ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বুদ্ধিজীবীরাই জাগিয়ে রাখেন জাতির বিবেক

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮
বুদ্ধিজীবীরাই জাগিয়ে রাখেন জাতির বিবেক সভায় জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: বুদ্ধিজীবীরাই জাগিয়ে রাখেন জাতির বিবেক। জাগিয়ে রাখেন তাদের রচনাবলীর মাধ্যমে, সাংবাদিকদের কলমের মাধ্যমে, গানের সুরে, শিক্ষালয়ে পাঠদানে, চিকিৎসা, প্রকৌশল, রাজনীতি ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণের সান্নিধ্যে এসে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান।

তিনি বলেন, একটি জাতিকে ধ্বংস করে দেবার প্রথম উপায় বুদ্ধিজীবী শূন্য করে দেওয়া।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর সহযোগিতায় বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার জন্যই ১৪ ডিসেম্বর নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।

বুধবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ। এ সময়  আরও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রশীদ হায়দার, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান আসিফ মুনীর, অধ্যাপিকা ফাহমিদা খানম এবং ডা. নুজহাত চৌধুরী।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই ৪৭টি প্রদীপ জ্বালিয়ে ও এক মিনিট নীরবতা পালন করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর আলোচনা পর্বে স্বাগত বক্তব্য দেন  বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ।

আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাসির বলেন, বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিন ১৪ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় যখন নিশ্চিত, ঠিক তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের রাতের আঁধারে চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বুঝতে পেরেছিল, পরাজয় তাদের অনিবার্য। তাই পরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাহীন ও পঙ্গু করতে দেশের বরেণ্য সব ব্যক্তিদের রাতের অন্ধকারে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছে। তাই সূর্য সন্তানদের জাতি সবসময়ই স্মরণ করবে।

আসিফ মুনীর বলেন, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস হানাদাররা বাংলাদেশে গণহত্যা, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রাখে। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই নিজেদের পরাজয় অনিবার্য জেনে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার গোপন নীলনকশা তৈরি করে। কারফিউর মধ্যে রাতের অন্ধকারে বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে ধরে এনে নির্মম-নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের তাৎপর্য আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে।

ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীরা আমাদের মহান মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নিজ কর্মের মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগঠকদের প্রেরণা জুগিয়েছিলেন। মুক্তিকামী জনগণকে উদ্দীপ্ত করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরপরই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিকট আত্মীয়রা মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে তাদের গলিত ও ক্ষত বিক্ষত মরদেহ খুঁজে পায়। বুদ্ধিজীবীদের মরদেহে ছিল আঘাতের চিহ্ন। চোখ, হাত-পা ছিল বাঁধা। কারো কারো শরীরে ছিল একাধিক গুলি। অনেককে হত্যা করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র দিয়ে।  

কথাসাহিত্যিক রশীদ হায়দার বলেন, আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকতেন সমাজের সর্বস্তরের বুদ্ধিজীবীরা। তারা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক-ভাবে বাঙালিদের বাঙালি জাতীয়তা-বোধে উদ্বুদ্ধ করতেন। তাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনই পরবর্তীতে রাজনৈতিক আন্দোলনের দিকে ধাবিত করে। এজন্য শুরু থেকেই বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন। তাই যুদ্ধের শুরু থেকেই পাকিস্তানী বাহিনী বাছাই করে একে একে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৮
এইচএমএস/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।