ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দু’হাতবিহীন স্কুলছাত্র বোলার-ব্যাটসম্যান!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৮
দু’হাতবিহীন স্কুলছাত্র বোলার-ব্যাটসম্যান! দু’হাতবিহীন স্কুলছাত্র বোলার-ব্যাটসম্যান/ বাংলানিউজ

নাগেরগাতী, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) থেকে ফিরে: কনুই থেকে দু’টি হাত নেই তার। জন্মসূত্রে এমন জীবনের অধিকারী সে। তবুও সে সব সময় হাস্যোজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত। হাত না থাকার পরও খেলার মাঠে দিব্যি চার, ছয় মেরে নিজের দলের পক্ষে জয় ছিনিয়ে আনছে সে!

শুধু কি তাই; সে আবার পায়ের সাহায্যে বোলিং করে কেড়ে নিচ্ছে উইকেট! আশ্চর্য হওয়ার বিষয় হচ্ছে এটা সিনেমা কিংবা কাল্পনিক কাহিনীর চরিত্র নয়।

একাগ্রতা আর প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাস্তব জীবনে এসবের সবকিছুই সম্ভব করেছে লাদেন।

নেত্রকোনার দুর্গাপুরের চণ্ডিগড় ইউনিয়নের নাগেরগাতী গ্রামের বাসিন্দা নবম শ্রেণির এ শিক্ষার্থীর প্রকৃত নাম মাসুদুর রহমান। ছোটবেলা থেকেই মা হামেদা খাতুন ও বাবা সাহেব আলী তাকে আদর করে লাদেন বলে ডাকেন। দু’হাতবিহীন স্কুলছাত্র বোলার-ব্যাটসম্যান/ বাংলানিউজ

লাদেন চণ্ডিগড় ইউনিয়নের নবারুণ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। দু’হাতবিহীন লাদেন জেএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। পরীক্ষার হলে তার জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় বরাদ্দ থাকলেও সে সুযোগ কখনোই ব্যবহার করেনি সে। অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের মতোই সঠিক সময়ে সে জমা দিয়েছে পরীক্ষার খাতা।

হাত না থাকার বিষয়টি জীবনের কোনো কাজে লাদেনকে পিছিয়ে রাখতে পারেনি! অন্যান্য ছেলে-মেয়েদের মতোই সেও খেলাধূলাসহ সব প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। এছাড়া ব্যক্তিগত জীবনের দৈনন্দিন কাজগুলো সারছে কারো কোনো সহযোগিতা ছাড়াই!

খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক কাজগুলোও একাই সারতে পারে। হাত না থাকার বিষয়টিকে লাদেন কোনো প্রতিবন্ধকতা বলেই মনে করে না। এজন্য তার মনে বিন্দু পরিমাণ দুঃখও নেই।

লাদেনের মা হামেদা বাংলানিউজকে জানান, লাদেনকে আঁতুড়ঘরে দুধ না দিয়ে মেরে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রতিবেশীসহ আত্মীয়-স্বজনরা। কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং অন্য সন্তানদের চেয়েও বেশি আদর যত্নে লাদেনকে লালন-পালন করে বড় করে তুলেছেন। দু’হাতবিহীন স্কুলছাত্র বোলার-ব্যাটসম্যান/ বাংলানিউজ

স্ত্রীর সঙ্গে গলা মিলিয়ে লাদেনের বাবা সাহেব আলী বাংলানিউজকে জানান, সন্তানকে নিয়ে আল্লাহ’র দরবারে কোনো অসন্তুষ্টি নেই তাদের। পরিবারের সবাই লাদেনকে নিয়ে সুখী ও আনন্দিত।

নবারুণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অশোক কুমার ভাদুরী বাংলানিউজকে জানান, দু’হাতবিহীন লাদেন বিদ্যালয়ের সবার প্রিয় ও ভালো ছাত্র।

প্রত্যেক শিক্ষক তাকে অত্যন্ত ভালোবাসেন, স্নেহ করেন। শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই লাদেনের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেন।

পড়ালেখা ছেড়ে বখে যাওয়া মা-বাবার সন্তানদের জন্য লাদেন জীবন্ত দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন ওই প্রধান শিক্ষক।

জীবন সংগ্রামী দরিদ্র লাদেন বাংলানিউজকে জানায়, ছোটবেলা থেকে নিজের ইচ্ছাশক্তি, চেষ্টা ও সার্বক্ষণিক মায়ের সহযোগিতা পেয়ে হাত না থেকেও সব কাজ শেখা সম্ভব হয়েছে।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে লাদেন বলেন, পড়াশুনা শেষ করে একটি সরকারি চাকরি করতে চায় সে। তবে ব্যাংকার হওয়া নিজের মনের সুপ্ত একটি বাসনা রয়েছে তার।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৮
আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।