ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চীন-যুক্তরাষ্ট্র থেকে সমানভাবে ফায়দা নেবে বাংলাদেশ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৯
চীন-যুক্তরাষ্ট্র থেকে সমানভাবে ফায়দা নেবে বাংলাদেশ বিআরআই-আইপিএস

ঢাকা: চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস) উদ্যোগের সঙ্গে সমানভাবে থাকবে বাংলাদেশ। শান্তি ও উন্নয়নের স্বার্থে দুই বৃহত্তর শক্তির জোটেই যুক্ত থাকা প্রয়োজন। এই দুই উদ্যোগকে একে অপরের পরিপূরক বলে মনে করছে বাংলাদেশ।

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে ভৌগলিক অবস্থানের জন্যই বাংলাদেশ ঘিরে দিন দিন বিশ্বের বৃহত্তর শক্তিগুলোর আগ্রহ বাড়ছে। বিশেষ করে ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চল ঘিরে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শক্তির স্নায়ু যুদ্ধও চলছে।

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে চীন ইতোমধ্যেই বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। চীনের এই উদ্যোগকে আধিপত্য বিস্তারের  কৌশল হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগর অঞ্চল ঘিরে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। সে কারণে বিআরআইর পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে এনেছে ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস)। আর আইপিএসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এরই মধ্যে যুক্ত হয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারতও।

২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিআরআই উদ্যোগে যোগ দেয় বাংলাদেশ। চীন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে এই উদ্যোগকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। তবে বিআরআইতে যোগ দেওয়ার পরেই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আইপিএসে যোগ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি চাপ বাড়তে থাকে। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ এ কৌশলেও যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সমুদ্র নিরাপত্তা, নৌ স্বাধীনতা, সমুদ্র অঞ্চল উন্নয়ন ইত্যাদি এই উদ্যোগে  প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এতে অংশ নেওয়া দেশগুলো সমুদ্র অঞ্চল উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তাও পাবে।

বিআরআই ও আইপিএস উদ্যোগকে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অধিপত্য বিস্তার হিসেবেই দেখছেন। তাছাড়া, আইপিএস জোটে যুক্তরাষ্ট্রের বলয়ে থাকা ভারত বিআরআই উদ্যোগকে সুনজরে দেখছে না। গত নভেম্বর মাসে ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব খোলামেলাভাবে সেটা জানিয়েও দিয়েছেন। তিনি বিআরআইর বিরোধিতা করে বলেন, বিআরআই উদ্যোগ আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে করা হয়নি। এটা সম্মিলিত কোনো উদ্যোগ নয়। এই উদ্যোগ থেকে সুরক্ষিত থাকা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তবে চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিরাপত্তাবিষয়ক সহকারী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী র‍্যান্ডল শ্রাইভার ঢাকা সফরকালে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইপিএস উদ্যোগ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের সঙ্গে কোনোভাবেই সাংঘার্ষিক নয়। আইপিএস এই অঞ্চলের সব দেশের জন্যই উম্মুক্ত। এই উদ্যোগে যুক্ত দেশগুলো নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি  প্রভৃতি ক্ষেত্রে লাভবান হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চীনের বিআরআই ও যুক্তরাষ্ট্রের আইপিএস উদ্যোগে সমানভাবে থাকতে আগ্রহী বাংলাদেশ। শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রেখে ও নিজ দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দুই উদ্যোগের সঙ্গেই থাকবে বাংলাদেশ। এছাড়া পররাষ্ট্র নীতি অনুযায়ী কোনো দেশের সঙ্গে সংঘাতেও জড়াতে চায় না তারা। এই দুই উদ্যোগকে বৃহত্তর দেশগুলো যেভাবেই দেখুক না কেন, বাংলাদেশ উভয় উদ্যোগ থেকেই সুযোগ নিতে চায়।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম স্পষ্টভাবে বলেছেন, বিআরআই ও আইপিএস উদ্যোগকে আমরা সাংঘর্ষিক মনে করি না। এটা একে অপরের পরিপূরক হিসেবেই দেখতে চাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে  বাংলাদেশের প্রতি বিদেশি শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর আগ্রহ অনেক বেশি। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দৃষ্টি রয়েছে এখানে।   এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি নিয়েছে। আর চীন নিয়েছে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ। তবে আমাদের উভয় উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। বৃহত্তর দুই দেশের এই উদ্যোগগুলো থেকে কীভাবে আমরা  লাভবান হতে পারি, সেটা মাথায় রেখেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৯
টিআর/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।