ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রোহিঙ্গা সমস্যা এখন গোটা আসিয়ানের সংকট

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৮
রোহিঙ্গা সমস্যা এখন গোটা আসিয়ানের সংকট রোহিঙ্গা ইস্যুতে আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ান্স ফর হিউম্যান রাইটস প্রতিনিধিদলের সংবাদ সম্মেলন। ছবি-বাংলানিউজ

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন, যে নৃশংস নিধনযজ্ঞ চলেছে তা নজিরবিহীন। রোহিঙ্গা-সমস্যাটি এককথায় বহুমাত্রিক। শরণার্থী সমস্যার পাশাপাশি মানবপাচারসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে একারণে। রোহিঙ্গা সমস্যাটি এখন শুধু মিয়ানমারের নয়, এটি গোটা আসিয়ান অঞ্চলের সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মানবপাচার থেকে শুরু করে নিরাপত্তা-হুমকির সমস্যাসহ নানা সমস্যা আশপাশের সব এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে।

আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ান্স ফর হিউম্যান রাইটস-এর একটি প্রতিনিধিদল বুধবার (২৪ জানুয়ারি) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন।

তারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং মিশনে চারদিনের সফরে ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশে এসেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে জাতিগত নিধনযজ্ঞ ও অব্যাহত অত্যাচার নির্যাতনের মুখে অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এমন নিদারুণ মানবিক সংকটকালে বাংলাদেশ নিজের অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে।

মালয়েশিয়ার সংসদ সদস্য চার্লিস সান্তিয়াগো বলেন, প্রতিবেশী দেশে এমন নির্মম কাজ হতে পারে তা কেউ ভাবতে পারে না। বর্মী সেনারা ১২ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। এটি একটি অসুস্থতার লক্ষণ। বাংলাদেশ লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেথ হাসিনার দৃঢ় পদক্ষেপেই এটা সম্ভব হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আসিয়ান দেশগুলোকে এখন একজোট হয়ে কাজ করতে হবে।

মিয়ানমার সেনাকে জবাবদিহিতার মধ্য আনতে হবে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, রাখাইন অঞ্চলে মিয়ানমার বাহিনীকে নিরস্ত্র করতে হবে। মিয়ানমারের যে তিন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা এ হত্যাযজ্ঞে জড়িত, সবাই তাদেরকে চেনে। তাদের অপরাধ যুদ্ধাপরাধ। এজন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

বক্তারা উল্লেখ করেন, নিরাপদ পরিবেশ না পেলে রোহিঙ্গারা ফেরত যাবে না বলে জানিয়েছে। ফেরত পাঠাবার আগে তাই তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়া হবে। ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সর্বোপরি রোহিঙ্গাদের মানবিক মর্যাদা ও নাগরিকত্ব দিয়ে ফেরত দিতে হবে। তবে সবার আগে মিয়ানমারে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের শান্তিবাহিনী নিয়োগ করতে হবে।

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের কোনো প্রতিনিধি নেই। শুধু কিছু ফেসবুকিং সুবিধা ও রেডিও আছে, যা পর্যাপ্ত নয়। এ প্রত্যাবাসন রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব ছাড়া হবে না। এটি মিয়ানমারের নয় গোটা আসিয়ান অঞ্চলের সংকট।

এই সংকটের কারণে মানবপাচার থেকে শুরু করে নিরাপত্তা হুমকিসহ নানা সমস্যা এই এলাকা থেকে সব এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে।

রোহিঙ্গা সংকটে চীন ও ভারতের কঠোর সমালোচনা করেন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সদস্যরা। চীনের মিয়ানমার-ঘেঁষা নীতি আর ভারতের সুবিধাবাদী ভূমিকার পেছনে রয়েছে তাদের নিজ নিজ স্বার্থ। কারণ রাখাইনে চীন ও ভারত বিনিয়োগ করেছে ও করছে।

সিঙ্গাপুরের সংসদ সদস্য লুইস এনজি বলেন, প্রতিটি রোহিঙ্গার জীবনের মূল্য আছে। আসিয়ানভুক্ত  সব রাষ্ট্রকেই বাংলাদেশের মত করে ভাবতে হবে, ভূমিকা নিতে হবে।

থাইল্যান্ডের সাবেক সংসদ সদস্য রাচাডা ধানাডিরেক বলেন, একজন নারী হিসেবে বলতে চাই, আমাকে রোহিঙ্গারা বলেছে বর্মী (মিয়ানমারের) আর্মি তাদের স্বজনদের হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন করেছে। বাংলাদেশে পালিয়ে এসে তারা এখন নিরাপদে আছে।

এখন এই অমানবিক সময়ে আসিয়ানের একতাবদ্ধ হওয়ার এবং দেখানোর সময় এসেছে যে, রোহিঙ্গারা তাদেরই অংশ। কারণ মানবিকতার কোনো বর্ডার নেই, কোনো সীমারেখা নেই।

বাংলাদেশ সময়ঃ১৭১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৮
কেজেড / জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।