সোমবার (৫ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি এসব তথ্য জানায়। ‘ইউরোলজি বিভাগের জনৈক রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যানারে ‘জনৈক রোগী’ উল্লেখ করলেও মূলত কিডিনি সংক্রান্ত জটিলতায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক সিকদারের মা রওশন আরা বেগমের চিকিৎসায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রদত্ত প্রতিবেদন জানাতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির প্রধান নেফ্রলোজিস্ট অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ বলেন, একটি কিডনি অপসারণ করতে রওশন আরার দুটি কিডনি অপসারণ করা হয়েছে। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে আমরা রোগীর ফাইল জব্দ করে যাবতীয় তথ্য অনুসন্ধান করি। অবাক করা বিষয় হলো রোগীর আল্ট্রাসনোগ্রাম এবং সিটিস্ক্যান রিপোর্টে রোগীর দু’টি কিডনির অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
যেখানে দেখা যায়, একটি কিডনি অস্বাভাবিকভাবে ফুলে উঠেছে। কিন্তু হিস্টোপ্যাথলজি রিপোর্টে দু’টি কিডনি সংযুক্ত (হর্স টাইপ) ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। যেটা এক ধরনের এবনরমালিটি। দু’টি কিডনি আলাদা থাকলে একসঙ্গে দু’টি কিডনি কাটা সম্ভব নয়। তবে কিডনি হর্স টাইপ না হলে এটা অবশ্যই অপরাধ।
নেফ্রলোজি বিভাগের অধ্যাপক এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুল আলম বলেন, রোগীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ৩ নভেম্বর কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এরপর আরেকটি কমিটি করা হবে, যে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শাস্তি নির্ধরাণ করবে। গাফিলতি, অজ্ঞতা বা তাৎক্ষণিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে সেটি নিরুপণ করে কমিটি অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক এবং সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবে।
সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির সদস্য ও ইউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম খুরশিদুল আলম, অধ্যাপক ডা. আমানুর রসুল, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার আব্দুল্লাহ আল হারুন, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আসাদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক সিকদারের মা রওশন আরা বেগমের চিকিৎসার বিস্তারিত বিবরণী জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার আব্দুল্লাহ আল হারুন। এ বিবরণী অপ্রয়োজনীয় ও সব তথ্যের উল্লেখ নেই বলে সাংবাদিকেরা মন্তব্য করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুনরায় তদন্তের আশ্বাস দেন। যার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। তবে সে প্রতিবেদন কবে প্রকাশিত হবে সে বিষয়ে কিছু জানাননি।
এছাড়া অস্ত্রোপচার করা সেই চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল এর আগে কিডনি অপসারণের বিষয়টি অস্বীকার করেছিলেন।
বাম পাশের কিডনি জটিলতার কারণে গত ২৬ আগস্ট বিএসএমএমইউতে ভর্তি করানো হয় রওশন আরাকে। তার ছেলে রফিকের দাবি, হাসপাতালে বেশ কিছু পরীক্ষা করানোর পর গত ৫ সেপ্টেম্বর অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা বাম পাশের কিডনি রাখতে চাননি। বাম কিডনি তখন কিছুটা কাজ করছিল। আর ডান পাশের কিডনি পুরোপুরি ভালো ছিল।
তখন অন্য হাসপাতালে নেওয়া হলে সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে তার শরীরে কোনো কিডনি নেই। বিএসএমএমইউর আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ অক্টোবর রাতে মারা যান রওশন আরা।
বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর ঘটনা তদন্তে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি ও একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, ৫ নভেম্বর, ২০১৮
এমএএম/আরআর