ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই বিলের দিকে মানুষের ঢল

উপজেলা করসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৯
ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই বিলের দিকে মানুষের ঢল বাউৎ উৎসবে মাছ ধরছেন নানা শ্রেণীর মানুষ। ছবি: বাংলানিউজ

পাবনা: কারও কাঁধে পলো, আবার কারও হাতে ঠেলা জাল, খুইরা জাল, বাদাই জালসহ মাছ ধরার নানা উপকরণ। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই বিল অভিমুখে মানুষের ঢল। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ জড়ো হচ্ছে এক স্থানে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সববয়সী মানুষের উপস্থিতিতে বিলপাড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। এরপর দল বেঁধে বিলের পানিতে নেমে মাছ শিকারের আনন্দে মেতে ওঠেন তারা। 

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) ভোরে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার মণ্ডুতোষ ইউনিয়নের ‘রুহুল বিলের’ কুয়াশাজড়ানো সকালে মেঠোপথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য। বাউত উৎসবকে কেন্দ্র করে এই চিত্র।

গ্রামীণ ঐতিহ্য হিসেবে এখনও পাবনা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ এ উৎসবে অংশ নেয়। সবার চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক। কেউ পলোতে পাঁচ কেজি ওজনের রুই  ধরেছেন, আবার কেউ বা শোল মাছ। কেউ আশানুরুপ মাছ না পেয়ে হতাশা নিয়ে বাড়ি ফেরেন।  
 
পলো দিয়ে মাছ ধরার এ উৎসব বহু পুরনো। যারা পলো দিয়ে মাছ ধরেন তাদের বলা হয় ‘বাউৎ’। ফলে মাছ ধরার এই উৎসবকে বলা হয় বাউৎ উৎসব। উৎসবে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলনবিলে এ উৎসব দীর্ঘদিনের। পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ এতে অংশ নেয়।   বর্ষায় বিলে থৈ থৈ পানি থাকে। তখন বিচ্ছিন্নভাবে মাছ শিকার হয়। বর্ষায় বিলের পানি নেমে নিচু অংশে যায়। তখন অল্প পানিতে এই মাছ ধরার উৎসব শুরু হয়। বাউৎরা রুই, কাতলা, বোয়াল, চিতল, শোল ও গজার সহ বিভিন্ন মাছ ধরেন। মাঝ ধরার এ কাজে পলোর পাশাপাশি পলো জাল, ঠেলা জাল, চাট জালসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার হয়।  

মাছ ধরতে আসা ভাঙ্গুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সুমন হোসেন, শামিম হোসেন বাংলানিউজকে জানান, প্রচুর মাছ ধরা পরতো শুনেছি। এখন তেমন মাছ নেই। ফলে অধিকাংশ মানুষকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।  

ভাঙ্গুড়া রাঙ্গলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী নীরব আলী বলেন,  ছোট-বড় সবাই মিলে এখানে মাছ ধরে। ধনী-গরীব কিছু থাকে না।  

ভাঙ্গুড়া উপজেলার শিক্ষক বদরুল আলম তিনি আক্ষেপ করে বাংলানিউজকে বলেন, আগে বিলে প্রচুর মাছ ছিল। এখন ডিম ছাড়ার সময় থেকেই ছোট মাছ ছেঁকে তোলা হচ্ছে। ফলে উৎসবে মাছ মিলছে না। বিষটোপ ও বেড় জাল দিয়ে ছোট মাছ ছেঁকে তোলা হচ্ছে। ফলে দেশি মাছ হুমকির মধ্যে পড়েছে। তবে অভয় আশ্রম সৃষ্টি করে ও মৎস্য সংরক্ষণ আইন প্রয়োগ হলে এসব দেশি প্রজাতির মাছ রক্ষা পাবে।  

ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য হিসেবে বাউৎ উৎসবকে টিকিয়ে রাখতে এবং এর পক্ষে জনমত তৈরি করে এই উৎসবকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়া যায় কি-না তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবো।  

বাংলাদেশ সময়: ০৩১৯ ঘন্টা, ডিসেম্বর ০৪ ২০১৯
ইউবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।