ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

স্কুল বন্ধ থাকায় ১০.১ শতাংশ মেয়ে শিশুর ঝরে পড়ার আশঙ্কা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২০
স্কুল বন্ধ থাকায় ১০.১ শতাংশ মেয়ে শিশুর ঝরে পড়ার আশঙ্কা

ঢাকা: করোনার কারণে গত ছয় মাস স্কুল বন্ধ থাকায় কমপক্ষে ১০ দশমিক ১ শতাংশ মেয়েদের ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে একটি জরিপে উঠে এসেছে।
 
রোববার (১১ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে ‘করোনা পরিস্থিতি ও আমাদের কন্যাশিশুর ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক একটি ওয়েবিনারে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।


 
‘আমরা সবাই সোচ্চার, বিশ্ব হবে সমতার’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রুম টু রিড বাংলাদেশ এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ওয়েবিনারে অংশ নেন।
 
ভার্চ্যুয়াল সংলাপটির আহ্বায়ক রুম টু রিড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রাখী সরকার বলেন, ২০২০ মানবজাতির ইতিহাসে অন্যতম চ্যালেঞ্জের বছর। করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের প্রায় ১.৬ বিলিয়ন শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই শিশুদের ঘরে থাকাকালীন তাদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে এবং স্কুল পুনরায় খোলা হলে তাদের যথাযথভাবে সহায়তা করার জন্য আমাদের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
 
তিনি বলেন, আমরা মেয়ে শিশুদের মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সম্পূর্ণকরণে ও জীবনে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, অংশীসংগঠন ও সরকারের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছি। আমরা ঢাকা, নাটোর এবং কক্সবাজারের ৫ হাজার মেয়ের সঙ্গে কাজ করছি। যারা এই মহামারিকালীন তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
 
‘আমরা এই জরুরি অবস্থায় আমাদের মোট কভারেজ থেকে প্রায় ৩ শতাংশ মেয়েদের কাছে পৌঁছাতে পারিনি। গত ১০ দিনের মেয়েশিশুদের নিজস্ব মনিটরিং রিপোর্ট করা তথ্যের ভিত্তিতে, ৫.৬ শতাংশ মেয়েরা স্কুলে ফিরে আসার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, ২.৪ শতাংশ ঘরে বসে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছে না, ৬ শতাংশ পরিবারের আয়ের উৎস হারিয়েছে। সামগ্রিকভাবে, এই তিনটি ঝুঁকির কারণে কমপক্ষে ১০.১ শতাংশ মেয়েদের ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ’
 
তিনি বলেন, সমস্ত চ্যালেঞ্জ সত্বেও রুম টু রিড বাংলাদেশ দূর শিক্ষন উদ্যোগের আওতায় মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পিতামাতার কাছে গত ৬ মাসে মুঠোফোনের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ সরাসরি বার্তা প্রেরণ করেছে এবং সম্প্রতি সংসদ টেলিভিশনে ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’-এর ক্লাস রুটিন অনুযায়ী ৩য় ও ৪র্থ পিরিয়ডে প্রচারিত হচ্ছে রুম টু রিড বাংলাদেশের জীবন-দক্ষতা অধিবেশন।
 
ওয়েবিনারে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষায় সকলের অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে। সরকার পাঠক্রমে যুগোপোযগী পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। সেইসঙ্গে মূল্যায়ন পদ্ধতি, শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণে পরিবর্তন আনা হয়েছে। লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার, নারী- প্রতিবন্ধীবান্ধব শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ২০৩০ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শিক্ষাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা এবং শিক্ষায় বিনিয়োগ করেছে। আগামীদিনে কারিগরি শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে ভবিষ্যৎ জীবন আর জীবিকাকে গুরুত্ব দিয়ে।
 
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সরকার ইন্টারনেটের দাম কমানোয় এই করোনাকালীন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বাণিজ্য, বিচারিক কার্যক্রম ভার্চ্যুয়ালি চালিয়ে যেতে পারছি। দেশের মোট ৬০-৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঘরে বসে সংসদ টিভির মাধ্যমে আমাদের এই ডিজিটাল শিক্ষা গ্রহণ করেছে। বাকি ৩০ শতাংশ যাদের হয়তো ইন্টারনেট সংযোগ নেই তাদের জন্য আমরা ৩৩৩ এই হেল্প ডেস্ক করেছি। কিন্তু আমরা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে পেরেছি।
 
ভার্চ্যুয়াল সংলাপে বক্তব্যে রাখেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক, ডিএমপির ডেপুটি কমিশনার আসমা সিদ্দিকা মিলি। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে মেয়ে শিশুদের প্রতিনিধিদল এই ভার্চ্যুয়াল সংলাপে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
 
রুম টু রিড বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার রোকসানা সুলতানা মেয়ে শিশুদের শিক্ষা সহযোগিতা কার্যক্রমের আওতায় গৃহীত দূরশিক্ষণের নানা তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। তিনি তার উপস্থাপনায় বলেন, রুম টু রিড বাংলাদেশের মেয়েশিশুদের শিক্ষা সহযোগিতা কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত মোট ৬০ ভাগ মেয়েশিশু ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’- কার্যক্রমে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেছে। গত ৬ মাসে ৩ হাজার ৮৬৯ জন মেয়েশিশুকে ভার্চ্যুয়াল একক মেন্টরিং সহযোগিতা, ২ হাজার ৯৬২ জনকে ভার্চ্যুয়াল জীবন-দক্ষতা অধিবেশন, ১ হাজার ৩৩৫ জনকে শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হয়েছে।
 
রুম টু রিড বাংলাদেশ গত ৬ মাসে ৩ হাজার ৮৬০ জন অভিভাবকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছে ও ৬৩টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করেছে। ভার্চ্যুয়াল সংলাপটি সঞ্চালনা করেন রুম টু রিড বাংলাদেশর প্রোগ্রাম অফিসার ফাহমিদা হামিদ এ্যানি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২০
এমআইএইচ/এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।