মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ উল্ল্যা তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
এ ঘটনায় নিহত ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় তিন জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
জেরিন জেলা সদর উপজেলার ধল গ্রামের আব্দুল হাইয়ের মেয়ে ও রিচি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল জেরিনের।
আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন জাকির হোসেন। এছাড়া অন্য দুই আসামিও পুলিশের নজরবন্দি রয়েছেন বলে জানান এসপি।
এসপি মোহাম্মদ উল্ল্যা জানান, স্কুলে আসা যাওয়ার পথে প্রায়ই জেরিনকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করতেন জাকির। একমাস আগে বিষয়টি জাকিরের পরিবারকে জানায় ওই স্কুলছাত্রীর পরিবার। পরে জাকিরকে তার বাবা-মা শাসিয়ে দেন। আর এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ছাত্রীকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন জাকির।
গত ১৮ জানুয়ারি (শনিবার) সকালে নূর আলমের সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠে স্কুলে যাচ্ছিল জেরিন। পরিকল্পনা মতে আগে থেকেই ওই অটোরিকশায় ছিলেন হৃদয়। পথে অটোরিকশাতে তুলে নেওয়া হয় জাকিরকে। অটোরিকশাটি জেরিনের স্কুল পার হয়ে গেলেও তাকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছিল না। সেসময় নামার চেষ্টা করলে জেরিনের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় অপহরণকারীদের। এক পর্যায়ে মেয়েটি নিজেকে বাঁচাতে চলন্ত অটোরিকশা থেকে লাফ দিলে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পায়। পরে স্থানীয়রা জেরিনকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং আশঙ্কাজনক অবস্থা দেখে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ জানুয়ারি (রোববার) সকালে মারা যায় জেরিন।
এদিকে দুর্ঘটনায় জেরিনের মৃত্যু হয়েছে এমন খবর প্রচার হলে অটোরিকশা চালকের শাস্তি দাবিতে আন্দোলনে নামে এলাকাবাসী ও তার সহপাঠীরা। ওইদিন রাতেই তিন জনের নামোউল্লেখ করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন মেয়েটির বাবা। এক পর্যায়ে মঙ্গলবার জাকিরকে গ্রেফতার করলে তিনি ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম জানান, জাকির গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে বেকার অবস্থায় ছিলেন। একতরফা প্রেমে সাড়া না দেওয়ায় জেরিনকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন তিনি। অন্য দুই আসামিকে গ্রেফতার করলে ঘটনার আরও কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুক আলীসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জেরিন পিইসি ও জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতকার্য হয় এবং মেধাবৃত্তি লাভ করে। ১০ম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে তার রোল নম্বর ছিল ১। ক্লাসে বরাবরই প্রথম হতো মেয়েটি। অনেক আশা-প্রত্যাশা ছিল তার পরিবার ও স্কুলের। কিন্তু ফুল হয়ে ফোটার আগেই অকালে ঝরে গেলো জেরিনের প্রাণ।
বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২০
এসআরএস