ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘স্বপ্নবাজ’ মেয়র আনিসুলের মৃত্যুবার্ষিকী শুক্রবার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৮
‘স্বপ্নবাজ’ মেয়র আনিসুলের মৃত্যুবার্ষিকী শুক্রবার আনিসুল হক

ঢাকা: রাজধানীকে বাসযোগ্য মানবিক ঢাকা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন মেয়র আনিসুল হক। যে কয়েকদিন দায়িত্ব পালন করেছেন তার মধ্যেই নগরবাসীর মনে সফল মেয়র হিসেবে স্থান করে নিয়েছিলেন। তার অকাল মৃত্যুতে স্বপ্নের সেই ঢাকা আজও অধরা।

শুক্রবার (৩০ নভেম্বর) আনিসুল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। দিনটিকে স্মরণ করে তার পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া এবং খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এরমধ্যে থাকছে গুলশান আজাদ মসজিদে বাদ আসর বিশেষ দোয়া।
 
২০১৭ সালের ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে সপরিবারে লন্ডন যান আনিসুল হক। সেখানে তিনি সেরিব্রাল ভাসকুলাইটিসে (মস্তিষ্কের রক্তনালীর প্রদাহ) রোগে আক্রান্ত হন। অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৩ আগস্ট তাকে সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আনিসুল হক।  
 
রাজনীতিতে কোনো দলে নাম না লেখানো আনিসুল হক ২০১৫ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র নির্বাচিত হন। রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও ‘স্মার্ট’ নগরী হিসাবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বেশকিছু উদ্যোগ নিয়ে আলোচিত ও প্রশংসিত হন তিনি।
 
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালের সামনের সড়ক দখলমুক্ত করতে গিয়ে বিক্ষুব্ধ চালকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। পরে ওই সড়ক দখলমুক্ত করেন তিনি। রাতারাতি তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছান।
 
নগরবাসীর কাছে ঢাকার আকাশ এক রকম অবরুদ্ধ হয়েছিল। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার এক বছরের মধ্যেই তিনি ঢাকা শহর থেকে সব বিলবোর্ড উচ্ছেদ করে আকাশকে খুলে দেন। যা একসময় কেউ চিন্তাও করতে পারেনি।

শ্যামলী থেকে গাবতলী পর্যন্ত বিভিন্ন পরিবহনের যানবাহনে রাস্তার দখল ছিল। ফলে দীর্ঘ সময় যানজটে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হতো। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ঘোষণা দিয়েই তিনি শ্যামলী থেকে গাবতলী পর্যন্ত রাস্তাকে গতিময় করে তোলেন।
 
বিভিন্ন এলাকার পার্কগুলো দখলদারদের কাছে চলে গিয়েছিল। আনিসুল হক একের পর এক সেসব পার্ক দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করেন। শহরের পথচারীদের জন্য আধুনিক টয়লেট নির্মাণ করেন। এজন্য মানুষের আস্থার জায়গা তৈরি হয় আনিসুল হককে ঘিরে।
 
গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন এলাকায় বিশেষ রঙের রিকশা এবং ‘ঢাকা চাকা’ নামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সেবা চালু করেন আনিসুল হক। বিমানবন্দর সড়কে যানজট কমাতে মহাখালী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে ইউলুপ করার উদ্যোগ নেন তিনি।
 
এছাড়া ঢাকার খালগুলো উদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। তার নির্দেশে বনানীর ২৭ নম্বরে যুদ্ধাপরাধী মোনায়েম খানের বাড়ি ‘বাগ এমোনয়েম’র অবৈধ দখলে থাকা অংশ উদ্ধার করে সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে।
 
১৯৫২ সালে নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন আনিসুল হক। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ১৯৮০ দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘আনন্দমেলা’ ও ‘অন্তরালে’ নামে দু’টি অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করতেন। তিনি একজন সফল ব্যবসায়ীও। ১৯৮৬ সালে তার নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘মোহাম্মদী গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন। মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিসুলের তৈরি পোশাক ছাড়া বিদ্যুৎ, তথ্যপ্রযুক্তি, আবাসন, কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা রয়েছে। ডিজি জাদু ব্রডব্যান্ড লিমিটেড এবং নাগরিক টেলিভিশনের মালিকানাও তার ব্যবসায়ী গ্রুপের।
 
২০০৫ থেকে ২০০৬ সাল এ সময়ে বিজিএমইএ’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশে বেসরকারিখাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বিআইপিপিএ’রও সভাপতি ছিলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৩১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৮
এসএম/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।