ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খুলনায় খেজুর গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত গাছিরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৮
খুলনায় খেজুর গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত গাছিরা গাছ প্রস্তুত করছেন এক গাছি-ছবি-বাংলানিউজ

খুলনা: হেমন্তের বাতাসে শীতের হিম হিম স্পর্শ। ভোরে কুয়াশার আঁচল সরিয়ে শিশিরবিন্দু মুক্তোদানার মতো দ্যুতি ছড়াতে শুরু করেছে। গ্রামের মাঠজুড়ে কাঁচা-পাকা ধানের মাতাল গন্ধ। 

শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন খুলনার বেশ কিছু এলাকার গাছিরা। খেজুর গাছ থেকে রস আহরণের জন্য দা ও কোমরে দড়ি বেঁধে খেজুর গাছে উঠে নিপুণ হাতে গাছ প্রস্তুত করছেন অনেকে।

 

সম্প্রতি খুলনার বটিয়াঘাটার ভান্ডারকোট, রূপসা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গাছিদের খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে দেখা গেছে।  

আগে খুলনাঞ্চলের গ্রামগুলোতে মাঠে আর মেঠোপথের ধারে সারি সারি খেজুর গাছ থাকলেও ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে গাছটি। তবে কিছু গাছ দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে।  

জানা গেছে, এক সময় এ জেলার যেখানে-সেখানে সারিবদ্ধভাবে নয়ন জুড়ানো খেজুর গাছের দৃশ্য চোখে পড়তো। আধুনিকায়ন ও নগরায়নের ফলে বাংলার ঐতিহ্যের অংশ এই খেজুর গাছ আজ বিলুপ্ত প্রায়। ইটভাটায় অবাধে খেজুর গাছ পোড়ানোর কারণে গাছ কমে গেছে।

গাছিরা জানান, খেজুরের রস সংগ্রহের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে গাছ ঝুড়ার কাজ শুরু করেছেন তারা। এ বছর আবহাওয়াটা অনুকূলেই রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে বাজারে চাহিদা ও দাম ভালো পাওয়া যাবে।  

আক্ষেপ করে তারা বলেল, আগের মতো গাছ নেই। যেসব গাছ আছে সেগুলোতে তেমন রসও নেই। এখন যেটুকু রস ও গুড় পাওয়া যাচ্ছে আগামী কয়েক বছর পর হয়তো এ গাছের আর দেখাই মিলবে না।

রূপসার নৈহাটী এলাকার আব্দুল্লাহ নামের এক গাছি বলেন, খেজুর গাছ কুইমে (কমে) গেছে। আগের মতো রস হইচ্ছে (হচ্ছে) না। অথচ রসের চাহিদা বাড়ছে।  

তিনি জানান, খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে তৈরি করা হয় হরেক রকমের পিঠা-পুলি, ক্ষির ও পায়েস।  চাহিদার তুলনায় খেজুরের রস ও গুড় কম হওয়ায় দাম অনেক বেশি।  

বটিয়াঘাটার কলেজছাত্র প্রণয় সরকার বাংলানিউজকে বলেন, শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু এলাকার গাছিরা সকাল থেকে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন খেজুর গাছ ঝুড়ার কাজে। কয়েকদিন পরেই এসব গাছ থেকে শুরু হবে রস সংগ্রহ।  

তিনি বলেন, আগের মতো খেজুর গাছ নেই। আগে উপজেলার অনেক পরিবার আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে খেজুর গাছের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তা এখন আর নেই।  গ্রামের গাছে রস হলেও শহরের মানুষ কিনে নিয়ে যায় বলে গ্রামের মানুষ রস পায় না।  

খাড়াবাত-বাইনতলা এলাকার হারুণ নামের এক বাসিন্দা জানান, ৫-৭ বছর আগেও গ্রামে প্রায় প্রতি বাড়িতে খেজুরের রস পাওয়া যেত। কিন্তু প্রায় বিলুপ্তির পথে রসের এই বহুবিধ ব্যবহারের মূল্যবান গাছটি। তীব্র এ রস সংগ্রহের মৌসুমে গাছির সংকটও রয়েছে।  

কৃষি অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আব্দুল লতিফ বাংলানিউজকে বলেন, খুলনায় কি পরিমাণ খেজুর গাছ আছে বা ছিলো তার পরিসংখ্যান নেই। তবে এটা বলা যাচ্ছে দিন দিন খেজুর গাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। যেসব এলাকায় খেজুর গাছ আছে সেগুলোর রস সংগ্রহে গাছির সংকট দেখা দিয়েছে। খেজুর গাছের গুরুত্ব থাকলেও কমে যাচ্ছে খেজুর গাছের সংখ্যা। আগের মতো বাড়ির আশপাশে ও সড়কের পাশে খেজুর গাছ দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্যের দেখা মিলছে না খুব একটা।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৮
এমআরএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।