রোববার (০৪ নভেম্বর) দিনগত রাতে রাজধানীর কাউলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে র্যাব পরিচয়ে অপহরণকারী ওই চক্রের সাত সদস্যকে আটক করেছে র্যাব-১।
আটককৃতরা হলেন- মো. কাসেম ওরফে জীবন (৫৮), মো. ইব্রাহিম খলিল (৪০), মো. জাকির হোসেন সুমন (২৭), মো. বিল্লাল হোসেন ওরফে আসলাম (৩২), আব্দুল মন্নান (৫০), মো. সোহাগ (২৭), মো. আরিফ (২৮)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, দুই রাউন্ড গুলি, দু’টি হ্যান্ডকাফ, একটি ওয়াকিটকি সেট, র্যাবের দু’টি জ্যাকেট, একটি র্যাব বোর্ড, দু’টি সিগন্যাল লাইট, ছয়টি বড়লাঠি, দড়ি, চারটি চোখ বাঁধার কালো কাপড়, ২৮ হাজার টাকা ও একটি কালো গ্লাসের মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (০৫ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। এ সময় প্রতারকদের প্রতারণার কৌশলের ভিডিও ফুটেজও দেখানো হয়।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এই চক্রের মূলহোতা কাশেম ওরফে জীবন। দলের স্থায়ী সদস্য ১০/১১ জন। চক্রটি বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজিসহ নানাবিধ অপরাধের সঙ্গে জড়িত। চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাংকের গ্রাহকদের অপহরণ ও অর্থ ছিনিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করে থাকে। প্রথমে তারা ১/২ জন গ্রাহক সেজে ব্যাংকে প্রবেশ করে। অপর একটি দল তাদের তথ্যানুযায়ী সুবিধাজনক স্থানে র্যাবের স্টিকারযুক্ত মাইক্রোবাস নিয়ে অবস্থান করে।
এমন একজনকে টার্গেট করে যিনি ব্যাংক থেকে মোটা অংকের টাকা উত্তোলন করেছেন। তিনি যখন টাকা নিয়ে ব্যাংক থেকে বের হন, তখন ব্যাংকের ভেতরে থাকা গ্রুপটি বাইরে থাকা অপহরণ গ্রুপটিকে তাকে দেখিয়ে দেয়। ব্যাংকের গ্রাহক টাকা নিয়ে যে গাড়িতে ওঠেন অপহরণকারী চক্রের মাইক্রোবাস সেটি অনুসরণ করে। তাদের সুবিধাজনক স্থানে গিয়ে গাড়ির গতিরোধ করে। এরপর টার্গেট ব্যক্তিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে চোখ বেঁধে অপহরণকারীরা তাদের গাড়িতে তোলেন। মারধর করে তার কাছে থাকা টাকা হাতিয়ে নেন। এরপর চেতনানাশক দিয়ে অথবা নির্জন কোনো জায়গায় তাকে নামিয়ে দেওয়া হয়।
মুফতি মাহমুদ আরো বলেন, বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদেরও অপহরণ করে তারা। কারণ নগদ টাকা না পেলেও বিদেশ থেকে আনা বড় বড় লাগেজ পাওয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে এই প্রতারক চক্রটি রাস্তায় তল্লাশি চৌকি বসিয়ে প্রতারণা করে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গত সেপ্টম্বরে দু’টি ও অক্টোবরে ১১টি অপহরণ করেছে চক্রটি। এরা হবিগঞ্জ, সীতাকুণ্ড, আশুলিয়া, চান্দিনা, কেরানীগঞ্জ, নরসিংদী, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, সিরাজগঞ্জ, টঙ্গী, চৌদ্দগ্রামসহ বিভিন্ন হাইওয়ে এলাকায় অপহরণ করতো।
তিনি বলেন, চক্রটি মোটা অংকের টাকা পেয়েই ক্ষ্যান্ত থাকতো না, অপহরণকারীর ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের পাসওয়ার্ড নিয়েও টাকা হাতিয়ে নিতো।
ভিকটিম সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট (অব.) রফিক সংবাদ সম্মেলনে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, কিছুদিন আগে আমি অবসরে যাই। ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় তারা আমাকে ফলো করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে টাকা ছিনিয়ে নেয়। সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলাম পরিচয় দিলেও তারা আমার কোনো কথা না শুনে অমানুষিক অত্যাচার করে। তারা বলে, ‘তোর মতো কত সেনাবাহিনীর অফিসারকে রাস্তাঘাটে ক্রসফায়ার দিলাম’। অনুরোধ করলেও তারা আমার সেনাবাহিনীর কার্ডটিও ফেরত দেয়নি। পরে আমাকে মারধর করে নির্জন স্থানে ফেলে দেয়।
দেলোয়ার হোসেন নামে কেরানীগঞ্জের এক ভিকটিম জানান, তার গরুর খামার আছে। প্রতি বছর তিনি ব্রাক ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা তোলেন। এবারও তিনি ওই পরিমাণ টাকা তোলেন। টাকা উত্তোলন করে সোনালী ব্যাংকে জমা দিতে যাওয়ার সময় র্যাব পরিচয়ে গত সপ্তাহে তাকে অপহরণ করে। এসময় তার কাছে থাকা সাত লাখ টাকা নিয়ে যায় চক্রটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৮
পিএম/জেডএস