ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘সংবাদ প্রকাশে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা দুর্নীতি সহায়ক’ 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২০
‘সংবাদ প্রকাশে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা দুর্নীতি সহায়ক’ 

ঢাকা: স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে গবেষণা, জরিপ ও অন্য কোনো তথ্য এবং সংবাদ সংগ্রহের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহণ, বিনা অনুমতিতে স্থিরচিত্র বা ভিডিওচিত্র ধারণ না করা এবং সংগৃহীত তথ্য প্রকাশের আগেই বস্তুনিষ্ঠতার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সম্মতি গ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক নির্দেশনায় গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংবাদ প্রকাশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাক দুর্নীতি সহায়ক বলে অভিহিত করেছে এ সংস্থা। 

রোববার (১২ জানুয়ারি) দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আরোপ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সরকারি সব স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে পাঠানো এক চিঠিতে এসব নির্দেশনা দেয়।

সম্প্রতি দেশের কয়েকটি হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জমাদি কেনায় দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হয়েছে।

এর মধ্যেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশনা এলো। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন মহলে।  

এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১৪ জনুয়ারি) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এখন থেকে সব সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা, জরিপ ও অন্য কোনো উদ্দেশ্যে তথ্য বা সংবাদ সংগ্রহে অনুমতি গ্রহণের বাধ্যবাধকতা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি বর্তমান সময়ে অচিন্তনীয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষের ঔপনিবেশিক ও নিবর্তনবাদী মানসিকতার মাধ্যমে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিতে সরকার ঘোষিত ও আইনগতভাবে প্রতিষ্ঠিত নাগরিক অধিকার নিশ্চিতে অপ্রতিরোধ্য অন্তরায় সৃষ্টি করবে।

‘শুধু তাই নয়, হাসপাতালের তথ্যের ‘বস্তুনিষ্ঠতা’ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সম্মতি গ্রহণের যে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে, তা যেমন স্বাস্থ্য খাতে সব প্রকার গবেষণা ও তথ্য প্রকাশের দ্বার রুদ্ধ করবে, তেমনি এ খাতে সব প্রকার অনিয়ম, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদের আত্মসাৎ ও অপচয়ের সুরক্ষা দেবে। আপাতদৃষ্টিতে এটিকে তথ্য যাচাই করার মতো হাস্যকর যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হলেও প্রকৃত অর্থে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই এ ধরনের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বলে মনে করা অমূলক নয়। ’

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসাপাতালের কেনাকাটায় লোমহর্ষক দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনার তথ্য গণমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এ অবস্থায় এই নির্দেশনার প্রকৃত উদ্দেশ্য কী এ ধরনের তথ্য প্রকাশের সম্ভাবনা চিরতরে বিনষ্ট করে দুর্নীতির মহোৎসবের সুযোগ সৃষ্টি করা? এমন প্রশ্ন তোলা মোটেই অমূলক নয় বলে মনে করে টিঅাইবি।

সংস্থাটির ভাষ্য, যেখানে সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত বিভিন্ন সময়ে উত্থাপিত অভিযোগসমূহের যথাযথ তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা, তার পরিবর্তে এই নির্দেশনা কীভাবে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দুর্নীতির প্রতি ‘শূন্য সহনশীলতা’র সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিবেচিত হতে পারে তা বোধগম্য নয়। অবিলম্বে নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি প্রদর্শনের দাবি জানায় টিআইবি।

‘সরকারি হাসপাতালের দর্শনার্থী ব্যবস্থাপনা’ শিরোনামের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, রোগীর নিরাপত্তা, গোপনীয়তা ও হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মতো অপরিহার্য বিষয়সমূহ যথানিয়মে পরিপালিত হবে, এটা আমাদের সবার কাম্য। কিন্তু তা করতে গিয়ে হাসপাতালের সেবার মান সংক্রান্ত বিষয়ে গবেষণা, জরিপ বা অন্য উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহের ওপর বাধা-নিষেধ আরোপ এবং অনুমতি ব্যতিরেকে হাসপাতালের অভ্যন্তরের রোগী বা স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের স্থিরচিত্র বা ভিডিও ধারণের নিষেধাজ্ঞার মতো নির্দেশনা অবিবেচনা প্রসূত।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২০  
এমআইএইচ/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।