ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পাইলিং ছাড়াই ব্রিজ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৯
পাইলিং ছাড়াই ব্রিজ! পাইলিং ছাড়াই নির্মাণ হচ্ছে ব্রিজগুলো। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় বর্লি পাইলিং ছাড়াই ব্রিজ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় ব্রিজটির নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। 

নির্মাণকাজ বন্ধ করার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আদিতমারীর ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর আলী।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণ যোগাযোগ সচল রাখতে উপজেলার বিভিন্ন সড়কের ওপর সাতটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

দরপত্রের মাধ্যমে এসব ব্রিজ নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করে কার্যাদেশ দেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, যার প্রেক্ষিতে নির্মাণকাজ শুরু করেন ঠিকাদাররা।  

এর মধ্যে উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গন্ধমরুয়া দোলার ওপর ২৯ লাখ ১৭ হাজার ৪শ’ টাকা ব্যয়ে ব্রিজ নির্মাণের কার্যাদেশ পান গোলাম রব্বানী সোহেল নামে এক ঠিকাদার। কিন্তু ব্রিজটি কমিশনে কিনে নির্মাণকাজ শুরু করেন শামীম আলম নামে স্থানীয় আরেক ঠিকাদার। ব্রিজের স্থায়িত্ব রক্ষার বর্লি পাইলিং না করেই এর সিসি ঢালাই শেষ করেন ঠিকাদার। ফলে ব্রিজটি সামান্য স্রোতেই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।  

ব্রিজটির সিসি ঢালাই কাজে আকারে বড় ও মৃত পাথর ব্যবহারের অভিযোগে সম্প্রতি পরিদর্শনে গিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মনসুর আলী।  

এছাড়া বাকি ছয়টি ব্রিজেরও নির্মাণকাজ মাত্র শুরু হলেও করা হচ্ছে না বর্লি পাইলিং। ঠিকাদাররা জানান, বর্লি পাইলিং না দিলে সেই খরচ ঠিকাদারকে দেওয়া হবে না। যতটুকু কাজ ততটুকু বিল পান ঠিকাদাররা। তাহলে বেঁচে যাওয়া এ অর্থ কার পকেটে যাবে- প্রশ্ন অনেকেরই।  
ব্রিজে মানসম্মত পাথর ব্যবহার হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।  ছবি: বাংলানিউজনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বাংলানিউজকে বলেন, ২৯ লাখ টাকার একটি ব্রিজে বর্লি পাইলিংয়ে ব্যয় ধরা আছে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। কাজ যতটুকু হবে বিল ততটুকুই পাবো। পাইলিং না করলে সেই অংশের বিল ঠিকাদারকে দেওয়া হয় না। সেই টাকা কোথায় যাবে তা অফিস ভালো জানে।  

তিনি বলেন, কার্যাদেশে বর্লি পাইলিং ধরা থাকলেও বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তা করা হচ্ছে না। পাইলিং ছাড়া ব্রিজের স্থায়িত্ব কতটুকু সেটা প্রকৌশলীরা ভালো বলতে পারবেন। প্রয়োজন না থাকলে কার্যাদেশে উল্লেখ করে সরকার অর্থ বরাদ্দ দিল কেন?

আদিতমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মফিজুল হক বাংলানিউজকে বলেন, গন্ধমরুয়া দোলায় মাটির গুণাগুণ ভালো থাকায় বর্লি পাইলিং দেওয়া হয়নি, যার অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। তবে ওই ব্রিজ নির্মাণে ব্যবহৃত নিম্নমানের পাথর অপসারণ করতে ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্রিজ নির্মাণকাজের এস্টিমেট (হিসাব) ইউএনওর নির্দেশ ছাড়া কাউকে দেখানো যাবে না। যেসব ব্রিজের বর্লি পাইলিং প্রয়োজন নেই সেখানে দেওয়া হবে না এবং এর জন্য বরাদ্দ অর্থ ফেরত পাঠানো হবে।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর আলী বাংলানিউজকে বলেন, পাথর সমস্যার কারণে একটি ব্রিজের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বর্লি পাইলিংয়ের বিষয়টি জানা নেই। তবে এস্টিমেট অনুযায়ী নির্মাণকাজ শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি প্রকৌশলী মনে করেন বর্লি পাইলিংয়ের প্রয়োজন নেই, তবে সেই অর্থ ফেরত দিতে প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারের কাছে চুক্তিনামা করে নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৯
একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।