ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাজাকারের তালিকা বিশ্লেষণ: গোলাম আযমের নাম পাঁচবার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯
রাজাকারের তালিকা বিশ্লেষণ: গোলাম আযমের নাম পাঁচবার

ঢাকা: ৬৫৯ পৃষ্ঠার তালিকায় নাম রয়েছে ১০ হাজার ৭৮৯ জনের। এর মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের শীর্ষ নেতা গোলাম আযমের নাম রয়েছে পাঁচবার। সেই সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ নেতা খাজা মঈনুদ্দীন ও খান-এ-সবুরের নাম রয়েছে তিনবার করে। রয়েছে ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদেরও নামও।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত হয় যুদ্ধাপরাধীদের নামের প্রথম তালিকা। ওই তালিকা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

সাড়ে ছয় শতাধিক পৃষ্ঠার তালিকা পুরোটাই এলোমেলো। কোথাও বাংলায়, কোথাও আবার ইংরেজিতে নাম লেখা রয়েছে। রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, আল মুজাহিদী বাহিনীর সদস্যদের নাম আলাদা করা নেই তালিকাতে। কার কি অপরাধ সেটিরও কোনো উল্লেখ নেই  তালিকায়। উল্টো তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের নামও। যা নিয়ে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) দিনভর আলোচনা চলে চায়ের টেবিলে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বাংলানিউজকে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তালিকা কোনো প্রকার পরিবর্তন ছাড়াই প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা অভিযোগগুলো আমলে নিচ্ছি। অবশ্যই এগুলো সংশোধন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, একই নামে অনেক লোক থাকতে পারে। নাম দেখে বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

আরও পড়ুন...বরিশালে রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম!

একই নাম বারবার!
জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের নাম তালিকায় পাঁচ জায়গায় মিলেছে। যার প্রতিটিতেই তার একই ঠিকানা দেওয়া রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লিগের নেতা খাজা মঈনুদ্দিন ও খান এ সবুরের নাম মিলেছে তিনবার করে। সেখানেও একই ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রাজাকারের তালিকায়!
তালিকাভুক্ত ও ভাতাপ্রাপ্ত অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম উঠেছে এসেছে এ তালিকায়। এরমধ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) জেলার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তীর বাবা অ্যাডভোকেট তপন চক্রবর্তী ও দাদী ঊষা রাণী চক্রবর্তীর নাম রাজাকারের তালিকায় এসেছে।

এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের বক্তব্য তুলে ধরে মনীষা চক্রবর্তী জানান, তার বাবা গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং ভাতাও পান। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তার বাবা ও দাদির নাম রাজাকারের তালিকায় প্রকাশ করা হয়েছে।  

তিনি এই তালিকা বাতিলের পাশাপাশি যারা তালিকা তৈরিতে সহায়তা করেছেন তাদের শাস্তি দাবি জানিয়েছেন।  

রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা মিহির লাল দত্ত, জিতেন্দ্র লাল দত্ত, বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহে আলমের বাবা ডা. সাইয়েদউদ্দিন তালুকদারের নাম তালিকায় রয়েছে।

আশ্চর্যজনকভাবে রাজশাহীর তালিকায় নাম এসেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপুর। এর পাশাপাশি নাম রয়েছে রাজশাহীর তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অ্যাডভোকেট মহসিন আলী ও অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের।

নাম রয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর খালেদা জিয়া সরকারের রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস ও জিয়া সরকারের প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমানের। আরও নাম রয়েছে চাকমা সার্কেল প্রধান রাজা ত্রিদিব রায়, বিএনপি নেতা জুলমাত আলী খান, জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুস সোবহানের।

বিচারের অপেক্ষায় থাকা ৫৭ জনের নাম
যুদ্ধাপরাধের বিচারের অপেক্ষায় থাকা ৫৭ জনের নাম রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তালিকায়। যাদের মধ্যে রয়েছেন নুরুল আমিন, রাজা ত্রিদিব রায়, একিএম শফিকুল ইসলাম, সৈয়দ সাজ্জব হোসেন, হামিদুল হক চৌধুরী, মাহমুদ আলী, কাজী এ কাদের, ওয়াহিদুজ্জামান, খাজা খায়রউদ্দিন, অং শ্যা প্রিউ চৌধুরী, ওবায়দুল্লাহ মজুমদার, একেএম শামসুল হক, আলমগীর, সিদ্দিক প্রমুখ। তারা স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় নেতা এবং শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলে জানা যায়।

আরও যেসব নাম রয়েছে
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তালিকায় পলাতক দালালদের ৩২ জন জামিনে মুক্ত ৩৫৮ জনের নাম রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে দখলদারির প্রশংসাকারী ৫৩ জন অ্যাডভোকেটের নাম রয়েছে তালিকায়। এর পাশাপাশি বিশেষ ট্রাইব্যুনালের অধীনে আটকাদেশপ্রাপ্ত ৩৩৭ জন ও পলাতক ১১৭ জনের নাম রয়েছে। এর পাশাপাশি পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির উপ-নির্বাচনের জন্য যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন তাদের প্রস্তাবক ও সমর্থকসহ তালিকা। এর পাশাপাশি নিষিদ্ধ ঘোষিত দলের ৬৯ জন বাঙালি রাজনীতিবিদের তালিকাও রয়েছে এখানে। এ তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা বাংলাদেশ ত্যাগ করে বিদেশে পলাতক আছেন।

এছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কর্তৃক অভিযোগ, তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত, মামলা প্রত্যাহার ও অব্যাহতি, স্থানীয় পুলিশের তদন্তে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, ক্ষমা মঞ্জুরসহ বিভিন্ন মন্তব্য লেখা প্রচুর ব্যক্তির নাম রয়েছে তালিকায়।

এসব বিভ্রান্তমূলক তথ্যের বিষয়ে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বাংলানিউজকে বলেন, রাজাকারের তালিকা বা যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা প্রকাশের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় এটি সম্পন্ন করা হয়েছে তা নিয়ে সমালোচনা আছে। তারা আমলা দিয়ে এ তালিকা প্রণয়ন করেছেন। এটা আমলাদের কাজ নয়। এর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের গবেষক বা বিশেষজ্ঞ কাউকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। যার ফলে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় এ তালিকা নতুন করে যাচাই-বাছাই করে আবারও প্রকাশ করতে হবে এবং এ কাজটি সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯
ডিএন/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।