ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অবৈধ ঘেরে মেঘনায় চলছে মাছ শিকার

সাজ্জাদ হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
অবৈধ ঘেরে মেঘনায় চলছে মাছ শিকার মেঘনায় ঝোপ পাতা। ছবি: বাংলানিউজ

মুন্সিগঞ্জ: মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার মেঘনা নদীতে গাছের ডালপালা ফেলে, চারপাশে জালের ঘের দিয়ে চলছে (স্থানীয়ভাবে ‘ঝোপ’ নামে পরিচিত) মাছ শিকার। ঝোপ দেওয়ার ফলে মেঘনায় নৌ-চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে জীববৈচিত্র্য । 

স্থানীয়দের অভিযোগ, মেঘনায়  ঝোপের মাধ্যমে মাছ শিকারে জড়িত স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন।

সরেজমিনে দেখা যায়, গজারিয়া উপজেলার চর বলাকী, ইসমানির চর, গোয়ালগাও, জামালদি গ্রামের মেঘনা নদীর বিভিন্ন অংশে অবৈধভাবে মাছ শিকারের জন্য ঝোপ তৈরি করা হয়েছে।

কোথাও কোথাও মাঝ নদীতে ঝোপ দিয়ে চলছে মাছ শিকার। ঝোপ তৈরির শুরুতে নদীতে গাছের ডালপালা ফেলা হয়। পরে চারদিকে বাঁশের বেড়া ও কচুরিপানা দেওয়া হয়। এরপর ঝোপের  ভেতরে মাছের খাবার দিয়ে ঝোপের চারদিকে সূক্ষ্ম জাল দিয়ে ঘের দেওয়া হয়। যাকে স্থানীয়ারা বলে ঝোপ। এর ভেতরেই চলে পোনাসহ মাছ শিকার।  

গজারিয়া উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৮০টির মতো ঝোপ আছে। তবে এলাকাবাসী ও মৎস্যজীবীদের হিসেব অনুযায়ী মেঘনায় কমপক্ষে দুই শতাধিক ঝোপ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়ালগাও গ্রামের এক বাসিন্দার অভিযোগ, বর্ষাকাল ছাড়া সারা বছরই মেঘনা নদীতে ঝোপ থাকে। একটি বড় ঝোপ থেকে প্রায় তিন থেকে চার লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়। এ টাকার ভাগ স্থানীয় নেতাদেরও প্রশাসনের লোকদের  দিতে হয়।  
মেঘনায় ঝোপ পাতা।  ছবি: বাংলানিউজস্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই মেঘনা নদীতে ঝোপ দিয়ে মাছ শিকার হচ্ছে। এগুলো দেখার কেউ নেই। এতে মৎস্য সম্পদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালালে নদীতে ঝোপ দেওয়া বন্ধ হতে পারে।  

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, নদীতে ঝোপ দিয়ে মাছ শিকার করা অবৈধ। এ মাছ শিকারের সঙ্গে আমাদের অনেক প্রভাবশালীরাও জড়িত। এ বিষয়টিতে তেমনভাবে নজর দেওয়া হয়নি। নদীতে ঝোপ তৈরি করে মাছ শিকারের কারণে নদী ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছে।  ঝোপের মাধ্যমে মাছ শিকারের কারণে জীববৈচিত্র্যে ও নৌ-চলাচল ব্যাহত হয়। প্রশাসন যদি এ বিষয়টি আমলে নেন তাহলে উচ্ছেদ করা যেতে পারে।

গজারিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসলাম হোসেন শেখ বাংলানিউজকে জানান, কিছুদিন আগে নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান একটি সভায় নদী দখল মুক্ত করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। তার অংশ হিসেবে আমরা অভিযান শুরু করেছি। আমাদের আসলে লজিস্টিক সাপোর্ট সেই পরিমাণ নেই। এসব উচ্ছেদ করার জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিক, অর্থ সাপোর্ট প্রয়োজন। আমাদের শুধু উচ্ছেদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত বছর মেঘনা ও কালিপুরা এলাকার ভেতর দিয়ে যেই শাখা নদীটি বয়ে গেছে সেখানে ১০৩টির মতো ঝোপ ছিল। কিন্তু বর্তমানে চলতি বছর সেই সংখ্যা কমে প্রায় ৮০টির মতো হবে।
মেঘনায় ঝোপ পাতা।  ছবি: বাংলানিউজএ সংখ্যাটি কমে যাওয়ার কারণ হলো, স্থানীয় এলাকাবাসী ও জেলেদের এ বিষয়ে সচেতন করা হয়েছিলো।

তিনি বলেন, যারা এখানে ঝোপ দিয়ে  মাছ শিকার করে তারা স্থানীয় কেউ নন। অন্য এলাকা থেকে তারা জাল ও নৌকাসহ এখানে আসে। তাদের মূলত ভাড়া করা হয়ে থাকে। স্থানীয়রা এখানে বিনিয়োগ করে এবং তারা মূলত ঘেরাও এর কাজ করে থাকে। এরপর দুই ভাগে ভাগ হয়ে থাকে।

জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বাংলানিউজকে জানান, মেঘনায় ঝোপ তৈরি করে মাছ শিকারের বিষয়টি আমাদের নলেজে নেই। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন মৎস্য অফিসকে সহযোগিতা করবে। গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) এ ব্যাপারটি দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলবো।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।