ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অন-অ্যারাইভাল ভিসাসহ বাংলাদেশ-ভারতের নৌপথে খুলছে অনেক জট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৯
অন-অ্যারাইভাল ভিসাসহ বাংলাদেশ-ভারতের নৌপথে খুলছে অনেক জট

ঢাকা: দু’দেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে অন-অ্যারাইভাল ভিসা দিতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। এছাড়া দু’দেশের নৌপথের যোগাযোগের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস পেয়েছে ঢাকা ও দিল্লি।

পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ট্রান্সশিপমেন্টের খরচ যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য সম্মত হয়েছে দু’দেশ। বাংলাদেশ ও ভারতের নৌ সচিব পর্যায়ে দু’দিনের বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহবাগের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এসব তথ্য জানিয়েছেন দু’দেশের সচিবরা।

বাংলাদেশের নৌসচিব মো. আবদুস সামাদ বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে দু’দেশের নৌ যোগাযোগ আরও বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের দু’দেশের মধ্যে সড়ক ও রেলের তুলনায় নৌ যোগাযোগ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, নৌপথে চলাচল অনেক সাশ্রয়ী ও পরিবেশ সম্মত।

নৌপ্রটোকল চুক্তির আওতায় রাজশাহী-পাকশী-ধুলিয়ান নৌপথ ব্যবহার করতে চাই জানিয়ে নৌ সচিব বলেন, এ নৌপথে কারিগরি কমিটি সমীক্ষার ভিত্তিতে খনন করবো।

আব্দুস সামাদ বলেন, চিলমারী-ডুবরি নৌপথে কম গভীরতার জাহাজ চলার বিষয়ে সম্মত হয়েছি। আত্রাই নদীর ভারতীয় অংশে ৪২ কিলোমিটার খননের বিষয়ে সচিব বলেন, আমরা নওগাঁ থেকে দিনাজপুর খনন করেছি। তাদের ওই ৪২ কিলোমিটার খনন করতে অনুরোধ জানিয়েছি। তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এ কাজটি করবেন।

নৌ সচিব জানান, ভারতের জোগিগোপা ও বাংলাদেশের বাহাদুরাবাদ (জামালপুর) পোর্ট অব কলভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর আগে চিলমারী পোর্ট অব কলভুক্ত করা হয়েছিল। এখন বাহাদুরাবাদ পোর্ট অব কলভুক্ত করায় ভারত ও ভুটান থেকে যেসব পণ্য উত্তরবঙ্গে আসবে, সেগুলো চিলমারী ও অন্য রুটের পণ্য বাহাদুরাবাদ আসতে পারবে। এতে নারায়ণগঞ্জ আসার খরচ কমে আসবে।

নারায়ণগঞ্জ ও পানগাঁও পোর্ট ট্রান্সশিপমেন্ট পয়েন্ট নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে আব্দুস সামাদ জানান, আমরা সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো।  

নৌ প্রটোকল চুক্তির অধীনে ইছামতী নদী আনা হলে দু’দেশ লাভবান হবে। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং সমীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মুুন্সিগঞ্জের সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টকে এক্সটেনডেন্ট পোর্ট করার বিষয়ে সম্মত হয়েছি।

সচিব জানান, জাহাজের নাবিকদের নির্দিষ্ট পরিচয়পত্রে কিউআর বারকোড ব্যবহার করার প্রস্তাব করেছি। তারা এ প্রস্তাবটি তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।

বাংলাদেশের ক্রুদের ভারতীয় বন্দরে নামার অনুমতির বিষয়ে সচিব বলেন, বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী চলবে। বর্তমানে জরুরি প্রয়োজনে দুই-তিনজন ক্রু নেমে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও নিত্যপণ্য কিনতে পারে। তবে যেহেতু নিরাপত্তার বিষয় আছে, তাই আমরা পরিচয়পত্রে কিউআর কোড ব্যবহারের প্রস্তাব করেছি। বিষয়টি ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়।

বাংলাদেশের জাহাজের ক্রুদের বিনোদনের জন্য একটি ড্রপ ইন সেন্টারের সুবিধা তৈরি করার অনুরোধে ভারত ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার সংক্রান্ত চুক্তির ৬ (১) ধারায় নাকুগাঁও ও ডালু স্থলবন্দরকে অন্তভূক্ত করা হয়েছে। এতে ভারতের আসাম ও ভুটান থেকে এ রুটে পণ্য আসতে পারবে।

চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য আনা-নেওয়ার বিষয়ে সচিব বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত গ্যাটের স্বাক্ষরকারী হিসেবে ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্যের ওপর কাস্টমস প্রযোজ্য নয়। তবে অপারেশনাল ও সার্ভিস চার্জ প্রযোজ্য। মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে বিদ্যমান স্ব স্ব ট্যারিফ সিডিউল অনুযায়ী চার্জ আদায় করা হবে। সড়ক পরিবহনের আইন অনুযায়ী সড়ক চার্জ হবে।  

তবে সব চার্জই যৌক্তিক ও বাস্তবভিত্তিক হবে। এ চুক্তির আওতায় ই-লক ব্যবহার হবে। অর্থাৎ ভারত থেকে কোনো পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে আসার পর কাস্টমস সেটিকে ই-লক করবে। ওই পণ্য আখাউড়া দিয়ে গেলে সেই বন্দরে ই-লক খুলে দেবে। এছাড়া এসব পণ্য আখাউড়া বা অন্য বন্দরে যেখানে যাক না কেন বাংলাদেশের ট্রাক-টেইলর বা নৌযান ব্যবহার করবে।

ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্যের খরচ সম্পর্কে সচিব বলেন, বিদ্যমান ট্যারিফ সিডিউল অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দর তাদের ট্যারিফ, সড়ক পরিবহন তাদের ট্যারিফ আদায় করবে। আমাদের বন্দরে আসা নৌযানের জন্য যে চার্জ দিতে হয়, ভারতের চার্জ এর চেয়ে কম হতো না। তবে ভারতীয় পণ্য যখন যাবে তখন কোন রুটে, কোন পয়েন্টে কত চার্জ পড়বে তা জানা যাবে। জানুয়ারিতে ভারত ট্রায়াল রান করে দেখবে কোনো সমস্যা আছে কিনা। ভারত থেকে পণ্য চট্টগ্রাম এসে যেসব রুটে রয়েছে সেগুলোতে যাবে।

পর্যটকদের অন অ্যারাইভাল ভিসার বিষয়ে বাংলাদেশের নৌ সচিব বলেন, দু’দেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে অন-অ্যারাইভাল ভিসা দরকার। আমরা প্রস্তাব করেছি। ভারতের নৌসচিব সম্মত হয়েছে। তবে দু’দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আমরা জানাবো যাতে পর্যটকদের এ ভিসা দিতে পারি।

দু’দেশের মধ্যে আলোচনা খুবই আন্তরিক ও ফলপ্রসু হয়েছে উল্লেখ করে ভারতের নৌ সচিব গোপাল কৃষ্ণ বলেন, বিগত চার বছরে তিনটি চুক্তি হয়েছে। আমরা নৌ যোগাযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে খুবই দ্রুত এগিয়েছি। নৌ-যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও নেতৃত্বের পর্যায়ে রয়েছে।

বৈঠকে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তা দু’দেশই যৌক্তিকভাবে বিবেচনা করবে জানিয়ে তিনি বলেন, আলোচনায় আমরা খুবই সন্তুষ্ট। চার্জ নিয়ম অনুযায়ী হবে। আমরা দুটি ট্রায়াল রান করবো। প্রথমটি জানুয়ারিতে। এর পরই দ্রুততার সঙ্গে চালু করতে চাই। এর সুবিধা জনগণ পাবে। সেজন্য দু’দেশই একসঙ্গে কাজ করবে। ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবই ভালো এবং আরও শক্তিশালী হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৯ 
এমআইএইচ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।