ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিভক্তির পর বেপরোয়া মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
বিভক্তির পর বেপরোয়া মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ‘মুক্তিযুদ্ধ’ শব্দটিকে নামের সঙ্গে যুক্ত করে দেশে রয়েছে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠন। গত বছরের শুরুর দিকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলন জোরদার হলে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এসব সংগঠনও রাজপথে সক্রিয় হয়। বিক্ষিপ্তভাবে সভা-সমাবেশে অংশ নেয় তারা। সেসময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড শাহবাগে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয়। পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীনকে মুখপাত্র করে গঠিত হয় ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মর্সূচি পালন করে তারা। সেই মঞ্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি করা হয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল (অব্যাহতি প্রাপ্ত)।

আর সাধারণ সম্পাদক করা হয় ছাত্রলীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ-সম্পাদক আল মামুনকে। সাংগঠনিক কার্যক্রমে মুখপাত্র ও ঢাবি শাখার মধ্যে বিরোধ তৈরি হলে বুলবুল-মামুন নিজেদের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করে বিভিন্ন শাখার কমিটি দেয়। এরপর চলে পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, বিভিন্ন ইস্যুতে তারা মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন করতো। তারা ঢাকার দুই মেয়র, জাহাঙ্গীরনগর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক, যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু, ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গার কুশপুতুল দাহ করেছে। মঞ্চটি গত ৪ অক্টোবর ডাকসু ক্যাফেটেরিয়াতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে। এরপর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অর্থ নিয়েও মতভেদ তৈরি হয় নেতাদের মাঝে।

এসব কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির ওপর হামলায়ও অংশ নেয় তারা। বুলবুল-মামুনের নেতৃত্বে মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রদলের ওপর হামলা করা হয়। কোটা আন্দোলনকারী বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাদের ওপর কয়েক দফা হামলা করা হয়।

সংগ্রাম পত্রিকায় যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ উল্লেখ করায় পত্রিকাটির অফিস ভাঙচুর করে তারা। এসব কার্যক্রমের কারণে তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কারের কথা বলেন মঞ্চের মুখপাত্র অধ্যাপক জামাল উদ্দীন। তবে তিনিও ডাকসু ভিপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তার রুমে তালা লাগিয়ে দেন। দুর্নীতির দায়ে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ হারানো শোভন-রাব্বানীকে স্বপদে বহালের দাবিতে মধুর ক্যান্টিনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এরপর সর্বশেষ বুলবুল-মামুন অংশ ডাকসু ভবনে হামলা-ভাঙচুর চালিয়ে সর্বত্র আলোচনায় আসে।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের এসব কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে মুখপাত্র অধ্যাপক জামাল উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, ওরা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেউ না। ওদের কার্যক্রমের কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে। আপনারা তাদের মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশ না লিখে বহিষ্কৃত অংশ লিখবেন। আমরা বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিবাদে টুঙ্গিপাড়ায় পদযাত্রা করেছি।

ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের বাবুর্চির টাকা না দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, মঞ্চের খরচ তিনি বহন করেন। টাকা পরিশোধ করবেন। বুলবুল-মামুন বাবুর্চিকে দিয়ে প্রক্টর অফিসে এ বিষয়ে অভিযোগ করিয়েছে বলে জানান তিনি।

মঞ্চের বুলবুল-মামুন কমিটির অধিকাংশ নেতাকর্মীর মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
এসকেবি/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।