৪ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা গেছে, রাব্বানী নামে এক বিক্রেতা ১০-১২টি নতুন মোবাইল সেট নিয়ে বসে আছেন। আইফোন সেভেন, স্যামসাং এইটসহ তার সবগুলোই দামি ব্র্যান্ডের ফোন। দামও জানালেন ৮-১০ হাজার টাকার মধ্যেই।
 
এতো কম দামের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটের দাম শুনে বুঝে নেওয়া উচিৎ এগুলো আসল সেট না, আসল সেটের রেপ্লিকা। এগুলো চায়না থেকে আসে তবে সবগুলোই নতুন। এখান থেকে সেট কিনলে কোনো ধরনের ডকুমেন্টস পাওয়া যায় না। নিজের দায়িত্বেই কিনে নিতে হবে। কম দামে যারা দামি ব্র্যান্ডের সখ মেটাতে চান তারাই এখান থেকে সেট কেনেন।

ফুটপাতে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল-ছবি-বাংলানিউজ
এখানকার অন্য দোকানে বেচাকেনার আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি জানান, অনেকে পুরাতন সেটের উপরে নতুন কেসিং লাগিয়ে অরিজিনাল ব্র্যান্ডের নতুন ফোন বলে বিক্রি করেন। অরিজিনাল ব্র্যান্ডের যত ফোন থাকবে সেগুলো দেখতে যেমনই হোক সেগুলো পুরাতন। অনেক পুরাতন সেটে বিভিন্ন সমস্যা থাকে। সেগুলো ঠিকঠাক করেও এখানে দোকানিরা বিক্রি করে বলে জানান তিনি।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার এক চা বিক্রেতা জানান, প্রতিদিন অনেক ধরনের মানুষ আসে এখানে পুরাতন মোবাইল বিক্রি করতে। তাদের দেখলেই বোঝা যায়, অনেকেই মাদকাসক্ত। এছাড়া, এখানকার দোকানিদের সঙ্গে মোবাইল চুরি পার্টির এক ধরনের যোগসাজস রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
 
পুরাতন মোবাইলের আরেক বিক্রেতা জানান, অনেকেই পুরাতন মোবাইল বিক্রি করতে আনেন। আমরা সেগুলো কিনে ঠিকঠাক করে বিক্রি করি। তারা কোথায় থেকে মোবাইল এনেছে সেটাতো আমাদের জানা সম্ভব না।

ফুটপাতে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল-ছবি-বাংলানিউজ
এদিকে, শুধু গুলিস্তানের ফুটপাতেই নয়, বিভিন্ন দামি শপিং মলেও এসব চুরি-ছিনতাইয়ের পণ্য বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ল্যাপটপ, ট্যাব ও মোবাইল ফোন চুরি-ছিনতাইয়ের পর সেগুলো কয়েক হাত ঘুরে অভিজাত দোকানে চলে যাচ্ছে। এছাড়া, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে অনলাইনেও গড়ে উঠছে এসব চোরাই পণ্যের বিশাল বাজার।
 
সম্প্রতি রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডিসহ অভিজাত কয়েকটি শপিং কমপ্লেক্সে অভিযান চালিয়ে আইফোনসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিপুল পরিমাণ চোরাই ফোন জব্দ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
 
পুলিশ জানায়, বিভিন্ন সময় চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের অধিকাংশই মাদকাসক্ত। মাদকের জন্য তারা ১০ হাজার টাকার মোবাইল মাত্র ২ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়।
 
আর দোকানিরা অধিক লাভের আশায় চোর-ছিনতাইকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কম দামে ট্যাব-মোবাইলফোনগুলো সংগ্রহ করে। ওইসব মোবাইল-ট্যাবের কোম্পানির হুবহু প্যাকেট বানিয়ে, এমনকি আইএমইআই নম্বরের জন্য নকল স্টিকার বানিয়ে তা প্যাকেটের গায়ে লাগিয়ে নতুন মোবাইল হিসেবে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দেয়। দোকানে বিক্রির পাশাপাশি অনলাইনেও এসব পণ্য বিক্রি করে সেসব চক্রের সদস্যরা।
 
এ বিষয়ে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) যুগ্ম পুলিশ কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, বিভিন্ন সময় ডিবির অভিযানে চোর-ছিনতাইকারী চক্রের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ডিবির তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৮
পিএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।