ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

১৭ ডিসেম্বর বাগেরহাট মুক্ত দিবস 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯
১৭ ডিসেম্বর বাগেরহাট মুক্ত দিবস 

বাগেরহাট: ১৭ ডিসেম্বর বাগেরহাট মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদারমুক্ত হয় বাগেরহাট।  
দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা হানাদারমুক্ত হতে থাকে। 

একপর্যায়ে যৌথবাহিনীর প্রচেষ্টায় ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মাধ্যমে শত্রুমুক্ত হয় বাংলাদেশ। পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে প্রাণের বাংলাদেশ।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করলেও রাজাকার-আলবদরবাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা পাকিস্তান সরকারের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এ কে এম ইউসুফের জন্মস্থান হওয়ায় বাগেরহাট রয়ে যায় রাজাকার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। এ কে এম ইউসুফের দোসর রাজাকারদের খুলনা অঞ্চল প্রধান রজব আলী ফকিরের নেতৃত্বে বাগেরহাটে তখনও ব্যাপক লুটপাট,  মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা এবং নির্মম নির্যাতন চলছিল।  

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন র্বোড মাঠে ছিল রাজাকারদের ক্যাম্প। বর্তমান জেলা পরিষদ ডাক বাংলো ছিল রাজাকারদের বিচারালয় এবং টর্চার সেল। স্বাধীনতার পরে যেখানে স্থাপন করা হয়েছে বদ্ধভূমি স্মৃতিসৌধ। এর উল্টো পাশে ভৈরব নদীর পাড়ে রজব আলীর নির্দেশে তৈরি করা হয় ফায়ারস্কট বা কসাই খানা। যেখানে সম্প্রতি শহীদদের স্মরণে বদ্ধভূমি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।

এদিকে সারাদেশ যখন শত্রুমুক্ত তখন বাগেরহাট শত্রুদের দখলে থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা উদগ্রীব ও অস্থির হয়ে পড়েন। প্রাণপন চেষ্টা চলতে থাকে বাগেরহাট শত্রুমুক্ত করতে। শুরু হয় পরিকল্পনা। ১৬ ডিসেম্বর বাগেরহাট শহর দখলের পরিকল্পনা হয়। ১৭ ডিসেম্বর ভোরে বাগেরহাট এলাকায় মুক্তিবাহিনীর অন্যতম নেতা রফিকুল ইসলাম খোকনের নেতৃত্বে রফিকবাহিনী শহরের মুনিগঞ্জ এলাকা দিয়ে। ক্যাপ্টেন তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে তাজুলবাহিনী শহরের উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে। সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়া উদ্দিনের বাহিনী দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে সম্মিলিতভাবে বাগেরহাট শহর দখলের জন্য আক্রমণ করেন।

বাগেরহাট সদর থানায় রাজাকার ক্যাম্পে অবস্থানরত রাজাকার-আলবদর ও পাকিস্তানিবাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে রাজাকার রজব আলী ফকিরের নেতৃত্বে হানাদাররা বাধ্য হয়ে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে পালিয়ে যায়।

১৭ ডিসেম্বর দুপুরে হানাদারমুক্ত হয় বাগেরহাট। বিজয়ের আনন্দে ফেটে পড়েন সাধারণ মানুষ। উল্লাস আর আনন্দে বাগেরহাটবাসী পান মুক্তির স্বাদ। মুক্তিকামী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা উত্তোলন করেন জাতীয় পতাকা।

বাগেরহাট শহর মুক্তি সমরে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা নকীব সিরাজুল হক বলেন, ১৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে রাজাকার রজব আলী বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্যরা পালিয়ে যায়। কেউ কেউ আত্মসমর্পণও করে। সমগ্র বাগেরহাট মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। আমরা বিজয়ের পতাকা উড়াই স্বগৌরবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।