ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘কদর’ বেড়েছে কড়াইল বস্তির

ইয়াসির আরাফাত রিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৮
‘কদর’ বেড়েছে কড়াইল বস্তির কড়াইল বস্তি এলাকা, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: বছরের প্রায় পুরো সময়ই নানা সমস্যায় জর্জরিত থাকে রাজধানীর কড়াইল বস্তি। এখানে বিদ্যুৎ আছেতো গ্যাস নেই, পানি থাকলেতো থাকবার ভালো পরিবেশ নেই। ছোট ছোট গলি- পথ থাকলেও সেগুলো সামান্য বৃষ্টিতে ডুবে থাকে। সব মিলে অবহেলিত এলাকা। এছাড়া এতোদিন কেই জিজ্ঞেসও করেনি কেনো এমন! তবে এখন নির্বাচন ঘিরে এ কড়াইল বস্তিরও বেশ ‘কদর’ বেড়েছে- বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রতিবারই নির্বাচন আসলে উন্নয়নের ফুলঝুরি নিয়ে প্রার্থীরা হাজির হন বস্তিবাসীর সামনে। এসময় তারা বস্তিটির ‘ভোট ব্যাংক’ নিজের করে নিতে উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন।

ঘরে ঘরে ঘুরে দেখেন কে কেমন আছে। খেয়েছে কি-না প্রার্থীরা তারও খোঁজ নিয়ে থাকেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও এর ব্যতিক্রম নয় বলে জানিয়েছে বস্তিবাসী।

তারা বলছেন, আমরা অবহেলিত। শুধু প্রতিশ্রুতিই পাই। সারাবছর কেউ ভালো করে জিজ্ঞেসও করে না, আমরা কেমন দিন কাটাচ্ছি। বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি, রাস্তা, ঘর-বাড়িসহ নানা সমস্যা গলায় নিয়ে আমরা বেঁচে আছি। প্রতিবারই ভোট দিই, কিন্তু আমাদের উন্নয়ন হয় না। তাই এবার বস্তিসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন যিনি করবেন, তাকেই বুঝেশুনে ভোট দেবো। প্রার্থী যে দলেরই হোক, আমরা আমাদের উন্নয়নের স্বার্থ দেখে ভোট প্রয়োগ করবো।

অন্যদিকে, ভোট নিয়ে বেশ সরগরম হয়েছে বস্তির জামাই বাজার, বৌবাজার, এরশাদ মাঠ, মশার বাজার, বেলতলা, টি অ্যান্ড টি এলাকা। খোলা হয়েছে বিভিন্ন দলের অস্থায়ী প্রচার অফিসও।

মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) সরেজমিনে বস্তিতে গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

তখন এখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বস্তিটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে। তবে এর কিছু অংশ পড়েছে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যেও। এটি ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসন। প্রায় ৩০ হাজার ভোটার রয়েছেন কড়াইল বস্তিতে। বিশাল এ ভোট ব্যাংক নিজের করতে জোর প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সমর্থকরা। তিনি দেশের বাইরে থাকায় তার পক্ষে প্রচারণা চলছে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফয়সাল চিশতীর নেতৃত্বে। এখানে খোলা হয়েছে কয়েকটি প্রচার অফিসও।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের পক্ষেও চলছে এখানে প্রচারণা। পোস্টার সাঁটানোর পাশাপাশি ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ চালাচ্ছেন এ প্রচারণা। তাদের প্রচারে রয়েছে একাধিক অফিস। প্রচারণায় ব্যস্ত আছেন বাসদের এসএম আহসান হাবীবও। তাছাড়া সব প্রার্থীর পক্ষ থেকে এখানে ভোটারসহ সাধারণদের জন্য করা হচ্ছে চা-নাস্তার ব্যবস্থা। কড়াইল বস্তি এলাকা, ছবি: বাংলানিউজতবে বস্তির বাসিন্দারা বলছেন, শুধু ভোটের সময় বস্তির দিকে সবার নজর থাকে। তখন আমাদের ‘কদর’ বেড়ে যায়। আর ভোট শেষে সবাই ভুলে যায়। এখানে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সমস্যা থাকে সারাবছর। যিনি বস্তির উন্নয়নে কাজের সঠিক প্রতিশ্রুতি দেবেন, তাকেই আমরা নির্বাচিত করবো।

হারুন অর রশিদ পরিবার নিয়ে এ বস্তিতে থাকেন ২৬ বছর ধরে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ভোটের আগে আমাদের কথা সবাই বলেন। নানা প্রতিশ্রুতি দেন। ভোট শেষে সবাই চলে যান। কেউ এ বস্তিকে উচ্ছেদও করতে চান। তবে এবার আমাদের যিনি উন্নয়নের সঠিক প্রতিশ্রুতি দেবেন, আমরা তাকেই ভোট দেবো। তিনি যে দলেরই হোক না কেনো।

বস্তির আলমগীর হোসেন আলম বাংলানিউজকে বলেন, গত দশ বছরে আমাদের বস্তির কিছুটা উন্নয়ন হয়েছে। আগামীতেও বস্তিবাসীর উন্নয়নে সরকার সমর্থিত প্রার্থীকে আমরা জয়ী করবো।

ইসমাইল নামে অপর বাসিন্দা বাংলানিউজকে বলেন, আমি এখানে মুদি মালের ব্যবসা করে সংসার চালাই। এই আয়ে চলে দুই ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচ। আমরা সরকারের কাছে টাকা চাই না, বস্তির উন্নয়ন চাই। এখানে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ নানা সমস্যা। এ সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি চাই। যে আমাদের এই সমস্যা সমাধানের সঠিক প্রতিশ্রুতি দেবেন, তার দিকেই তাকাবো আমরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮
ইএআর/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।