ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুই সন্তানকে বাঁচাতে ভ্যানচালক বাবার আকুতি

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২০
দুই সন্তানকে বাঁচাতে ভ্যানচালক বাবার আকুতি

সিরাজগঞ্জ: ১৪ বছর ভ্যান চালিয়ে যা জমিয়েছিলেন তার সবটাই গেছে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত দুই সন্তানের চিকিৎসায়। চার বছর ধরে দুরারোগ্য এ রোগে আক্রান্ত সন্তানদের চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে ভ্যানচালক আব্দুল লতিফ এখন নিঃস্ব। একাধিক এনজিও ও দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে রয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ঋণ। দুই সন্তানের মধ্যে মৃত্যুপথযাত্রী মেয়ে বর্ষার (১১) আশা ছেড়ে দিলেও ছেলে ওবাইদুলকে (৭) বাঁচাতে সাহায্যের আকুতি জানিয়েছেন তিনি। 

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের মশিপুর গ্রামের হতদরিদ্র ভ্যানচালক আব্দুল লতিফ ও আঞ্জুয়ারার দুই সন্তান বর্তমানে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। মেয়েটি শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছে না।

রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই বেডে চিকিৎসা নিচ্ছে ওবাইদুল। কিছুটা সুস্থ দেখা গেলেও তাকে নিয়েও রয়েছে আশঙ্কা।  

গত বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে সরেজমিনে হাসপাতালে গেলে কান্নাজড়িত কন্ঠে আঞ্জুয়ারা বলেন, ‘আমার বেটা-বেটিকে আপনারা বাঁচান। মেয়েটা খালি চাইয়্যা থাহে, কোনো কতা কয় না, অর চোহের দিক আর চাইবার পারি না। ক্যান যে আল্লায় আমাগোর মতো গবিব মাইনসের ঘরে এরহম কঠিন ব্যারাম দিলো? আমাগোর সব শ্যাষ অইয়্যা গ্যাচে-তাও বেটা-বেটি সুস্থ অইলো না। ’

পাশে বসে লুঙ্গির খোটে চোখ মুচছিলেন বাবা আব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, আল্লায় দু’টি সন্তান দিয়েছিলেন আমাদের। মেয়েটাকে আর বাঁচাতে পারবো না। কষ্টের চেয়ে আল্লাহ ওকে তাড়াতাড়ি যেন নিয়ে যায়। কিন্তু ছেলেটাকে বাঁচাতে চাই। এখনও চলাফেরা করতে পারছে। কিন্তু মাসে মাসে রক্ত দিতে হবে। ডাক্তার বলছে সিঙ্গাপুর নিয়ে অপারেশন করতে পারলে ও ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু সিঙ্গাপুর তো দূরের কথা, ঢাকায় নেওয়ার মতো গাড়ি ভাড়াও আমাদের কাছে নেই।

চার বছর আগের সুখকর দিনগুলোর কথা উল্লেখ করে আব্দুল লতিফ বলেন, দুই শতক বাড়িতে ছোট্ট একটি টিনের ঘরে স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে আমাদের সংসার ভালোই চলছিল। জমিজমা-সম্পত্তি না থাকলেও সংসারে অভাব ছিল না। প্রায় চার বছর আগে ছেলে-মেয়ে দু’জনেই থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। এরপর সন্তানদের চিকিৎসা করাতে সিরাজগঞ্জ শহর, বগুড়া ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেছি। সাড়ে তিন বছর ধরে প্রতিমাসে মাসে সন্তানদের রক্ত দিতে হচ্ছে। একবার রক্ত দিতে অনেক টাকা খরচ হয়। ভ্যানগাড়ি চালিয়ে টাকার যোগান দিতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। জমানো টাকা শেষ করে ধীরে ধীরে ঋণগ্রস্ত হতে থাকলাম। কিস্তির টাকা যোগাতে গিয়ে সংসার চালাতে পারছিলাম না। প্রায় দু’বছর ধরে ছেলে-মেয়েদের দু’বেলা ঠিকমতো খাবারও দিতে পারিনি। খাবার কষ্টের কারণে তাদের অসুখ আরও বেড়ে যায়। ৯/১০ দিন আগে মুমূর্ষু অবস্থায় বর্ষা ও ওবাইদুলকে হাসপাতালে ভর্তি করার টাকা আমার কাছে ছিল না। জানতে পেরে শাহজাদপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দি বার্ড সেফটি হাউসের সভাপতি মামুন বিশ্বাস ও তার সহযোগী লোকমান হোসেন ফেসবুকের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে আমার ছেলে-মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। ডাক্তার অনেক টেস্ট দিয়েছে, কিন্তু টাকার অভাবে সেগুলো করাতে পারছি না। সপ্তাহে ২৯০০ টাকা কিস্তি দিতে হয়। এছাড়াও দাদন ব্যবসায়ীরা সুদের টাকার জন্য তাড়িয়ে বেড়ায়।  

দি বার্ড সেফটি হাউসের সভাপতি মামুন বিশ্বাস বলেন, দু’টি শিশুর মধ্যে বর্ষার অবস্থা ভালো নয়। চিকিৎসকরা ইতোমধ্যে আশা ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু ছেলে ওবাইদুলকে বাঁচানো যেতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কিছু টাকা সংগ্রহ করে শিশু দু’টির চিকিৎসার জন্য দেওয়া হয়েছে। দানশীল ব্যক্তিরা যদি এগিয়ে আসেন হয়তো বা ছেলেটিকে বাঁচানো সম্ভব।  

গাড়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, আব্দুল লতিফ খুব পরিশ্রমী। তার সংসারে কোনো অভাব ছিল না। দুই সন্তানকে বাঁচানোর জন্য তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এখন আর চিকিৎসা করানোর মতো সাধ্য নেই তার। সন্তানের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন লতিফ।  

সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের মেডিক্যাল অফিসার ডা. সুমনা লায়লা বাংলানিউজকে বলেন, থ্যালাসেমিয়ার একমাত্র চিকিৎসা মাসে মাসে রক্ত দিতে হবে। এ রোগের কারণে প্লিহা বা লিভার বড় হয়ে যেতে পারে। প্লিহা বড় হয়ে গেলে সেটা অপারেশনের মাধ্যমে কেটে ফেলতে হয় এবং লিভার ট্রান্সমিশন করতে হয়। যেটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।  

তিনি বলেন, ওই শিশু দু’টিকে বেশকিছু টেস্ট দেওয়া হয়েছে। টেস্টের রিপোর্টগুলো পেলেই তাদের বর্তমান অবস্থা বুঝা যাবে।

সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: বাবা আব্দুল লতিফ ও মা আঞ্জুয়ারা: ০১৩০৮০৭২১৭৫ (বিকাশ- পারসোনাল)।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২০
আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।