শীত জেঁকে বসার সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু ও বৃদ্ধ।
চিকিৎসকদের মতে, বাংলাদেশে শীতকালীন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি দেখা দেয়। এর মধ্যে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, টনসিলাইটিস, ব্রংকিওলাইটিস, সাইনোসাইটিস, বাত, আর্থ্রাইটিস, চামড়ার শুষ্কতা অন্যতম। এসব রোগ থেকে সুরক্ষায় শীত এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের তথ্য মতে, দেশে গত নভেম্বর মাসে ৫ হাজার ২৩৯ জন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হন। এদের মধ্যে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়; এরমধ্যে তিন জন নওগাঁর, একজন করে সিলেট ও নীলফামারীর।
যারা রোগাক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৮২০ জন। এ রোগে সর্বোচ্চ আক্রান্ত নীলফামারীতে ৪৬২ জন। ডায়রিয়ায় (রোটা ভাইরাস) আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯০৪ জন, এ রোগে সর্বোচ্চ আক্রান্ত কিশোরগঞ্জে ৩৭৬ জন। এছাড়া ঠাণ্ডাজনিত অন্যান্য সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫১৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ হিসাবের বাইরেও আরও রোগী রয়েছেন, যারা বিভিন্ন আঞ্চলিক ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
শীতকালীন রোগ বিষয়ে রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার এবং কো-অর্ডিনেটর ডা. এ এস এম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে শীতজনিত রোগের মৌসুম হলো নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। আর শুরুতে অর্থাৎ নভেম্বর মাসে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বেশি দেখা যায়। সারাধারণত আরএসভি, এইচএমপিভি, ইনফ্লুয়েঞ্জা-১,২,৩ ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত রোগ বেশি দেখা যায় এ সময়ে। তবে বেশিরভাগ রোগীদের জ্বর হয় না, কিন্তু তারা মনে করেন তাদের জ্বর হয়েছে। কারণ শরীর গরম থাকে। আবার এসব ভাইরাসের অ্যান্টি-ভাইরাসও নেই আমাদের। এদিকে চিকিৎসকরাও অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দেন। বছরের অন্যান্য সময়ে জ্বর হলে রোগীরা প্যারাসিটামল খেয়ে নেয়। যখন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে জ্বর হয়, তখন অ্যান্টিবায়োটিক জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু এতে শরীরের ক্ষতি হয় বেশি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়। তাই এসব রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধটাই মুখ্য।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, শীত বেশি পড়লে স্বাভাবিক শীতকালীন রোগব্যাধির পাশাপাশি তীব্র শীতে হাইপোথার্মিয়া (শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত কমে যাওয়া) হতে পারে। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ আগে থেকেই শীত পড়লেও রাজধানীতে চলতি মাসের সর্বশেষ বৃষ্টির পর থেকে শীত পড়ছে। তাই ঢাকায় শীতজনিত রোগের প্রকোপ এখনো দেখা না গেলেও হাঁপানি, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশিসহ অন্যান্য রোগ থেকে বাঁচতে ঠাণ্ডা নিবারণ করতে হবে।
সুস্থ থাকার পরামর্শ হিসেবে তিনি বলেন, শরীর গরম রাখতে গরম পোশাক পরতে হবে, গরম পানি খেতে হবে। এমনকি গোসলের ক্ষেত্রে গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু এসব রোগে বয়স্ক ও শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে তাই তাদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। রুম গরম রাখতে হিটার ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়া রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
২০০৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় জানা যায় যে, স্বাভাবিক আচরণের মানুষরা ঘণ্টায় ১৬ বার মুখে হাত লাগান। যদি চোখ, নাক ও ঠোঁটে স্পর্শ করা কমানো যায় তাহলে শরীরে ভাইরাস প্রবেশের ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যাবে। তাছাড়া ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, বিশ্রাম নেওয়া বা মানসিক প্রশান্তিতে থাকাসহ ঠাণ্ডা না লাগতে দিলেই এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৮
এমএএম/এইচএ/