এ চক্রটি মূলত পুরান ঢাকা কেন্দ্রীক ব্যবসায়ীদের তথ্য সংগ্রহ করে। ওই এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীদের বিষয়ে তথ্য নিতো।
সোমবার (১৯ নভেম্বর) রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে থেকে ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি চক্রের প্রধান রানাসহ আটজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন- ডিবির পরিদর্শক পরিচয়দানকারী জাবেদ আহমেদ ওরফে বাবু (৩৭) ও সোহাগ খন্দকার (৩১), উপ-পরিদর্শক পরিচয়দানকারী নাজমুল হোসেন (২৪) ও দেলোয়ার হোসেন (৫০), কনস্টেবল পরিচয়দানকারী আসাদুজ্জামান (৩৫), বুলবুল আহমেদ (৩২), হারুন ওরফে হিরা (৩২)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি মোটরসাইকেল, ৩টি ওয়ারলেস, একজোড়া হ্যান্ডকাফ, খেলনা পিস্তল ২টি, চাপাতি ১টি, ১টি চাকু উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই'র প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।
তিনি বলেন, গত ২৫ অক্টোবর বিকেলে পল্টন এলাকা থেকে খিলক্ষেত এলাকায় নিজ বাসায় যাওয়ার জন্য এক বন্ধুসহ সুপ্রভাত গাড়িতে ওঠেন মোস্তাফিজুর রহমান। বাসটি নর্দ্দা যাওয়ার পর কয়েকজন ব্যক্তি এর সামনে দু’টি মোটরসাইকেলে ব্যারিকেড দিয়ে বাসটি থামায়। এরপর ওই ব্যক্তিরা বাসে ওঠেন, তাদের ১ জনের কাছে ওয়ারলেস সেট ও দুইজনের পরনে ডিবি লেখা জ্যাকেট ছিল।
‘তারা মোস্তাফিজুর ও তার বন্ধুকে বলে 'আমরা ডিবির লোক, আমাদের কাছে তথ্য আছে তোরা ইয়াবা খাস, তোদের কাছে ইয়াবা আছে। ' এই কথা বলে ভিকটিম মোস্তাফিজুর রহমান এবং তার বন্ধুকে জোরপূর্বক বাস থেকে নামায়’।
এরপর ভিকটিম ও তার বন্ধুকে চড়-থাপ্পর, কিল-ঘুষি মারতে থাকে এবং ভিকটিমের পকেটে থাকা নগদ ৪২ হাজার টাকা ও ২টি মোবাইল ফোন সেট এবং ভিকটিমের বন্ধুর কাছে থাকা নগদ ১৫ হাজার টাকা ও ১টি মোবাইল ফোন জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। ভিকটিমের বন্ধুর কাছে ইয়াবা আছে বলে তার বন্ধুকে সার্চ করে কিছু না পেয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। পরে ভিকটিমের ব্যাগে ইয়াবা আছে বলে তাকে জোর করে মোটরসাইকেলে তোলে। ভিকটিমকে থানায় নিয়ে মামলা দেওয়ার কথা বলে গুলশান, বাড্ডা, হাতিরঝিল এলাকায় ঘুরতে থাকে।
পরবর্তীতে রাত সাড়ে তিনটার দিকে ভিকটিমকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন বিএসটিআই মোড়ে এনে বলে 'তোকে আজকের মত ছেড়ে দিলাম। তুই আর ইয়াবা খাবি না। ' তখন তারা ভিকটিমের কাছ থেকে টানাটানি করে তার ব্যাগটি নেওয়ার চেষ্টা করে, ব্যাগে ১৩ লাখ টাকা ছিল। একপর্যায়ে ভিকটিম বুঝতে পারেন তারা পুলিশ না, তখন ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করলে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে। এরপর আসামিরা ভিকটিমের ব্যাগটি ছেড়ে দিয়ে মোটরসাইকেলযোগে দ্রুত পালিয়ে যায়।
পরে ভিকটিম মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা (নং-৩১) দায়ের করেন। মামলাটি পিবিআই তদন্ত শুরু করলে একপর্যায়ে আসল তথ্য বেরিয়ে আসে।
পিবিআই প্রধান বলেন, পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকরা এই চক্রের সোর্স। তারা তথ্য দিতো, কোন ব্যবসায়ী কত টাকা নিয়ে ফেরত যাচ্ছে। তথ্য অনুযায়ী ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে থেকে অনুসরণ করতো। এরপর অন্য এলাকায় যাওয়ার পর কখনো মোটরসাইকেল বা কখনো মাইক্রোবাসে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে সবকিছু কেড়ে নিতো। এরপর ডাকাতি থেকে প্রাপ্ত অর্থের ৪০ ভাগ সেসব সোর্সকে দিয়ে দিতো। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক মামলা রয়েছে।
এ চক্রের আরো দুইজন সদস্য পলাতক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন আরো দুইটি চক্রের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। এ চক্রের সোর্সদের বিষয়েও তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে, আশা করি শিগগিরই তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৮
পিএম/জেডএস