ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খুলনায় শীতকালীন শাক-সবজির বাম্পার ফলন

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮
খুলনায় শীতকালীন শাক-সবজির বাম্পার ফলন জমিতে সবুজ শাক-সবজি/ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: খুলনায় শীতকালীন শাক-সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি রবি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সবজি উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষক দারুণ খুশি। এ জেলার ৯ উপজেলার উৎপাদিত শাক-সবজি ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ  করছে পাইকারী সবজি ব্যবসায়ীরা। 

কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় শীতকালীন শাক-সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। শীতের শুরুতেই এসব সবজি বাজারজাত করে বেশ লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

উৎপাদনের খরচ তুলে ভালো মুনাফা হওয়ায় এবার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।

জানা গেছে, শীতকালীন আগাম সবজির বাজারমূল্য ভালো থাকার এ বছর বেশি মুনাফা পাচ্ছেন সবজি চাষিরা। প্রতিদিনই তাদের সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাজারজাত করা হচ্ছে।

তবে সবচেয়ে ডুমুরিয়ার হাসেম আলী পাইকারী কাঁচা বাজারে  কৃষকদের উৎপাদিত সবজি বেশি বিক্রি হয়। উপজেলার ঘোনা, ঘোনাবান্দা, তেলিখালী, পেড়িখালী, কাঠামারী, উড়াবুনিয়া, হাজীবুনিয়া, তালতলা, বকুলতলা, কুশাউলা, ভান্ডারপাড়া, রংপুর, সাড়াদিচিয়া, খর্ণিয়া এলাকাসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা এ হাটে তাদের ক্ষেতের শাক-সবজি নিয়ে আসেন। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর এমনি কি ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ব্যবসায়ীরা এ হাট থেকে পাইকারী দরে সবজি কিনে থাকেন। ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান ভরে তারা সবজি নিয়ে যান।

সবজি ক্ষেত পরিচর্যা করছে এক নারী চাষিসরেজমিন  বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে সবজিচাষিদের। বিভিন্ন সবজি ক্ষেত ঘুরে দেখা গেলো, লাল শাক, পালং শাক, ফুলকপি, পাতাকপি, লাউ, বেগুন, করলা, শিম, মুলা, লাউ শাক, ধনে ও মুলা শাকসহ বিভিন্ন শাক-সবজির চাষ করা হয়েছে। সকাল-বিকেল ক্ষেতে থেকে এসব শাক-সবজি তোলা হচ্ছে। ভ্যান, মাহেন্দ্র, মিনি পিকআপ ভ্যানে করে এসব সবজি বাজারে নেওয়া হচ্ছে।

ডুমুরিয়া উপজেলার ৫নং আটলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং কুলবাড়ীয়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম মুন্না বাংলানিউজকে বলেন, এ উপজেলায় বহু কৃষক শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। অল্প সময়ে সবজি চাষে লাভের সুযোগ থাকায় চাকরির পেছনে না ছুটে অনেক শিক্ষিত বেকাররা ঝুঁকে পড়ছেন সবজি চাষে। মাছের ঘেরে শাক-সবজির চাষ করে কেউ কেউ দুই দিন থেকে লাভবান হচ্ছেন। নিজের জমি না থাকলেও অনেকেই অন্যের জমি চুক্তিভিত্তিক লিজ নিয়ে সবজির আবাদ করেছেন।

ডুমুরিয়া উপজেলার দক্ষিণ কালিকাপুরের সরিষা চাষি অনুপম বাংলানিউজকে বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এবার উপজেলায় শীত কালীন ফসল ভালো উৎপাদন হয়েছে। বিশেষ করেন লাল শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, বেগুন, টমেরো, আলু, শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে।
বটিয়াঘাটা উপজেলার ফুলতলা গ্রামের ক্ষেতের মালিক প্রণয় সরকার বাংলানিউজকে বলেন, শীতকালীন সবজির আবাদে কৃষকরা লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন। ফলে দিন দিন এলাকায় বাড়ছে শীতকালীন সবজির আবাদ।

তেরখাদা উপজেলার রাসেল নামের এক কৃষক বলেন, ফসলের ক্ষেতজুড়ে এখন শীতকালীন শাক-সবজির সমারোহ। বাজারে ভালো দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনা অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে এ জেলায় শীতকালীন লালশাকের আবাদ হয়েছে ৫২০ হেক্টর জমিতে, ঘৃতকাঞ্চন ২৭৪ হেক্টর জমিতে, গীমাকমলী ২৭০ হেক্টর জমিতে, পালংশাক ৩৭১ হেক্টর জমিতে, শিম ৪৬৭ হেক্টর জমিতে, মুলা ৩২৩ হেক্টর জমিতে, টমেটো  ৭৬৬ হেক্টর জমিতে, বাঁধাকপি ২৪০ হেক্টর জমিতে, ফুলকপি ৩৬২ হেক্টর জমিতে, ওলকপি ৫১৯ হেক্টর জমিতে, বিটকপি ১২০ হেক্টর জমিতে, বেগুন ৭২৪ হেক্টর জমিতে, লাউ ৩৫৭ হেক্টর জমিতে, লাউ ডগার শাক ৯৩ হেক্টর জমিতে, গাজর ২৩ হেক্টর জমিতে, শসা ৮৯ হেক্টর জমিতে, মিষ্টি কুমড়া ২৯০ হেক্টর জমিতে, বরবটি ১৩২ হেক্টর জমিতে, কাঁচকলা ১৮৪ হেক্টর জমিতে, উচ্চে ২৬৭ হেক্টর জমিতে, পেঁপে ১৭৫ হেক্টর জমিতে, ডাটাশাক ১৬২ হেক্টর জমিতে, আলু ২৯০ হেক্টর জমিতে, সরিষা ২৭০ হেক্টর জমিতে, ভুট্টা ৩২ হেক্টর জমিতে, আখ ৬০ হেক্টর জমিতে, মরিচ ১৬৫ হেক্টর জমিতে, মসুর ৭৫ হেক্টর জমিতে ও খেসারী ৭৫ হেক্টর জমিতে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল লতিফ বাংলানিউজকে জানান, খুলনার ৯ উপজেলা ও মেট্রোপলিটন দুই থানা এলাকায় এবার শীতকালীন শাক-সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। সার্বিক তদারকির মাধ্যমের শীতকালীন শাক সবজির চাষের এ বাম্পার  ফলন হয়েছে। ক্ষেতে ভালো ফসল দেখে সফলতার হাসি ফুটছে কৃষক পরিবার গুলোতে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮
এমআরএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।